চবিতে লাগামহীন ছাত্রলীগ

চবি প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ২৩:১৩, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
চবিতে লাগামহীন ছাত্রলীগ

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ভর্তি পরীক্ষা সামনে রেখে লাগামহীন হয়ে উঠেছে ছাত্রলীগ। বৃহস্পতিবার থেকে শুক্রবার রাত পর্যন্ত ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের বগিভিত্তিক গ্রুপগুলো দফায় দফায় সংঘর্ষ জড়িয়েছে। চার দফা মারামারিতে ৩৫ জন আহত হয়েছে। এর মধ্যে শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত মারামারিতে ২ পুলিশসহ আহত হয় অন্তত ১৫ জন। তবে মারামারির নেপথ্যে সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে ভিন্ন কথা। ভর্তি পরীক্ষার টাকা ভাগবাটোয়ারা ও নতুন কমিটিকে ঘিরে ক্যাম্পাস উত্তপ্ত রেখেছে ছাত্রলীগ।

জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার রাত আনুমানিক পৌনে ৮টার দিকে দুপক্ষের কর্মীদের মধ্যে কথা-কাটাকাটির জের ধরে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। পরে তা শাহজালাল ও শাহ আমানত হলে ছড়িয়ে পড়ে। এই নিয়ে গত ২১ ঘণ্টায় তিন দফায় সংঘর্ষে জড়ালেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। 

এবারের বিবদমান পক্ষ দুটি হলো—সিএফসি ও সিক্সটি নাইন। সিএফসি পক্ষের কর্মীরা নিজেদের শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী এবং সিক্সটি নাইন পক্ষের কর্মীরা সাবেক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী হিসেবে নিজেদের পরিচয় দেন। 

এর আগে, শুক্রবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বুদ্ধিজীবী চত্বরে বিজয়পক্ষের এক কর্মীকে সিক্সটি নাইনের কর্মীরা মারধর করলে দ্বিতীয় দফা সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। পরবর্তী সময় বেলা ১টার দিকে তা শাহজালাল ও সোহরাওয়ার্দী হলে ছড়িয়ে পড়ে। পরে পুলিশ ও প্রক্টরিয়াল বডির উপস্থিতিতে দেড় ঘণ্টা পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। এর আগে, গত বুধবার রাতে এক কর্মীর পক্ষত্যাগের ঘটনাকে কেন্দ্র করে ওই দুপক্ষের মধ্যে ঘণ্টাব্যাপী পাল্টাপাল্টি ধাওয়া চলে। 

ছাত্রলীগ সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার রাত পৌনে ৮টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টেশন চত্বরে সিএফসি পক্ষের এক কর্মীর সঙ্গে সিক্সটি নাইন পক্ষের কর্মীদের কথা-কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে তা হাতাহাতিতে রূপ নেয়। এ ঘটনা জানাজানি হলে সিএফসি পক্ষের কর্মীরা শাহ আমানত হল ও সিক্সটি নাইন পক্ষের কর্মীরা শাহজালাল হলে অবস্থান নিয়ে একে অপরের দিকে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকেন। রাত সাড়ে ৯টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ঘটনাস্থলে পুলিশ ও প্রক্টরিয়াল বড়ির সদস্যরা উপস্থিত থাকলেও সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেননি। 

এদিকে সন্ধ্যায় শুরু হওয়া সংঘর্ষে আহত হয়ে এখন পর্যন্ত দুজন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসা নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রের প্রধান চিকিৎসা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ডা. আবু তৈয়ব। তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত দুজন চিকিৎসা নিতে এসেছেন। আরও কয়েকজন অ্যাম্বুলেন্সের জন্য কল দিয়েছে। আমরা অ্যাম্বুলেন্স পাঠিয়েছি।

জানতে চাইলে সিএফসি পক্ষের নেতা ও শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি মির্জা খবির সাদাফ বলেন, সিক্সটি নাইনে কোনো নেতা নেই। তাঁদের কেউ কাউকে মানে না। বিজয়পক্ষের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনা না মিটতেই তাঁরা স্টেশনে আমাদের এক কর্মীকে মারধর করেছেন। আমরা সিনিয়রদের সঙ্গে কথা বলে পরবর্তী পদক্ষেপ নেব।

তবে এ ঘটনাকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে দাবি করেছেন সিক্সটি নাইন পক্ষের নেতা ও সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাঈদুল ইসলাম সাঈদ। তিনি বলেন, সিএফসি ইচ্ছাকৃতভাবে গায়ে পড়ে এই ঝামেলা বাধিয়েছে। আমরা বিজয় পক্ষের সঙ্গে ঝামেলা মেটাচ্ছিলাম। এর মধ্যেই তারা এটা ঘটিয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর নাজেমুল আলম মুরাদ বলেন, ছাত্ররা থেমে থেমে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করছে। আমরা দুই পক্ষের মধ্যে সমঝোতার চেষ্টা করছি। তারা না থামলে আমরা কঠোর অবস্থান নেব।

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়