Cvoice24.com

রাঙামাটিতে নিরবে চলছে পাথর উত্তোলন, উজাড় হচ্ছে বন

রাঙামাটি প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ২১:৪৬, ৬ মে ২০২১
রাঙামাটিতে নিরবে চলছে পাথর উত্তোলন, উজাড় হচ্ছে বন

রাঙামাটিতে নিরবে চলছে পাথর বাণিজ্য

রাঙামাটিতে পাহাড়ী ঝর্ণা আর পাহাড় কেটে নির্বিচারে উত্তোলন করা হচ্ছে পাথর। বন উজাড় করে কাঠ ও পাথর পরিবহনের রাস্তা তৈরি করা হয়েছে ছড়ার পাশ দিয়ে। এতে পানির উৎস নষ্টের পাশাপাশি হুমকিতে পড়েছে পরিবেশ। যদিও প্রশাসনের বলছে, আইন প্রয়োগ করা হচ্ছে এবং এ বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে পাথর উত্তোলনে নিরুৎসাহিত করা হবে।

রাঙামাটির শহরের অদুরে কাউখালি উপজেলার ঘাগড়া ইউনিয়ন। যেখানে ঝর্ণা আর ছড়ার পানিই স্থানীয় অধিবাসীদের পানির চাহিদা পূরণ করে। ঘাগড়া ঝর্ণায় ছড়া হয়ে প্রচুর পাথরে উপর দিয়ে যেতে হতো। কিন্তু গত কয়েকদিন আগে গিয়ে দেখা গেছে ছড়ার উপর কোন পাথর তো নেই বরং ছড়াটিকে মনে হয়েছে কোন গ্রামের মেটো পথ। ছড়ার উপর রয়েছে ট্রাক চলাচলের চাকার ছক। ছড়ার দুই পাশে ছোট ছোট স্তুপ করা হয়েছে অসংখ্য পাথর। রাঙামাটি-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশের ছড়াটিতেও কোন পাথরের টুকরা দেখা যায়নি।

ঘাগড়া ঝর্ণা এলাকা থেকে প্রায় এক কিলোমিটার সামনে এসে সিন্দুকছড়ি নামক স্থানে ব্রিজের পাশ দিয়ে একটু সামনে এগোতেই দেখা মিললো পাহাড় কেটে পাথর উত্তোলনের দৃশ্য। তবে সেখানে কাউকে পাহাড় কাটতে দেখা না গেলেও পাহাড় কাটার আর পাশে পাথরের ছোট ছোট স্থুপ দেখে বুঝায় গেছে দুই এক দিনের মধ্যেই কাটা হয়েছে সেসব পাহাড়। পাশাপাশি ছড়া থেকে পাথর উত্তোলনের চিহ্নও সেখানে দেখা গেছে।

স্থানীয় অধিবাসীদের সাথে কথা বলেও কে বা কারা এই পাথর বাণিজ্যের সাথে জড়িত বা পাথর বেপারি— সে বিষয়ে কেউ মুখ না খুললেও পাথর বেচাকেনার বিষয়টি অনেকেই স্বীকার করেছেন।

মো. হানিফ (৫০) নামে এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, ‘আমরা এলাকার সবাই পাথর উত্তোলন করি। যে যা পাই তা ফুট হিসেবে বিক্রি করি। এমনকি পাথর ভালো হলে প্রতিফুট ৫০টাকা করে বিক্রি করতে পারি।’ তবে অন্যদের মতো তিনিও পাথর বেপারির বিষয়ে মুখ খুলেননি।

তার পরিবারের সদস্য ফাতেমা বেগম বলেন, ‘আমাদের ছড়ায় আগে পানি থাকতো, এখন থাকে না শুষ্ক মৌসুমে, কেন জানি না। পানি আনতে হয় এক কিলোমিটার দুরে ব্রিজের নিজ থেকে। বর্ষায় পানির স্রোতে যখন পাথর আসে তখন এলাকার সবাই পাথর তুলতে ছড়ায় নেমে পাড়ি, শুষ্ক মৌসুমে যা অল্প-সল্প পড়ে থাকে তা তুলি। তবে যারা পাথর চিনে তারা এক নম্বরটা তুলে আর আমরা একনম্বর দুই নম্বর যা পাই সবই তুলি।’

স্থানীয় চা দোকানি ওসমান বলেন, ‘ট্রাকে ট্রাকে পাথর নিয়ে যেতে দেখি কিন্তু কে বা কারা নেই সেটা জানি না।’

কাউখালী উপজেলার ৩নং ঘগড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জগদিশ চাকমা বলেন, ‘ছড়া থেকে পাথর উত্তোলন করতে করতে সব পানির উৎস প্রায় শেষ। এখন শুষ্ক মৌসুমে তীব্র পানি সংকট দেখা দিয়েছে। কারা এই পাথর বেপারি তা জানি না, যখনই মানুষের চলাচল কম থাকে তারা তখনই পাহাড় কেটে পাথর উত্তোলন করে, ছড়ার পাথরতো এখন নেই বললেই চলে।’

কাউখালী উপজেলা নির্বাহী অফিসার শতরুপা তালুকদার বলেন, ‘পাথর উত্তোলন না করার বিষয়ে আমরা সচেষ্ট আছি। আগে ঘাগড়া এলাকার পাথর উত্তোলনের সাথে জড়িত থাকায় জাফর নামে এক ব্যক্তিকে অর্থদণ্ড দিয়ে পাথর উত্তোলন বন্ধ করে দিয়েছিলাম। কিন্তু এখন আবার পাথর উত্তোলন করা হচ্ছে— বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে আমি অভিযান পরিচালনা করবো। এমন প্রমাণ পেলে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নিব।’

এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম অঞ্চল কার‌্যালয়ের পরিচালক মোহাম্মদ মোয়াজ্জেম হোসাইন বলেন, ‘পাথর উত্তোলনের বিষয়টি আমার জানা নেই। বিষয়টি জেনে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

রাঙামাটির জেলা প্রশাসক মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘পাথর চুরি চক্রের বিরুদ্ধে আইননানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে আর যেহেতু কমিউনিটি এই অপরাধের সাথে জড়িয়ে গেছে তাদেরকে সচেতন করতে জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসন যৌথভাবে কাজ করবে।’

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়