সীতাকুণ্ডে বিস্ফোরণের পেছনে নাশকতা দেখছে ডিপো কর্তৃপক্ষ

সিভয়েস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২০:০৮, ৬ জুন ২০২২
সীতাকুণ্ডে বিস্ফোরণের পেছনে নাশকতা দেখছে ডিপো কর্তৃপক্ষ

সীতাকুণ্ডের সোনাইছড়ির বিএম কনটেইনার ডিপোতে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ডের পেছনে 'হাইড্রোজেন পারক্সাইড' নামক দাহ্য রাসায়নিকের মজুদকে দুষলেও ডিপো কর্তৃপক্ষ এখন সেটাকে নাশকতা বলে দাবি করছে। 

সোমবার (৬ জুন) বিকাল ৪টায় চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আহতদের দেখতে এসে এমন দাবি জানান প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক আজিজুর রহমান।

তিনি বলেন, ‘ডিপোতে আট থেকে নয়শ’ কনটেইনার ছিল। কোনোটাই বিস্ফোরিত হয়নি। একটা কনটেইনারে কেন বিস্ফোরণ ঘটেছে। এখানে নাশকতার বিষয়টি স্পষ্ট।’  

এ সময় পরিচালক আজিজুর রহমান বলেন, ‘আমাদের ডিপো থেকে কোনও কনটেইনার বের করতে কিংবা প্রবেশ করাতে কাস্টমসের অনুমতি নিতে হয়। এখানে যদি কোনও বিপজ্জনক রাসায়নিক পদার্থ থেকে থাকে তা কাস্টমস কর্মকর্তাদের জানার কথা।’ 

যদিও কাস্টমস কর্তৃপক্ষ বলেছে— বিএম ডিপোর একই মালিকের আরেক প্রতিষ্ঠান আল রাজি কেমিক্যাল কমপ্লেক্সই ৩৩টি কনটেইনারে করে দাহ্য কেমিক্যাল 'হাইড্রোজেন পারক্সাইড' ডিপোতে মজুদ করেছিল। সেখান থেকে ১৬টি কনটেইনার কয়েক দিনের মধ্যেই পাকিস্তানে রপ্তানি হওয়ার কথা ছিল। 

অগ্নিকাণ্ড ও বিস্ফোরণের পর থেকে ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা বলে আসছেন— আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে তারা প্রথাগতভাবে পানি দিয়ে নেভানোর চেষ্টা করেছেন, কারণ ডিপোতে যে হাইড্রোজেন পারক্সাইড ছিল, সেটা ডিপোর কেউ ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তাদের জানায়নি। রাসায়নিক থাকার কথা জানতে পারলে তারা হয়ত অন্যভাবে কাজ করতেন। আরও সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়ে ফোম ব্যবহার করে আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হতো। তাছাড়া তাদের ৯ কর্মীকেও জীবন দিতে হতো না।

তবে বিএম কনটেইনার ডিপোর ম্যানেজার বাবুল কুমার দেবের দাবি, ডিপোতে চার হাজার ৩০০ কনটেইনার ছিল। এরমধ্যে ৯০ শতাংশ কনটেইনারে ছিল পোশাক কারখানার পণ্য। বাকি ১০ শতাংশ ছিল অন্যান্য পণ্যের কনটেইনার। এখানে আমদানি ও রফতানির কনটেইনার ছিল। আলাদা স্থানে রাখা হয় বিপজ্জনক কনটেইনার।

বিস্ফোরক অধিদপ্তর ও পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা কনটেইনার ডিপোতে রাসায়নিক দ্রব্য থাকার বিষয়ে কিছুই জানেন না। বিস্ফোরক অধিদপ্তর চট্টগ্রামের পরিদর্শক তোফাজ্জল হোসেন বলেছেন— ‘কনটেইনার ডিপোতে বিপদজনক পণ্য বা রাসায়নিক রাখার কোনো অপশনই নেই। সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তর কিংবা প্রক্রিয়া অনুসরণ করার আগে এসব বাইরে রাখতে হয়। এসবের কিছুই কাস্টমস কর্তৃপক্ষ করেনি। তাহলে ধরে নেওয়া হবে এখানে অন্য কোনো বিপদজনক পণ্য আনা হয়েছে যা কাস্টমস রেজিস্ট্রারই করে নাই। এমনকি এই বিষয়টাতেও আমাদের জানানো হয়নি।’

একই প্রসঙ্গে পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের পরিচালক মুফিদুল আলম সিভয়েসকে বলেছেন, ‘এই রাসায়নিক দ্রব্যের অনুমতি কিংবা এ ব্যাপারে কিছুই জানায়নি ডিপো কর্তৃপক্ষ। আমরা জানিনাও সেখানে রাসায়নিক দ্রব্য মজুদ ছিল।’

পরিবেশ, বিস্ফোরক ও কনটেইনার ডিপো কেউই 'হাইড্রোজেন পারক্সাইড' নামক দাহ্য রাসায়নিক মজুদের বিষয়টি না জানলেও ঘটনাস্থলে শত শত প্লাস্টিক ড্রামে এ দাহ্য পদার্থটির দেখা মিলেছে। তাছাড়া ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারাও বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছে 'হাইড্রোজেন পারক্সাইড' থাকার কারণেই মূলত আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হচ্ছে না। 

শনিবার (৪ জুন) দিবাগত রাত সাড়ে ৯ টার দিকে সীতাকুণ্ডের সোনাইছড়িতে অবস্থিত বিএম ডিপোতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। পরে ফায়ার সার্ভিস আগুন নেভাতে পানি দিলে রাত সাড়ে ১০টার দিকে বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে পুরো ডিপো এলাকা। দ্রুত চারদিকে আগুন ছড়িয়ে পড়ে শত শত লোকজন হতাহত হয়। আহতদের উদ্ধার করে চমেক হাসপাতাল ও বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠানো হয়। আগুন নেভাতে গিয়ে প্রাণ হারায় ফায়ার সার্ভিসের ৯ কর্মীও। এ ঘটনায় রবিবার (৫ জুন) রাত পর্যন্ত ৪৯ জনের মৃতদেহ পাওয়ার তথ্য জানানো হলেও সোমবার (৬ জুন) প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয় ৪১ জনের মৃতদেহ পাওয়া গেছে। 

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়