Cvoice24.com

কর্ণফুলীতে টানেল মহিউদ্দীন চৌধুরীর স্বপ্ন ছিল— বারবার স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী

সিভয়েস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২২:৪০, ১৬ মার্চ ২০২২
কর্ণফুলীতে টানেল মহিউদ্দীন চৌধুরীর স্বপ্ন ছিল— বারবার স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী

স্বপ্ন নয় সত্যি; গাড়ি নিয়ে কর্ণফুলী নদীর একপাড় দিয়ে প্রবেশ করে অন্যপাড় দিয়ে উঠছে চলতি বছরেই। আগামী অক্টোবরেই উদ্বোধন হতে যাওয়া এই বঙ্গবন্ধু টানেলটির নির্মাণের ‘কারিগর’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হলেও এর স্বপ্নদ্রষ্টা কিন্তু চট্টগ্রামের প্রয়াত মেয়র চট্টলবীর এ বি এম মহিউদ্দীন চৌধুরী! এই তথ্য একবার নয় দুই দুই বার জানিয়েছেন খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই। 

বুধবার (১৬ মার্চ) গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ার চট্টগ্রাম ওয়াসার মেগা প্রকল্প ‘শেখ হাসিনা পানি শোধনাগার-২’এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একথা বলেন। 

বক্তব্যের এক পর্যায়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘চট্টগ্রাম কর্ণফুলী নদীর নিচে টানেল। এ টানেলের কথা মনে উঠলে অবশ্যই আমাদের সাবেক মেয়র এবং আওয়ামী লীগের যিনি মহানগরের সেক্রেটারি ছিলেন তারপর প্রেসিডেন্ট ছিলেন মহিউদ্দিন চৌধুরী। তার কথা খুব মনে পড়ে। কারণ তিনি সবসময় একটা টানেল নির্মাণ হউক; সেটা তিনি চেয়েছিলেন। তার একটা দাবিও ছিল। কিন্তু আজকে সেই টানেলের কাজ প্রায় সমাপ্তির পথে এগিয়ে যাচ্ছে। দুর্ভাগ্য হচ্ছে তিনি আজ আমাদের মাঝে নেই। এবং যতগুলো সিটি করপোরেশন করা হয়েছে এরমধ্যে একমাত্র চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন মহিউদ্দিন চৌধুরীর আমলে ছিল অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী। তখন প্রত্যেকটা ক্ষেত্রে যে আর্থিকভাবে, সম্পূর্ণভাবে স্বাবলম্বীতা অর্জন করেছিল এ চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন।’

টানেল নিয়ে মহিউদ্দীন চৌধুরীর কথা স্মরণ শুধু এবার নয় এরআগেও ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি সকালে পতেঙ্গায় বঙ্গবন্ধু টানেল ও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে উদ্বোধন পরবর্তী জনসভায়ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একই কথা বলেছিলেন।

তিনি ওই সময়ে বলেছিলেন, ‘মহিউদ্দীন চৌধুরী বলতেন কর্ণফুলী নদীর উপর ঘন ঘন ব্রিজ নির্মাণ করলে নদীর ক্ষতি হতে পারে। পলি জমে নদী ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। টানেল নির্মাণের জন্য তিনি আন্দোলনও করেছিলেন। আজ তিনি আমাদের মাঝে নেই, তিনি বেঁচে থাকলে সবচেয়ে বেশি খুশি হতেন। বিভিন্ন আন্দোলন, সংগ্রামে ও মুক্তিযুদ্ধে তাঁর অবদান জাতি চিরদিন শ্রদ্ধার সাথে মনে রাখবে।’

শেখ হাসিনা পানি শোধনাগার-২ এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে চট্টগ্রামের রেডিসন ব্লু চিটাগাং বে ভিউতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান, চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকোশলী এ কে এম ফজলুল্লাহ।

চলতি বছরের ৭ জানুয়ারি সন্ধ্যায় সরকারের তৃতীয় বর্ষপূতি উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী বলেছিন, ‘২০২২ সাল হবে বাংলাদেশের জন্য অবকাঠামো উন্নয়নের এক মাইলফলক বছর। আগামী অক্টোবর মাসে চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে চালু হবে দেশের প্রথম টানেল।’ 

বঙ্গবন্ধু টানেল 

দুটি টিউবের নির্মাণকাজ শেষে এখন ভায়াডাক্ট, অ্যাপ্রোচ সড়ক, টানেলের অভ্যন্তরে সড়ক নির্মাণ, পিচ ঢালাই, ইউটিলিটি সার্ভিস সংযোজন, তিনটি ক্রসিং প্যাসেজ সংযোজন করছে প্রকল্প কর্তৃপক্ষ। এছাড়া শতভাগ ভূমি অধিগ্রহণ কাজ সম্পন্ন করে সার্ভিস এরিয়া ও পুনর্বাসন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করার কাজ চলছে। 

প্রকল্প কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টানেল বোরিং কাজের উদ্বোধন করেন। ৩ দশমিক ৪ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের মূল টানেল ছাড়াও পতেঙ্গা ও আনোয়ারা প্রান্তে ৫ দশমিক ৩৫ কিলোমিটার করে সংযোগ সড়ক এবং আনোয়ারা প্রান্তে ৭২৭ মিটার একটি ওভার ব্রিজ নির্মাণ করা হচ্ছে। ২০১৪ সালে প্রকল্প বাস্তবায়নে বাংলাদেশ ও চীনের সরকারি পর্যায়ে সমঝোতা স্মারক সই হয়। চীন সরকারে এ টানেল নির্মাণের জন্য মনোনীত করে চীনা প্রতিষ্ঠান চায়না কমিউনিকেশন অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন কোম্পানি (সিসিসিসি) লিমিটেডকে। 

প্রায় ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি ৪২ লাখ টাকার এ প্রকল্পে বাংলাদেশ সরকার দিচ্ছে ৪ হাজার ৪৬১ কোটি ২৩ লাখ টাকা। প্রকল্পের বাকি ৫ হাজার ৯১৩ কোটি ১৯ লাখ টাকা দিচ্ছে চীনের এক্সিম ব্যাংক, যার সুদহার ২ শতাংশ। টানেলের মোট দৈর্ঘ্য ৯ দশমিক ৩৯ কিলোমিটার হলেও মূল টানেলের দৈর্ঘ্য ৩ দশমিক ৩২ কিলোমিটার। টানেলের ব্যাস ৩৫ ফুট ও উচ্চতা প্রায় ১৬ ফুট। একটি টিউব থেকে অন্য টিউবের পাশাপাশি দূরত্ব প্রায় ১২ মিটার। টানেল দুটির মধ্যপথে তিনটি কানেকটিং প্যাসেজ রাখা হয়েছে। অর্থাৎ জরুরি প্রয়োজন কিংবা অভ্যন্তরীণ সংস্কারকাজ চলাকালীন একটি টিউব থেকে অন্য টিউবে এসব প্যাসেজ দিয়ে যানবাহন/প্রকল্প কর্তৃপক্ষ চলাচল করতে পারবে।

প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, এই টানেল নির্মাণকে কেন্দ্র করে চীনের সাংহাই সিটির মতো বন্দর নগরী চট্টগ্রামে গড়ে উঠছে ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’। কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণকাজ সম্পন্ন হলেই চট্টগ্রাম মহানগরীর পাশাপাশি নদীর অপর তীরে আনোয়ারা-কর্ণফুলী এলাকায় গড়ে উঠবে আরও একটি নতুন শহর। নতুন এই শহরের অবকাঠামো একের পর এক নির্মিত হচ্ছে। 

বঙ্গবন্ধু টানেল প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, টানেলকে ঘিরে বন্দরনগরী চট্টগ্রামে নতুন অর্থনৈতিক সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হতে যাচ্ছে। এর পাশাপাশি এই অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থায় এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন সূচিত হবে। ৩ দশমিক ৪০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের মূল টানেলের সঙ্গে পতেঙ্গা এবং আনোয়ারা প্রান্তে ৫ দশমিক ৩৫ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক নির্মিত হচ্ছে। সংযোগ সড়ক ও টানেলের ভেতরের সড়ক হবে সর্বমোট ৪ লেনের। এর মধ্যে ওয়ান ওয়ে একটি টানেলে সড়ক থাকবে দুই লেনের।

একটি টিউবের সড়ক দিয়ে আনোয়ারা থেকে পতেঙ্গা অভিমুখী এবং অপর টিউব দিয়ে পতেঙ্গা থেকে আনোয়ারা অভিমুখী যানবাহন চলাচল করবে। কর্ণফুলী নদীর তলদেশে প্রতিটি টিউব চওড়া ১০ দশমিক ৮ মিটার বা ৩৫ ফুট এবং উচ্চতা ৪ দশমিক ৮ মিটার বা প্রায় ১৬ ফুট। একটি টিউব থেকে অপর টিউবের পাশাপাশি দূরত্ব প্রায় ১২ মিটার। টানেলের প্রস্ত ৭০০ মিটার। এবং দৈর্ঘ্য তিন হাজার ৪০০ মিটার।

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়