ওয়াসার এমডি হতে সাবেক-বর্তমানের দৌড়াদৌড়ি
শারমিন রিমা, সিভয়েস২৪
অতি সম্প্রতি চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) পদ থেকে সরানো হয় আলোচিত-সমালোচিত এ কে এম ফজলুল্লাহকে। তাঁর স্থলে সাময়িকভাবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে স্থানীয় সরকার চট্টগ্রাম বিভাগের পরিচালক মুহাম্মদ আনোয়ার পাশাকে। ১৫ বছর ধরে গেড়ে বসা ফজলুল্লাহর চেয়ারে বসতে সংস্থাটির সাবেক-বর্তমান একাধিক জনের নাম শোনা যাচ্ছে। তাদের নিয়ে চলছে নানা আলোচনা।
এ পর্যন্ত চট্টগ্রাম ওয়াসার সাবেক উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক (প্রশাসন) গোলাম হোসেন, ওয়াসার সাবেক প্রধান প্রকৌশলী কাজী ইয়াকুব সিরাজদ্দৌলা এবং জানে আলম ভূঁইয়ার নাম শোনা যাচ্ছে। এছাড়া ওয়াসায় জোর আলোচনা চলছে সংস্থাটির বর্তমান উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. লাল হোসেনকে নিয়েও।
কিন্তু মনোনয়ন, তদবির এবং আবেদনের প্রেক্ষিতে দেখার বিষয় কে হচ্ছেন চট্টগ্রাম ওয়াসার পরবর্তী নতুন ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি)! চলতি সপ্তাহে ওই পদে নিয়োগের প্রজ্ঞাপন জারির সম্ভাবনা রয়েছে বলে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্রে জানা যায়।
ওয়াসা সূত্রে জানা যায়, ২০১৬ সালের ২১ জানুয়ারি ওয়াসার ডিএমডি হিসেবে প্রেষণে নিয়োগ পান গোলাম হোসেন। সাড়ে চার বছর দায়িত্ব পালন শেষে ২০২০ সালের ২৫ জুন অবসরে চলে যান ওয়াসার সাবেক এ কর্মকর্তা। সাবেক প্রধান প্রকৌশলী কাজী ইয়াকুব সিরাজদ্দৌলা২০১৮ সালের ২৮ অক্টোবর থেকে ২০১৯ সালের ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত ওয়াসার দায়িত্ব সামলান। ওয়াসার আরেক সাবেক প্রধান প্রকৌশলী জানে আলম ভূঁইয়াও সংস্থাটিতে দুই দফায় প্রায় এক বছর প্রধান প্রকৌশলীর দায়িত্ব সামলান। এর মধ্যে ২০১৪ সালের ১৯ নভেম্বর থেকে ২০১৫ সালের ৩১ আগস্ট পর্যন্ত এবং একই বছরের অর্থাৎ ২০১৫ সালের ৪ অক্টোবর থেকে ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রধান প্রকৌশলীর পদে ছিলেন তিনি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চট্টগ্রাম ওয়াসার এক উর্ধ্বতন কর্মকর্তা সিভয়েস২৪’কে বলেন, ‘এমডি হিসেবে দুই জনের নাম সবচেয়ে বেশি আলোচনায় আছে। দুইজনেই চট্টগ্রাম ওয়াসার সাবেক কর্মকর্তা। এরমধ্যে সাবেক একজন ডিএমডির কথা বেশি শোনা যাচ্ছে।’
দ্রুত এমডি নিয়োগ না হলে সবকিছুতে ধীরগতি সৃষ্টি হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এখন যেই আসুক না কেন তাড়াতাড়ি এলেই হয়। কারণ ওয়াসার মতো সংস্থায় প্রশাসক বা সাময়িকভাবে কেউ থাকলে চলবে না। এখানে অবশ্যই সার্বক্ষণিভাবে টেকনিক্যাল পারসন থাকা দরকার। বাকিটা মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত। যত দ্রুত পরিচালক দিবে ততই আমাদের জন্য উপকার হবে, নাহয় সবকিছুতে একটা ধীরগতি চলে আসবে।’
এর আগে ৩০ অক্টোবর মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে চট্টগ্রাম ওয়াসার এমডি পদ থেকে অপসারণ করা হয় প্রকৌশলী এ কে এম ফজলুল্লাহকে এবং একইসাথে ভেঙে দেওয়া হয় চট্টগ্রাম ওয়াসা বোর্ডও।
উল্লেখ্য, এ কে এম ফজলুল্লাহ ওয়াসার আলোচিত কর্মকর্তা। চট্টগ্রাম ওয়াসার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী হিসেবে অবসর নেন ২০০০ সালে। পরবর্তীতে ২০০৯ সালের ৬ জুলাই প্রথমবার চট্টগ্রাম ওয়াসা বোর্ডের চেয়ারম্যান পদে এক বছরের জন্য নিয়োগ পান। এরপর আরও এক বছর চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। এরপর ২০১১ সালে ঢাকা ওয়াসার আদলে চট্টগ্রাম ওয়াসাতেও ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ তৈরি করা হয়। ওয়াসা বোর্ডও পুনর্গঠন করা হয়। সেসময় এমডি পদে নিয়োগ পান এ কে এম ফজলুল্লাহ। সেই থেকে ষষ্ঠবারের মতো গত ১৫ বছর এমডি পদে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন তিনি। তবে তার বর্তমান ষষ্ঠ মেয়াদ ২০২৬ সালের ৩১ অক্টোবর শেষ হওয়ার কথা ছিল। তাঁর আমলে পানি সরবরাহ ও পয়োনিষ্কাশনব্যবস্থা গড়ে তুলতে অন্তত ১০টি প্রকল্প নেওয়া হয়। আটটি প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে। দুটি বড় প্রকল্পের কাজ এখনো চলছে। শেষ হওয়া আট প্রকল্পে ব্যয় হয়েছে ৮ হাজার ২৫৭ কোটি টাকা। আর চলমান দুই প্রকল্পে ব্যয় হচ্ছে ৫ হাজার ৮০২ কোটি টাকা। তবে একের পর এক প্রকল্প নিলেও নগরের পানির সংকট কাটেনি।