Cvoice24.com

কোমর তাঁত পণ্য নিয়ে স্বাবলম্বী হতে চায় অলনা তঞ্চঙ্গ্যা

রাঙামাটি প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৫:৩১, ১৯ জানুয়ারি ২০২২
কোমর তাঁত পণ্য নিয়ে স্বাবলম্বী হতে চায় অলনা তঞ্চঙ্গ্যা

স্বাবলম্বী হতে চাই অলনা তঞ্চঙ্গ্যা।

শীতের কাপড় বুননে ব্যস্ত সময় পার করছে পাহাড়ি গ্রামগুলির ছোট ছোট উদ্যোক্তারা। প্রতিটি গ্রামে গ্রামে উঠানে গেলেই দেখা মিলছে তাঁত বুনানোর কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন পাহাড়ের নারীরা। একেবারেই হাতে তৈরি এসব কাপড়ের চাহিদাও ব্যাপক। তবে সুতার দাম বাড়ানোর কারণে আগের মত সেই লাভ নেই বলে জানালেন নারীরা। এদিকে এই শিল্পকে এগিয়ে নিতে বিসিকের সর্বাত্মক সহযোগিতার কথা জানালেন কর্তৃপক্ষ।

রাঙামাটির দুর্গম তঞ্চঙ্গ্যা গ্রাম অগৈয়াছড়ি। শহর থেকে নৌপথে প্রায় ঘণ্টাখানেকের পথ। এই গ্রামেরই শিক্ষিত নারী অলনা তঞ্চঙ্গ্যা। পড়েন রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে। নিজের পড়ার খরচ ও স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন থেকে গ্রামের কোমর তাঁতীদের জড়ো করে বাড়ির উঠানে তাঁত পণ্য তৈরি করছেন। যা নিজের ফেসবুক পেইজের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করে থাকেন তিনি। 

অলনা তঞ্চঙ্গ্যার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় পরিবারের সদস্য ও এলাকার নারীরা বসে কাপড় বুনার কাজে তাদের সময় পার করছেন। বাড়ির উঠানে আপন মনে কাপড় বুনিয়ে যাচ্ছেন নারীরা। নিজের শৈল্পিক ও সৃজনশীলতার মাধ্যমে সব কাজে ভিন্নতা আনার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। তাঁত সুতার মিলনে যেন তঞ্চঙ্গ্যা নারী বুনছেন নিজের ও পাহাড়ের স্বপ্নের কথা।

শীতের মৌসুমে পার্বত্যাঞ্চলে ভ্রমণ পিপাসু পর্যটকের হার বেড়ে যায়। এসময় পাহাড়িদের তাঁতে বুনা চাদর, পিনন, হাদিসহ নানান উপকরণের চাহিদা বিবেচনায় রাখে তাঁত পণ্য তৈরি কারকরা। 

সুতার দাম বাড়ানোর কারণে আগের সেই লাভ নেই বললেই চলে। অনেকটা শখ ও ঐতিহ্য ধরে রাখতে এসব কাজ করে যাচ্ছেন তারা। আর এই পণ্য তৈরির মাধ্যমে নিজের ও পরিবারের আর্থিক সচ্ছলতা আনতে পারছেন বলে জানালেন এসব সংগ্রামী নারী।

তাঁত পণ্য তৈরি কারক রুপা তঞ্চঙ্গ্যা জানান, আমরা সেসব তাঁত পণ্য তৈরি করি তা আমাদের থেকে কিনে নেই অলনা দিদি। যা আগে আমরা বিক্রি করতে পারতাম না, পারলেও তা শহরের নিয়ে অল্প দামে বিক্রয় করতে হতো। অলনা দিদি আমাদের থেকে এইসব পণ্য কিনে অনলাইনে বিক্রি করে। এতে আমাদের তৈরি পণ্য যেমন সারাদেশে যাচ্ছে তেমনি ভাবে এসব পণ্যের চাহিদাও বাড়ছে।

রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের, শিক্ষার্থী  অলনা তঞ্চঙ্গ্যা জানান, নিজের সংস্কৃতি দেশের মানুষের কাছে তুলে ধরা এবং নিজেই স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন থেকে আমি অনলাইনে এইসব তঞ্চঙ্গ্যা জাতিগোষ্ঠির তৈরি কাপড় বিক্রয় করার উদ্দ্যেশে ফেইসবুকে একটি পেইজ খুলি আর সেখান থেকেই আমার যাত্রা শুরু। এই দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আমি বেশ কিছু অর্ডার পাই, যা সময় মত সরবরাহ করি। আর এসব পণ্য আমি আমার গ্রামের নারীদের থেকে সংগ্রহ করে থাকি। তারা আগে এসব পণ্য বিক্রয়ের সুযোগ পেত না, এখন তাদের তৈরি এসব পণ্য বিক্রয়ের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। যার কারণে আমি নিজেকে স্বাবলম্বী করার পাশাপাশি গ্রামের বেকার নারীদের স্বাবলম্বী করতে পারছি। গত এক বছরে আমি লক্ষাধিক টাকার কোমর তাঁত পণ্য বিক্রি করেছি।

অলনা তঞ্চঙ্গ্যার পেছন থেকে সমর্থন দিচ্ছেন তাঁর বাবা জাদিঅং তঞ্চঙ্গ্যা। তিনি জানান, মেয়ে প্রথমে এই ব্যবসা শুরু করার জন্য ২-৩হাজার টাকা চেয়েছিল তখন তাকে আমি সেটা দেয়। সে কিভাবে কি ব্যবসা শুরু করছিল তা বুঝে উঠতে পারছিলামনা। এখন দেখছি গ্রামের অনেক নারীদের কাজ থেকে সে কাপড় সংগ্রহ করে তা বিক্রি করছে। এতে তার লেখা পড়ার খরচ নিজেই চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।

রাঙামাটি বিসিক’র সহকারী মহাব্যবস্থাপক, শামছু উদ্দিন মজুমদার জানান, এই শিল্পের সাথে জড়িতদের প্রয়োজনে ব্যাংক ঋণের ব্যবস্থা করে দিয়ে সহযোগিতা করা হবে।
 

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়