ব্যাংকপাড়ায় বাহারি ইফতারি

রবিউল রবি, সিভয়েস২৪

প্রকাশিত: ১৫:৩৪, ১৮ মার্চ ২০২৪
ব্যাংকপাড়ায় বাহারি ইফতারি

অলিগলি থেকে শুরু করে নামি-দামি রেস্টুরেন্ট—সবখানেই বাহারি ইফতারির পসরা। ক্রেতার অপেক্ষায় আছেন বিক্রেতারাও। কিন্তু আশানুরূপ ক্রেতার দেখা মিলছে না। দুপুর গড়িয়ে বিকেল হতে হতে ক্রেতা সমাগম কিছুটা বাড়লেও তা অপ্রতুল— বলছেন বিক্রেতারা। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দামের ঊর্ধ্বগতিতে ক্রেতা চাহিদা কমে গেছে বলে মনে করছেন তারা। তাদের আশা, রোজার শেষ দিকে বিকিকিনি বাড়তে পারে।

সোমবার (১৮ মার্চ) বিকেলে ষষ্ঠ রমজানে নগরের প্রধান বাণিজ্যিক এলাকা ব্যাংকপাড়া খ্যাত আগ্রাবাদের বেশ কিছু অলিগলির ইফতার সামগ্রীর দোকান ঘুরে দেখা গেছে একেবারে ফাঁকা।

এসব দোকানগুলোয় ছোলা-মুড়ি, পেঁয়াজু, বেগুনি, চপ, শরবতের আইটেমের পাশাপাশি বিফ হালিম, চিকেন হালিম, মাটন হালিম, চিকেন ললিপপ, চিকেন উইংস, চিকেন ফ্রাই, এরাবিয়ান চিকেন, চিকেন রোল, চিকেন কাটি, চিকেন টিক্কা, মাটন জালি কাবাব, মটকা মাটন তেহেরি, বিফ তেহেরি, পুডিং, সীর খুরমা, দই, জিলাপি, ফিরনিসহ দেখা গেছে বাহারি পদের ইফতার আইটেম।

সরেজমিনে দেখা যায়, পূর্ব দিকের ব্যাংকপাড়ায় ঢুকতেই ফুটপাতের ওপর বসেছে কয়েকটি ইফতার সামগ্রীর দোকান। রহমান কুলিং কর্নার নামে একটি দোকানে গিয়ে দেখা যায় ছোলা-মুড়ি, পেঁয়াজু, বেগুনি, চপ, টিক্কাসহ অনেক পদের ইফতার আইটেম দোকানে থাকলেও তেমন একটা ক্রেতা সমাগম নেই সেখানে। ক্রেতা সংকটের কারণ হিসেবে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিকেই দুষছিলেন ওই দোকানের কর্মচারী মোহাম্মদ রহিম। 

তিনি বলেন, ‘প্রথম রোজাতেই মনে হয় জিনিসপত্রের দাম একটু কম ছিল। এখন জিনিসের দাম বাড়ছে আর ক্রেতার সংখ্যা কমছে। আমাদেরও উপায় নেই। ইফতার সামগ্রী তৈরিতে খরচ বেশি হলে দাম তো বাড়াতেই হবে। আমাদের দৈনিক বিক্রির টার্গেট কমপক্ষে ৮ হাজার টাকা। কিন্তু রমজানের এই শুরুর কদিনে ৫ হাজার ছাড়াতেই কষ্ট হয়। আবার গত তিনদিন ধরে ব্যাংক বন্ধ ছিল। এই কারণেও অনেকটা ক্রেতাশূন্যতা। এখন ক্রেতা কম থাকলেও ১০-১৫ রমজানের পরে বাড়বে।'

রহমান কুলিং কর্ণারের আশেপাশে থাকা অন্যান্য দোকানগুলোতেও দেখা গেছে একই চিত্র। এসব ফুটপাতের দোকানে টুকিটাকি বিকিকিনি হলেও নাজুক অবস্থা নামিদামি রেস্টুরেন্টগুলোয়। 

আগ্রাবাদ মোড়ে অবস্থিত হোটেল সেন্টমার্টিনে গিয়ে দেখা যায়, হোটেলের ভেতরে ব্যুফে এবং ইফতার পার্টির সুযোগ রাখা হয়েছে ক্রেতাদের জন্য। আবার হোটেলের ঠিক সামনেই টেবিলের ওপর রয়েছে নানা ধরনের ইফতার আইটেম। ভেতরে বসে না খেলেও সেখান থেকে কিনে ক্রেতারা নিয়ে যেতে পারবেন বাসায়।

হোটেলটিতে ১০ রমজান পর্যন্ত ৩৫টিরও বেশি আইটেমের ব্যুফে ইফতার পাওয়া যাবে ৭৩৭ টাকা মূল্যে। যেটি সাধারণ সময় ১১শ টাকায় বুকিং নেন তারা। এছাড়া পরিবার নিয়ে ইফতার করার জন্য রয়েছে ৩০০ থেকে ৭৫০ টাকা পর্যন্ত বিভিন্ন সেট মেন্যু। 

হোটেলটিতে মাটন হালিম কেজিপ্রতি ৭৫০ টাকা, বিফ হালিম ৬৫০ টাকা, চিকেন হালিম ৫৫০ টাকা, চনা ভুনা ২০০ টাকা, চিকেন জালি কাবাব, চিকেন শাশলিক ও কোনাফা (মিষ্টান্ন) পিসপ্রতি ৬০ টাকা, শাহি জিলাপি ও বোম্বে জিলাপি কেজিপ্রতি ৪০০ টাকা, বিফ মেজবানি কারি ১২শ টাকা করে পাওয়া যাচ্ছে।

হোটেলের একজন কর্মী সিভয়েস২৪-কে বলেন, ‘আমাদের মোটামুটি বিক্রি প্রতিবছর ভালোই হয়। এবারও এর ব্যতিক্রম নয়। এবার আমরা হোটেলের ভেতরে ইফতার পার্টির পাশাপাশি বিভিন্ন প্যাকেজ সেট মেন্যুর আয়োজন করেছি। এছাড়া ক্রেতারা বাসায় নিতে পারবেন—এমন ৪০টিরও বেশি আইটেম বিক্রি করছি। সাড়া ভালো পাচ্ছি।’

এদিকে, ওরিয়েন্ট হোটেলে গিয়ে দেখা যায়, অন্যান্য দোকানের তুলনায় সেখানে ক্রেতা সমাগম অপেক্ষাকৃত বেশি। হোটেলটিতে চিকেন ললিপপ প্রতিপিস ৬০ টাকা, চিকেন উইংস প্রতিপিস ৪০ টাকা, চিকেন কাটি প্রতিপিস ৫০ টাকা, চিকেন ফ্রাই প্রতিপিস ৬০ টাকা, এরাবিয়ান চিকেন প্রতিপিস ২০০ টাকা, চিকেন রোল প্রতিপিস ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া চিকেন টিক্কা প্রতিপিস ১২০ টাকা, মাটন হালিম প্রতিকেজি ৭৫০ টাকা, চিকেন হালিম কেজিপ্রতি ৬৫০ টাকা এবং বিফ হালিম বিক্রি হচ্ছে ৭০০ টাকায়।

ইফতারি কিনতে আসা এক ক্রেতা বলেন, ‘অন্যান্য বছর ইফতারি পরিমাণে বেশি কিনতে পারলেও একই পরিমাণ টাকায় এবার বেশি ইফতারি কিনতে পারছি না। ফলে কিছুটা কাটছাঁট করে প্রতিদিন ইফতার বাজার করছি। আমার পরিবারে মোট ৬ জন সদস্য। তাদের জন্য তো ইফতারি কিনতেই হবে। আমরা কমদামে ফুটপাতের ইফতারি কিনলেও যাদের সামর্থ্য আছে তারা নামিদামি রেস্টুরেন্টগুলোতে যায়।’

পেয়ারী তেহেরি নামে একটি রেস্টুরেন্টের কর্মচারী মো. ইমতিয়াজ বলেন, ‘আমাদের স্পেশাল আইটেম হচ্ছে তেহেরি। আমরা মাটন তেহেরি এবং বিফ তেহেরি মটকা হিসেবে যথাক্রমে ৪৮০ এবং ৪৬০ টাকায় বিক্রি করি। একই আইটেম ছোট প্যাকেটে বিক্রি করি ২৩৯ এবং ২২৯ টাকায়। এছাড়া আমাদের রয়েছে ৭০ টাকা করে পুডিং, ৯০ টাকা করে সীর খুরমা, ৬০ টাকা করে ফিরনি, ৬৫০ টাকা কেজিপ্রতি জিলাপি, ২০০ গ্রাম বোরহানি ৭৫ টাকা, এবং কেজিপ্রতি মাটন হালিম ৭৮০ টাকা।’

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়