ঢাকায় নিয়ে মেয়েকে ধর্ষণ, বাবার যাবজ্জীবন
সিভয়েস ডেস্ক
নিজের ১৩ বছর বয়সী মেয়েকে ধর্ষণের দায়ে এক রিকশাচালককে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত।
ঢাকার আব্দুল্লাহপুরে নিজের ১৩ বছর বয়সী মেয়েকে ধর্ষণের দায়ে কামাল হোসেন নামে এক রিকশাচালককে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত। মঙ্গলবার (৯ ফেব্রুয়ারি) ঢাকার ৭ নম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক বেগম মোছা. কামরুন্নাহার এ রায় দেন।
দণ্ডিত কামাল হোসেনের বাড়ি খাগড়াছড়ির ভুইপাড়া এলাকার জালিয়াপাড়া গ্রামে। রায়ের পর আদালতে তাকে দেখা যায় নির্বিকার, নিশ্চুপ। রায়ে তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের পাশাপাশি আসামিকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ছয় মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
বিচারক বলেন, ‘বয়স কম হওয়ায় আসামিকে আমৃত্যু কারাদণ্ড না দিয়ে সংশোধনের সুযোগ দিতে যাবজ্জীবন সাজা দেওয়া হল।’
গত বছর ১২ অক্টোবর অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে এ মামলার বিচার শুরু হয়। এরপর মাত্র ৭টি তারিখেই বিচার কাজ শেষে রায় ঘোষণা হল।
এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আফরোজা ফারহানা অরেঞ্জ বলেন, আসামি ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছিলেন। মামলার অন্যান্য আলামত এবং ডিএনএ আসামির সঙ্গে মিলে গেছে। রায়ে তাকে পুরনো আইনের সর্বোচ্চ সাজা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
অন্যদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবী মাহিনুর আক্তার লাইজু বলেন, “মামলার বিচার চলাকালে বাদী (আসামির মেয়ে) আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছে। সে বলেছে, তার বাবা তাকে জন্ম দিয়েছে। সে বিচার চায় না। যেহেতু বাদী বিচার চায় না, সেক্ষেত্রে আদালতে বিষয়টি বিবেচনার আর্জি জানিয়েছিলাম। কিন্তু আদালত সে বিষয়টি বিবেচনায় না নিয়ে রায় দিয়েছেন।”
এ বিষয়ে বিচারক তার রায়ের পর্যবেক্ষণে বলেছেন, “চূড়ান্ত রক্ষকের দায়িত্বে থাকা বাবা এখানে ভক্ষকের কাজ করেছেন। যদিও ধর্ষণের শিকার কন্যা বাবাকে বাঁচাতে বলেছে যে সে সাজা চায় না। সেটি কন্যার মহানুভবতা হতে পারে, কিন্তু রাষ্ট্রের কোনো অনুকম্পা বা মহানুভবতা আসামি পেতে পারেন না।”
মঙ্গলবার কামাল হোসেনকে দোষী সাব্যস্ত করে রায়ের বিবরণে বলা হয়, ‘ঘটনাটি ন্যক্কারজনক। একজন পিতা সন্তানের কাছে নিরাপদ ও শেষ আশ্রয়স্থল। সেটা যদি ক্ষতিকর হয়, তাহলে সন্তান যাবে কোথায়?’
মেয়েটির মামা আদালতপাড়ার সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমার বোন ও তার স্বামীর ডিভোর্স হয়ে যায়, তখন ওরা দুই ভাই-বোন ছোট ছিল। নিজ হাতে যত্ন করে বড় করেছি। বাবা-মায়ের অভাব বুঝতে দিইনি। একটু বড় হওয়ার পর তার বাবা নিয়ে গেল। ইচ্ছা থাকলেও আটকাতে পারিনি। এরপর তো এ ঘটনা। আমরা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চেয়েছিলাম।’
মামলার নথি থেকে জানা যায়, ধর্ষণের শিকার মেয়েটি আসামি কামাল হোসেনের প্রথম ঘরের সন্তান। বছর আটেক আগে মেয়েটির মায়ের সঙ্গে কামালের বিচ্ছেদ হয়। এরপর থেকে খাগড়াছড়িতে নানির কাছে থাকত ওই কিশোরী।
এদিকে কামাল হোসেন পরে লিপি বেগম নামে আরেকজনকে বিয়ে করেন। ২০১৯ সালের এপ্রিল মাসে কামাল তার মেয়েকে খাগড়াছড়ি থেকে রূপনগর আবাসিক এলাকায় তাদের বস্তিতে নিয়ে যান। এ নিয়ে লিপি বেগমের সঙ্গে তার ঝগড়াও হয়।
পরে মেয়েকে নিয়ে আব্দুল্লাহবাগ এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় ওঠেন কামাল। ৪ মে ও ৫ মে সেখানে তিনি নিজের সন্তানকে ধর্ষণ করেন। মেয়েটি তখন ভয়ে-লজ্জায় খাগড়াছড়িতে তার মামার বাড়ি ফিরে যাওয়ার চেষ্টা করে। পথে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে।
পরে মেয়েটি নিজে বাদী হয়ে বাড্ডা থানায় তার বাবার বিরুদ্ধে মামলা করে। পুলিশ কামালকে গ্রেপ্তার করার পর দুই দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে।
রিমান্ড শেষে আদালতে হাজির করা হলে কামাল হোসেন দোষ স্বীকার করে জবানবিন্দ দেন। এর পর থেকেই তিনি কারাগারে আছেন।
এদিকে মামলা তদন্ত শেষে বাড্ডা থানার এসআই আল-ইমরান আহম্মেদ আদালতে অভিযোগপত্র দেন। গত বছর ১২ অক্টোবর কামাল হোসেনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে আদালত।
গত ১৯ জানুয়ারি রাষ্ট্রপ ও আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে আদালত রায়ের তারিখ ঠিক করে দেয়।
-সিভয়েস/এমএম