Cvoice24.com

বিদেশি অপারেটর নিয়োগে আটকে আছে পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনালের কার্যক্রম

সিভয়েস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৯:০০, ১ অক্টোবর ২০২২
বিদেশি অপারেটর নিয়োগে আটকে আছে পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনালের কার্যক্রম

পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল। ফাইল ছবি

চট্টগ্রামে নির্মাণাধীন পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল চালু হওয়ার কথা ছিল গত জুলাই মাসে। সিদ্ধান্ত ছিল নিজস্ব যন্ত্রপাতি ও ব্যবস্থাপনায় চলবে টার্মিনালটির অপারেশনাল কার্যক্রম। তবে সে সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। 

এখন বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে— প্রথমে বিদেশি অপারেটর নিয়োগ করা হবে। এরপর তাদের কেনা যন্ত্রপাতি দিয়ে চালু হবে টার্মিনালের কাজ। কিন্তু সব প্রক্রিয়া শেষে কখন টার্মিনালটি চালু হবে তা নিশ্চিত করে বলতে পারছে না। 

পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল চালুর বিষয়টি দফায় দফায় পিছিয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। ২০২১ সালের জুন মাসে টার্মিনালটি চালু করার কথা ছিল। সে সময় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের নির্বাহী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান বলেছিলেন, ‘করোনার কারণে প্রকল্পের কাজে ব্যাঘাত ঘটায় জুন মাসে টার্মিনালটি চালু করা সম্ভব নয়।’

এক বছর পিছিয়ে অর্থাৎ ২০২২ সালের জুনে টার্মিনালটি চালুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। তবে চলতি বছরে এসে ২১ জুলাই কার্যক্রম শুরুরও ঘোষণা দিয়েছিল বন্দর। অথচ গত জুলাই মাসে টার্মিনালের কাজ শতভাগ শেষ হলেও এবার অপারেটর নিয়োগ জটিলতায় পড়ে টার্মিনালটি বেকার পড়ে আছে।’

এদিকে বন্দর ব্যবহারকারীরা বলছেন, চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে দিনকে দিন আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য প্রসারিত হচ্ছে। ইউরোপের বিভিন্ন দেশে চালু হচ্ছে সরাসরি জাহাজ চলাচল। সীমিত যন্ত্রপাতি দিয়ে সার্বিক কার্যক্রম সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে বন্দর। অথচ পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনালটি চালু করে দিলে এখানে ক্রেনযুক্ত জাহাজ অনায়াসে ভিড়তে পারবে। ফলে আলাদা করে যন্ত্রপাতি কেনার প্রয়োজন নেই। এতে করে বন্দরের ব্যয় কমবে এবং আয় বাড়বে। শিল্পের কাঁচামাল খালাসেও নতুন গতি আসবে। পাশাপাশি জাহাজের অপেক্ষমাণ সময়ও কমে যাবে। 

বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট এসোশিয়েশনের খায়রুল আলম সুজন সিভয়েসকে বলেন, ‘পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিানালের যেহেতু কাজ শেষ, তাই এটি চালু করে দেয়া উচিত। প্রথমে নিজেদের যন্ত্রপাতি দিয়ে নিজেরাই টার্মিনালটি পরিচালনার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বন্দর। তবে আমরা চাই কয়েকটি জাহাজ চলাচল শুরু হোক। সেটা ব্রেক বাল্ক জাহাজ বা কনটেইনার ভেসেলও হতে পারে। এতে করে একদিকে জাহাজ যেমন বেশি আসতে পারবে, অন্যদিকে বন্দরের আয়ও বাড়বে।’

বিকেএমইএর পরিচালক গাজী মো. শহীদ উল্ল্যাহ বলেন, ‘অপারেটর যদি নিয়োগ করা হয়, সেটা প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে হবে। কিন্তু ততোদিন অলসভাবে টার্মিনালটি ফেলে রাখা হবে কেন? কিছু জাহাজ চালু করলে একদিকে বন্দরের আয় বাড়বে, অন্যদিকে সবাই এর সুফল ভোগ করবে।’

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক সিভয়েসকে বলেন, ‘পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল প্রকল্পের জন্য আন্তর্জাতিক মানের বেসরকারি অপারেটর নিয়োগের জন্য ‘ইকুইপ, অপারেট অ্যান্ড মেইনটেন্যান্স অব পিসিটি অন পিপিপি মডেল’ শীর্ষক প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। পিপিপির অথোরিটি (কর্তৃপক্ষ) যখন আমাদের বলবে এই মডেলটাই হবে বিজনেস মডেল, তখনই আমরা সেটা নিয়ে দরাদরি করে একমতে আসতে পারলে ওই অপারেটরকে নিয়োগ দিব। তারাই যন্ত্রপাতি সরবরাহ করবে। এরপরই আমরা টার্মিনালটি চালু করতে পারব।’

প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ৩২ একর জায়গায় নির্মিতব্য টার্মিনালটি চালু হলে চার লাখেরও বেশি টিইইউএস কনটেইনার হ্যান্ডলিং করা সম্ভব হবে। পাশাপাশি থাকবে তেলবাহী জাহাজ ভিড়ানোর সুবিধা। নির্মাণাধীন পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল বাস্তবায়ন হলে বন্দরের কার্যক্ষমতাও বৃদ্ধি পাবে, বাড়বে লজিস্টিক সক্ষমতা।

২০১৭ সালের ১৩ জুন পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল প্রকল্পের অনুমোদন দেয় সরকার। ১ হাজার ৮৬৮ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পের শেষ সময় ছিল ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। পরে ব্যয় আরও ১ হাজার ৩৯৩ কোটি ৪১ লাখ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাবের সঙ্গে চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় চেয়ে আরডিপি বরাবর আবেদন করে প্রকল্প সংস্থা।

গত বছরের মার্চে টার্মিনাল পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ প্রকল্পটি পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) আওতায় বাস্তবায়নের জন্য ‘ইকুইপ, অপারেট অ্যান্ড মেইনটেন্যান্স অব পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল’ প্রকল্পের নীতিগত অনুমোদন দেয় সরকার। টার্মিনাল অপারেশন পরিচালনা ও বিনিয়োগ প্রস্তাবে সৌদি আরবের রেড সি গেটওয়ে টার্মিনাল, দুবাইয়ের ডিপি ওয়ার্ল্ড, ভারতের আদানি পোর্ট আ্যান্ড স্পেশাল ইকোনমিক জোন লিমিটেড ও সিঙ্গাপুরের পিসিএর মত আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো আগ্রহ প্রকাশ করেছে। প্রাক-সমীক্ষা অনুযায়ী প্রকল্পটির সম্ভাব্য বিনিয়োগের পরিমাণ ৫৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং বার্ষিক পরিচালনা ব্যয় ৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।

বন্দরের পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল প্রকল্পে রয়েছে ৩২ একর জায়গায় ৬০০ মিটার দীর্ঘ জেটি। যেখানে তিনটি জাহাজ বার্থিং করতে পারবে। এছাড়া থাকবে ২২০ মিটার দীর্ঘ একটি ডলফিন জেটি। থাকছে ১ লাখ ১২ হাজার বর্গমিটার অভ্যন্তরীণ ইয়ার্ড এবং রাস্তা। পাশাপাশি ২ হাজার ১২৮ বর্গমিটার কনটেইনার ফ্রেইট স্টেশন শেড (সিএফএস), ছয় মিটার উচ্চতার ১ হাজার ৭৫০ মিটার কাস্টমস বন্ডেড ওয়াল, ৫ হাজার ৫৮০ বর্গমিটার পোর্ট অফিস বিল্ডিং, ১ হাজার ২০০ বর্গমিটার যান্ত্রিক ও মেরামত কারখানা, ২ হাজার ৫০০ মিটার রেলওয়ে ট্রেক নির্মাণ, ৪২০ মিটার ফ্লাইওভার নির্মাণ, চার লেনবিশিষ্ট শূন্য দশমিক ৭৫ কিলোমিটার এবং ছয় লেনবিশিষ্ট ১ কিলোমিটার আগের রাস্তা স্থানান্তর করে পুননির্মাণ, সিকিউরিটি পোস্ট, গেস্ট হাউস, ফুয়েল স্টেশন এবং লেবার শেড করা হয়েছে। 

টার্মিনাল পরিচালনা কাজে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতির মধ্যে থাকবে দুটি ফায়ার ট্রাক, একটি ফায়ার কার, তিনটি নিরাপত্তা পেট্রোল কার, একটি আম্বুলেন্স, চারটি গ্যান্ট্রি ক্রেন, চারটি স্ট্রাডেল কেরিয়ার, চারটি রিচ স্ট্যাকার, আটটি রাবার টায়ারড গ্যান্ট্রি ক্রেন (আরটিজি), চারটি লো-মাস্ট ফর্ক লিফট, চারটি ফর্ক লিফট, একটি রেইল মাউন্টেড গ্যান্ট্রি ক্রেন (আরএমজি), দুটি টাগ বোট, দুটি পাইলট বোট এবং দুটি ফাস্ট স্পিডবোট। আর রেললাইন সংযুক্ত থাকবে সাউথ কনটেইনার ইয়ার্ডের সঙ্গে।

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়