Cvoice24.com

২৫ টাকায় একটি লেবু

সিভয়েস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২০:৪৮, ৬ মার্চ ২০২১
২৫ টাকায় একটি লেবু

এক হালি লেবুর দাম একশ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

চট্টগ্রামে দীর্ঘ তিন মাসেরও বেশি সময় ধরে বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস। তার সাথে নতুন করে সেই তালিকায় যুক্ত হয়েছে ভিটামিন ‘সি’সম্বৃদ্ধ রসালো ফল লেবু (হঁজি)। পাইকারিভাবে হালিতে ৬০ টাকা দরে বিক্রি হলেও খুচরা বাজারে হালির দাম শত টাকা ছাড়িয়েছে। লেবুর এই আকাশচুম্বী দামে বিস্মিত ক্রেতা-বিক্রেতারা উভয়েই। 

ব্যবসায়ীরা বলছেন, ‘শীতের শেষ দিকে লেবুর বাজার চড়া দামেই থাকে। পাশাপাশি লেবুর ফলন কমে যাওয়ায় বাজারে লেবুর সরবরাহও কম। তাই লেবুর দাম আকাশ ছুঁয়েছে। বেশি দামে কেনার কারণে বাড়তি দাম দিয়েই বিক্রি করতে হচ্ছে।’ 

শনিবার (৬ মার্চ) নগরের রিয়াজউদ্দিন বাজারসহ স্থানীয় কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, হরেক রকমের ঝুঁড়িতে নানা জাতের লেবুর পসরা সাজিয়ে রাখলেও মাত্রাতিরিক্ত দামের কারণে লেবুর প্রতি তেমন একটা আগ্রহ নেই ক্রেতাদের। প্রতি পিস লেবু ২৫ টাকা করে বিক্রি করছেন দোকানিরা। দর কষাকষি করারও সুযোগ দিচ্ছেন না ক্রেতাদের।

রিয়াজউদ্দিন বাজারের বিক্রেতারা প্রতিটি লেবু ২৫ টাকায় বিক্রি করছেন। প্রতি ডজন (১২টি) লেবুতে ২৫০ টাকা রাখা হলেও হালি বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকায়। তবে কাগজি লেবুর দাম অন্যান্য লেবুর তুলনায় কম। কাগজি লেবু হালিতে ৬০ টাকা রাখা হচ্ছে। সেই হিসেবে কাগজি লেবু প্রতি পিস ১৫ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে।

রিয়াজউদ্দিন বাজারের লেবু বিক্রেতা ইদ্রিস মিয়া সিভয়েসকে বলেন, ‘এক হালি লেবু ৭০ থেকে ৮০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। পরিবহণসহ অন্যান্য খরচ যোগ করলে ১০০ টাকার নিচে লেবু বিক্রি করলে লোকসানে পড়তে হবে।’

আরেক বিক্রেতা আবু ইসহাক সিভয়েসকে বলেন, ‘আজকে ১০০ পিস লেবু এনেছি। আগে সবগুলো লেবু বিক্রি করতে বেশি সময় লাগতো না। সকাল থেকে লেবু নিয়ে বসে আছি। ১০ পিসও বিক্রি করতে পারিনি।’
  
লেবু কিনতে আসা আবু সুফিয়ান বলেন, ‘এমনিতেই গত কয়েকমাস ধরে চাল, চিনি, ভোজ্যতেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় অন্যান্য দ্রব্যের দাম বাড়তির দিকে। সামান্য লেবু কিনতে আসলাম, এক পিস লেবুর দাম ২৫ টাকা শুনে রীতিমত আমি বিস্মিত। সামনে রোজা আসছে। ইফতারে লেবুর শরবত খেতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে সবাই। এখন থেকেই যদি সব পণ্যের বাড়তি দাম থাকে, আমরা সাধারণ মানুষ যাবো কোথায়?’

এদিকে অভিন্ন চিত্র পাওয়া গেছে নগরের ইদগাঁ, ছোটপুল বাজারেও। এই দুটি বাজারে দোকান ভেদে দেশি লেবু বিক্রি হয়েছে ৮০ থেকে ১০০ টাকায়। তবে কাগজি লেবু বিক্রি হয়েছে ৬০ টাকায়।
  
আড়তদাররা বলছেন, বাংলাদেশে সর্বত্র লেবু জন্মালেও বাণিজ্যিক উৎপাদন সিলেট, চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রামে সীমাবদ্ধ। শীতের শেষ দিকে লেবুর বাজার একটু চড়াই থাকে। তবে আজকের বাজারে দামটা একশ ছুঁয়েছে। এবার ফলন খুব কম হওয়ায় লেবুর সরবরাহও কম। তাই বাড়তি দামে লেবু বিক্রি করতে হচ্ছে। এখানে বিক্রেতাদের কিছু করার নেই। লেবুর এই চড়া দাম আরও কিছুদিন থাকবে।

উইকিপিডিয়া বলছে, লেবু (সাইট্রাস লিমন ) মূলত রুটেসি পরিবারের ছোট চিরসবুজ সপুষ্পক উদ্ভিদের একটি প্রজাতি। এটি দক্ষিণ এশিয়া সাধারণত, উত্তর পূর্ব ভারতের একটি স্থানীয় গাছ। এই গাছের উপবৃত্তাকার হলুদ ফলটি সারা বিশ্বে রান্নার কাজ এবং রান্নার কাজ ছাড়াও বিভিন্ন উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়; মূলত এটির রসের জন্য। এটির রস রান্না ও পরিষ্কারের উভয় কাজেই ব্যবহার করা হয়। লেবুর শাঁস এবং খোসাও রান্না এবং বেকিংয়ে ব্যবহৃত হয়। লেবুর রসে প্রায় ২দশমিক ২ পিএইচ এর প্রায় ৫% থেকে ৬% সাইট্রিক অ্যাসিড, যার কারণে এটি টক স্বাদযুক্ত হয়। লেবুর রস টক স্বাদযুক্ত হওয়ায় এটিকে পানীয় এবং খাবার, যেমন লেবুর শরবত এবং 'লেবু মেরিংয়ে পাইয়ের' মূল উপাদান হিসাবে ব্যবহার করা হয়। চট্টগ্রাম অঞ্চলে লেবুকে "হঁজি" বলে। নোয়াখালীতে লেবুকে "কাগজী" বলে।

লেবুর উৎপত্তি অজানা, যদিও লেবু আসামে (উত্তর-পূর্ব ভারতের একটি অঞ্চল), উত্তর বার্মা বা চীনে প্রথম জন্মেছিল বলে ধারণা করা হয়। একটি জিনোমিক গবেষণায়, এটি টক কমলা ও সাইট্রনের মধ্যে একটি সংকর বলে ইঙ্গিত পাওয়া যায়। খ্রিস্টীয় দ্বিতীয় শতাব্দীর পরে, প্রাচীন রোমের সময়কালে, দক্ষিণ ইতালির নিকট হয়ে লেবু ইউরোপে প্রবেশ করে। তবে সেগুলো ব্যাপকভাবে চাষ করা হত না। পরে পারস্য, তারপরে ইরাক ও মিশরে ৭০০ খ্রিস্টাব্দের দিকে লেবুর প্রচলন করা হয়। সাহিত্যে সর্বপ্রথম লেবুর বর্ণনা পাওয়া যায় আরবি ভাষায় লিখিত একটি প্রবন্ধে। ইসলামের প্রাথমিক যুগের বাগানগুলোতে লেবু গাছকে শোভাবর্ধক গাছ হিসেবে লাগানো হত। ১০০০-১১৫০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে এটি আরব ও ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে। স্পেনের আন্দালুসিয়ায় লেবু ও বাতাবিলেবু গাছের চাষ সম্পর্কিত একটি নিবন্ধ ইবনে আল-আওওয়ামের দ্বাদশ শতাব্দীর কৃষি বিষয়ক বই বুক অন এগ্রিকালচারে প্রকাশিত হয়েছে। 

পঞ্চদশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে ইউরোপের জেনোভায় প্রথম লেবুর পর্যাপ্ত চাষ শুরু হয়। পরে ১৪৯৩ সালে ক্রিস্টোফার কলম্বাস হিস্প্যানিওলায় তাঁর ভ্রমণে লেবুর বীজ নিয়ে আসলে আমেরিকায় লেবুর প্রচলন ঘটে। স্প্যানিশ বিজয় পুরো বিশ্ব জুড়ে লেবুর বীজ ছড়িয়ে দিতে সহায়তা করেছিল। এটি মূলত একটি শোভাবর্ধক উদ্ভিদ এবং ওষুধের জন্য ব্যবহৃত হত। উনিশ শতকে ফ্লোরিডা এবং ক্যালিফোর্নিয়ায় ক্রমবর্ধমানভাবে লেবু রোপণ করা হয়।

১৭৪৭ সালে জেমস লিন্ডের স্কার্ভিতে ভুগতে থাকা নাবিকদের উপর করা গবেষণাগুলির পরিপ্রেক্ষিতে তাদের ডায়েটে লেবুর রস যুক্ত করা হয়, যদিও ভিটামিন সি তখনও ডায়েটের গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান হিসাবে পরিচিত ছিল না। 

লেবু ভিটামিন সি এর সমৃদ্ধ উৎস, যা ১০০ গ্রাম রেফারেন্স পরিমাণে (টেবিল) দৈনিক প্রয়োজনীয়তার ৬৪% সরবরাহ করে। অন্যান্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদানগুলি পরিমাণে কম থাকে।লেবুতে পলিফেনলস, টের্পেনস এবং ট্যানিন সহ অসংখ্য ফাইটোকেমিক্যাল রয়েছে। লেবুর রসে বাতাবিলেবুর রসের চেয়ে কিছুটা বেশি সাইট্রিক অ্যাসিড থাকে (প্রায় ৪৭ গ্রাম/লিটার)। লেবুর রসে জাম্বুরার রসের প্রায় দ্বিগুণ এবং কমলার রসের প্রায় পাঁচগুণ বেশি সাইট্রিক এসিড পাওয়া । 

-সিভয়েস/টিএম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়