Cvoice24.com

সুফিয়া শীলার কবিতা— কালস্রোত, অক্ষর-প্রেম, রহস্য-আধার

সুফিয়া শীলা

প্রকাশিত: ২১:৩৬, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২১
সুফিয়া শীলার কবিতা— কালস্রোত, অক্ষর-প্রেম, রহস্য-আধার

কালস্রোত 

মেহগনি কাঠের পালঙ্ক নিশ্চুপ আজো,
ঝরা বকুল শুকিয়ে মিশে গেছে গোলাপি 
চাদরের ভাঁজে ভাঁজে;
বালিশের কান্নায় ভেসে গেছে ভালোবাসার কাজল,
দরজার পাশে চন্দ্রমল্লিকার প্রাণ
মরে গেছে সেই কবে;
সিঁড়িতে আঁকা আলপনার শরীর 
কয়েকটি বিন্দু ছাড়া অদৃশ্য সবই,
জানালার গ্রিল বেয়ে ওঠে গেছে মাধবী লতার ঝাড়;
বর্ষার অঝোর কান্নায় মাঝে মাঝে জীবন্ত হয় তারা।

কর্পূরের সোঁদাগন্ধ বলে দেয়—
বহুদিন খোলা হয় না মনের দুয়ার,
স্তিমিত সূর্য এখন আর ফেরে না সেই ঘরে;
আকাঙ্ক্ষার প্রহরীরা ক্লান্ত হয়ে 
পরিণত হয়েছে এক একটি জীবন্ত কঙ্কালে।
বিদীর্ণ ধূপছায়া আলো মাঝে মাঝে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে 
অবিরাম এসে কড়া নাড়ে কালের দরজায়,
পূর্ণিমা রাতে শিরীষের দোল
ডাক দিয়ে যায় নাম ধরে তার।

মাঝরাতে নক্ষত্ররাজি নেমে আসে 
মেহগনি কাঠের পালঙ্কে,
তন্নতন্ন করে খুঁজে ফেরে সেইসব দিন;
খুঁজে ফেরে জাফরান সুখের দহন, 
দৃশ্যমান ছায়ায় কোথাও তো নেই সে;
হৃৎপিণ্ডের ধূসর পান্ডুলিপি হয়ে— 
সময়ের কফিনে ঘুমিয়ে আছে ময়ূরকণ্ঠী সুখে 
আজ সময়েরই বুকে।


অক্ষর-প্রেম

পুরনো চিঠির ভাঁজে ভাঁজে ঘুমিয়ে আছো তুমি, 
তোমার ভালোবাসার বাঁধভাঙা স্রোত;
যে স্রোতে কোনো একদিন ডুবেছিলো হৃদয়, 
যে অক্ষরগুলো পৃথিবীর সব জীবন্ত আলো চুপিসারে 
জ্বেলে দিয়েছিলো অন্তঃকরণের অন্তরীক্ষে।

এক একটা অক্ষর—
এক একটা অশ্বত্থের গাছ হয়ে জন্মেছিলো 
হৃৎপিণ্ডের সোনালি দেয়ালে,
ভোরের শিশির আর নরম আলো মাখামাখি 
করেছিলো গভীর উষ্ণতায়;
দুপুরের দুরন্ত রোদ আর দখিনা বাতাস একাকার 
হয়েছিলো প্রণয়ের আকীর্ণ সুখে, 
বিকেলের হলুদ মায়া আর পথিক পাখিরা পাশাপাশি 
বসেছিলো ঈপ্সিত আনন্দের বন্ধনে;
রাতের বিরহ আঁধার আর জোনাকির গোপন অভিসার
ডুবেছিলো একসাথে একদিন। 

আজ সময়ের স্রোতে বিদীর্ণ হয়ে গেছে সব,
হৃৎপিণ্ডের দেয়াল থেকে খসে পড়েছে 
তোমার শক্ত বাঁধন;
হারিয়েছে প্রোজ্জ্বল সব জৌলুস, 
সবুজ শ্যাওলা আর সোনালি ফার্নদের রাজত্ব আজ;
তারপরও—
অক্ষরের শৃঙ্গারে চিঠির ভাঁজে অন্তহীন অপেক্ষার
ভালোবাসা রয়ে গেছে, 
রয়ে গেছে মনের গহীন কোণে বর্ণালি ছাপ;
শুধু হারিয়ে গেছে ক্ষুরধার সেই স্রোত আর
হারিয়েছে চিঠির প্রেরক।


রহস্য-আধার

বিস্মৃতির আবডালে চুপ করে থাকে 
বর্ণালি স্মৃতির আকাশ,
রৌদ্রময় দিনে অশ্বত্থের গাঢ় চুম্বনে কেঁপে ওঠে 
আঁকড়ে থাকা শিকড়ের মাটি;
নিবিড় স্পর্শে শরীরজুড়ে আগুনের দাবানল 
খেলার প্ররোচনা চলে।

নীল আঁচলের আঁজলায় স্বোপার্জিত প্রেম 
কমলা প্রভাতে কৃষ্ণঁচুড়ার ডালে হাসে,
সৃষ্টির অরণ্যে শ্রাবণের উল্লাসে 
অর্পণের বাঁধভাঙা ঢল নামে;
মধ্যহ্নের ভালোবাসার আলোয় ধূসর পর্ণীগুলো
হয়ে ওঠে চির সোনালি সবুজ, 
সবুজ ঘাসের নরম বিছানায় তখন
বেহুলার বাসরঘর। 
হৃদয়ের প্রজাপতি সুখ পাখা মেলতে চায়
রঙধনু-রঙে।

সময়ের বুক চিরে হাহাকার চিৎকারে
ভেসে যায় লখিন্দরের ভ্যালা,
বাতাসে তখন মনসার নৃশংস হাসির উচ্ছ্বাস;
আহত পাখির মতো ডানা ঝাপটায় 
ভালোবাসা-সুখের দহন,
গোধূলির হলুদ বিকেল তখন রক্তাক্ত পাপোশে পা মুছে
ফিরে যায় আপন অন্ধকারে;
অপেক্ষার প্রহর নিয়তির প্রতারণায় হারায় 
চিরচেনা পথ।

তারপর কোনো এক সোনালি রাতে—
ভরা পূর্ণিমায় জেগে ওঠে হৃদয়ের মৃত প্রেমিক, 
নক্ষত্ররা পথ দেখায় তারে;
জানে না পুরুষ—
নারী পারে মুছে দিতে সব অন্ধকার, 
নারীর আত্মা-শরীর— সেতো প্রকৃতির বাতিঘর;
লক্ষ কোটি বছর ধরে জন্মের আলো হয়ে আছে জ্বলে।

 

লেখক : বি-৩, পার্সিভ্যাল হিল প্রফেসরস কোয়ার্টার; চট্টগ্রাম কলেজ, চট্টগ্রাম।

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়