প্লাস্টিকের ভয়াবহতা বুঝাতে ১৫ হাজার কি.মি.হেঁটে রামগড়ে ভারতীয় যুবক 

প্লাস্টিকের ভয়াবহতা বুঝাতে পরিবেশ রক্ষার আহ্বান নিয়ে বিশ্বের ১৫টি দেশে যেতে চান ভারতীয় যুবক রোহান আগারওয়াল। নিজদেশের ২৭টি রাজ্য ঘুরে তিনি এখন বাংলাদেশে। দুই বছর আগে এই যাত্রা যখন শুরু করেন তখন রোহানের বয়স ছিল ১৮ বছর। ২০২০ সালের ২৪ আগস্ট ভারতের উত্তর প্রদেশের বারানসিতে গঙ্গার তীর থেকে শুরু হয় তার হাঁটা। সেখান থেকে রাজস্থান, হরিয়ানা, দিল্লি, চণ্ডিগড়, হিমাচল, উত্তরাখণ্ড, মধ্য প্রদেশ, মহারাষ্ট্র, অন্ধ্রপ্রদেশ, তেলেঙ্গানা, তামিলনাড়ু, পন্ডিচেরি, কর্নাটক, কেরালা ও গোয়া হয়ে ভারতের মোট ২৭টি রাজ্য পরিভ্রমণ শেষে ৮ অক্টোবর ফেনীর বিলোনিয়া সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে ঢুকেন এই যুবক। তারপর পৌঁছান পার্বত্য চট্টগ্রামে।

বুধবার (৯ নভেম্বর) সকালে রোহান আগারওয়াল খাগড়াছড়ি হয়ে রামগড়ে পৌঁছে উপজেলা চেয়ারম্যান বিশ্বপ্রদীপ কুমার কারবারী, উপজেলা নির্বাহী অফিসার খোন্দকার মো. ইখতিয়ার উদ্দিন আরাফাত ও পৌর মেয়র রফিকুল আলম কামাল এর সঙ্গে সৌজন্য স্বাক্ষাৎ করেন। পরে শতাধিক শিক্ষার্থীদের নিয়ে শহর সমাজসেবার একটি অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির সম্মাননার মাধ্যমে পরিচিত হন রোহান।

অনুষ্ঠানে রোহান বলেন, পথ চলতে চলতেই পরিচয় বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে। পথের ওই মানুষেরাই আমাকে সহযোগিতা করেছেন, খরচ, খাবার ও থাকার ব্যবস্থা করেছেন। রোহান বললেন, পথই আমার বিশ্ববিদ্যালয়। আর পথে যাদের সঙ্গে পরিচয় তারাই হলেন আমার শিক্ষক। 

রোহান সাংবাদিকদের জানান, নাগপুরে থাকে তার পরিবার। তার বাবা-মা ও ছোট বোন আছেন। পার্বত্য চট্টগ্রাম, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, নোয়াখালী, কুমিল্লা, ঢাকা, খুলনা ও যশোরে যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে তার। রোহান বলেন, কক্সবাজার সবচেয়ে বড় সৈকত তিনি এই  সৈকতের শুরু থেকে টেকনাফ পায়ে হেঁটেছেন। ৮০০ দিনের এই যাত্রায় এখন পর্যন্ত ১৫ হাজার কিলোমিটার অতিক্রম করেছেন দাবি করে তিনি জানান, এর পুরোটাই হেঁটে কিংবা অন্য কারও গাড়িতে লিফট নিয়ে চলেছেন তিনি।

রোহান আরো বলেন, এ পৃথিবী শুধু মানুষের বসবাসের জন্য নয়। প্রাণী-উদ্ভিদেরও। তাই পরিবেশের বিষয়ে অবশ্যই সচেতন হতে হবে। এটা সব মানুষের দায়িত্ব। তিনি বলেন, যে রাজ্যেই গিয়েছি, সেখানকার স্কুল-কলেজে গিয়েছি, বিভিন্ন পাবলিক প্লেসে গিয়েছি। সবাইকে বলেছি পরিবেশ রক্ষার জন্য। ৯৯ শতাংশ মানুষই ভালো। কেউ কোনোদিন জানতে চায়নি, আমি কোন ধর্মের। মানুষ হিসেবে সবাই ‘হেল্প’ করেছে। হাঁটছি এবং পৃথিবী ঘুরছি, পরিবেশ সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করছি’ লেখা প্ল্যাকার্ড নিয়ে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সামনেও তিনি দাঁড়িয়েছিলেন বলে তিনি জানান।

পার্বত্য চট্টগ্রামের অভিজ্ঞতা জানিয়ে রোহান বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম পরিবেশ অন্য জায়গা থেকে ভাল তবে রাস্তায় যেখানে সেখানে ময়লা পড়ে থাকতে দেখেছি। দোকানের বাইরে ডাস্টবিনও নেই।  বাজারগুলোতে প্রচুর প্লাস্টিক দেখেছি। প্লাস্টিক পণ্যে বেশি কর আরোপ এবং বিকল্প পণ্যগুলোতে বাজার সুবিধা দিতে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানান রোহান।

গভর্নমেন্ট সিকিম প্রফেশনাল ইউনিভার্সিটির স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র রোহান এই যাত্রায় ১৫টি দেশ যেতে চান। বাংলাদেশের পর মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া, লাওস, ভিয়েতনাম, চীন, হংকং, ম্যাকাও, মঙ্গোলিয়া ও রাশিয়ার সাইবেরিয়ায় যাওয়ার ইচ্ছা রোহানের। রোহান বিশ্বাস করেন, হিংসা ত্যাগ না করলে এবং পরিবেশ সংরক্ষণ করা না গেলে এই পৃথিবী একদিন ধ্বংস হয়ে যেতে পারে।