একই রাস্তা ৫ বার উদ্বোধনের পরও শেষ হয়নি উন্নয়ন কাজ!

প্রকাশিত: ১২:০৮, ২৮ এপ্রিল ২০১৯
একই রাস্তা ৫ বার উদ্বোধনের পরও শেষ হয়নি উন্নয়ন কাজ!

রাস্তা একটাই। উদ্বোধন করা হয়েছে বারে বারে, এ নিয়ে পাঁচ বার। তবুও শেষ হয় নি রাস্তার উন্নয়ন কাজ! শুনতে অদ্ভুত শুনালেও এমনটি হয়েছে সাতকানিয়া উপজেলার কালিয়াইশ ইউনিয়নে। কাটগড়-আলমগীর সড়কটির উন্নয়ন কাজ বাস্তবায়ন করছে উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিআরডি)। 

জানা গেছে, কালিয়াইশ ইউনিয়নের কাটগড়-আলমগীর সড়কটি উন্নয়নের জন্য উদ্বোধন করা হয় পর পর ৫ বার। বিভিন্ন সময় নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা এর উদ্বোধনও করেন। কিন্তু  শেষ পর্যন্ত পুরো কাজ শেষ করতে পারে নি সংশ্লিষ্টরা। 

কাটগড়-আলমগীর সড়ক নামে উন্নয়ন কাজের প্রথম উদ্বোধন করেন বিএনপি’র সাংসদ কর্নেল(অবঃ) অলি আহমদ, বীর বিক্রম। দ্বিতীয়বার কাটগড়-আলমগীর সড়ক হিসেবে তিনি উদ্বোধন করেন। তৃতীয়বারও একই নামে বিএনপি’র সাংসদ হিসেবে ২০০২ সালে কর্নেল (অবঃ) অলি আহমদ উদ্বোধন করেন।

চতুর্থবার লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি) গঠন করে নিজ দলের সাংসদ হিসেবে ২০১০ সালে কালিয়াইশ ইউপি-ধর্মপুর ইউপি-দস্তিদার হাট ফজলুর রহমান সড়ক নামে ড. কর্নেল(অবঃ) অলি আহমদ বীর বিক্রম এ সড়কের উন্নয়ন কাজের উদ্বাধন করেন।

সর্বশেষ এলডিপি’র সাংসদেও দেয়া নামের কিছুটা পরিবর্তন এনে  কালিয়াইশ ইউপি-ধর্মপুর ইউপি-দস্তিদার হাট মুক্তিযোদ্ধা এম. ফজল করিম চেয়ারম্যান সড়ক হিসেবে ২০১৬ সালে উদ্বোধন করেন আওয়ামীলীগ সাংসদ নজরুল ইসলাম চৌধুরী। প্রতিবারই উন্নয়ন কাজের বাস্তবায়ন করেছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর(এলজিইডি)।

ব্রিক সলিং এর পরবর্তীতে এক চতুর্থাংশ কংক্রীট বিটুমিনের পিচের রাস্তা করেই দায় সেরেছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ। প্রতিবারেই কার্পেটিং কাজ শেষ হওয়ার পরদিন থেকেই ভাঙ্গন শুরু হয় বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। 

এ সড়কে নিয়মিত যাতায়াতকারী স্থানীয় জনসাধারন জানান, সড়কটির উন্নয়ন কাজের নামে যতবার উদ্বোধন করা হয়েছে তা’ সঠিকভাবে উন্নয়ন হলে কিছু অংশে ভাঙ্গা, কিছু অংশে এব্রোথেব্রো ব্রিক সলিং এ অবস্থা থাকত না । কাটগড় বিওসি’র মোড় থেকে দস্তিদার হাট পর্যন্ত কার্পেটিং হয়ে বান্দরবান সড়কের সাথে সংযোগ হয়ে যেত। আসলে এটা জনপ্রতিনিধিরা এলাকবাসীর সাথে উন্নয়নের নামে প্রতারণা করেছেন।  শুধু টাকা খরচ করে পাথর লাগিয়েছেন সঠিকভাবে উন্নয়ন কাজ কিছুই হয়নি।  তারা আরো জানান, এ সড়কের উন্নয়ন কাজের নামে যতবার পাথর লাগানো হয়েছে তার দুই তৃতীয়াংশ উন্নয়ন হলে সাড়ে ৬ কিলোমিটার দৈর্ঘের সড়কটি সম্পূর্ণ কার্পেটিং হয়ে বাজলিয়া ইউনিয়ন হয়ে বান্দরবান সড়কের সাথে সংযুক্ত হয়ে যেত। 

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে কাটগড় বিওসির মোড় হতে আলমগীর পর্যন্ত ৩ কিলোমিটারের মধ্যে উত্তর কালিয়াইশ হাসপাতাল মোড়ে বিশাল গর্ত। স্থানীয়দের উদ্যোগে ভাঙ্গা ইট দিয়ে মেরামত করা হয়। হাসপাতাল মোড়ের পর থেকে ভাঙ্গা গর্ত আর গর্ত। এ গর্ত গিয়ে শেষ হয়েছে কালিয়াইশের শেষ সীমানা আলমগীর এলাকায় গিয়ে। এরপর শুরু হয়েছে ধর্মপুর ইউনিয়ন। এ সড়কটির সিংহভাগই রয়েছে ধর্মপুর ইউনিয়নের মধ্যে। এ অংশে কার্পেটিং করা হয়েছে মাত্র ২শ’ মিটার। বাকি পুরো সড়কই ব্রিক সলিং তাও চলাচলের অযোগ্য হয়ে গেছে। আলমগীর স্কুল থেকে ধর্মপুর মুহুরী পাড়া হয়ে চাঁদের পাড়া পর্যন্ত এ সড়কের যতগুলো বক্স কালভার্ট আছে সবগুলোই ভাঙ্গা আর ঝুৃকিপূর্ণ। 

যোগাযোগের ক্ষেত্রে এ সড়কটি ৪টি ইউনিয়নের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কালিয়াইশ, ধর্মপুর, বাজালিয়া ও পুরানগড় ইউনিয়নের বাসিন্দাদের সহজ যোগাযোগের জন্য একমাত্র মাধ্যম এ সড়ক। এ সড়ক দিয়ে নিয়মিত যাতায়াত করে গাছবাড়িয়া সরকারী কলেজ, উত্তর সাতকানিয়া জাফর আহমদ চৌধুরী কলেজ, বিজিসি ট্রাষ্ট ইউনিভার্সিটি, বিজিসি ট্রাষ্ট স্কুল এন্ড কলেজ, উত্তর সাতকানিয়া আলী আহমদ প্রানহরি উচ্চ বিদ্যালয়, দোহাজারী জামিজুরী আঃ রহমান উচ্চ বিদ্যালয়, দোহাজারী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মহাবিদ্যালয়, দোহাজারী বালিকা বিদ্যালয়,  রসুলাবাদ সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসা, জামিজুরি রজবিয়া আজিজিয়া ফাজিল মাদ্রাসা, পূর্বকাটগড় সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ও  উত্তর কালিয়াইশ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক শিক্ষার্থীরা। এছাড়া ধর্মপুর, বাজালিয়া ও কালিয়াইশ ইউনিয়নসহ শঙ্খের চরে উৎপাদিত বিভিন্ন প্রজাতির সবজি এবং নানা ধরনের কৃষিপন্য এ সড়ক দিয়ে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে সরবরাহ করা হয়। বর্তমানের নাজুক এ সড়ক দিয়ে চলাচলসহ কৃষিপন্য সরবরাহে জন দূর্ভোগ চরম আকার ধারন করেছে। 

কালিয়াইশ ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ¦ হাফেজ আহমদ বলেন, যেহেতু এটা একটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক এবং এ সড়কে প্রায় ৩ লক্ষাধিক জনসাধারনের যাতায়াত সেহেতু এ সড়কটি বিষয়ে সংশ্লিষ্ট বিভাগ যেন অধিক গুরুত্ব দেন। প্রতিবার এ সড়কের উন্নয়ন কাজ শুরু পর্যাপ্ত বাজেট বরাদ্দ না পাওয়ার কারনে অংশ বিশেষ কাজ করে উন্নয়ন কাজ সমাপ্ত করতে হয়। 

এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে সাতকানিয়া উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর প্রকৌশলী পারভেজ সারওয়ার হোসাইন বলেন, সড়কটির দৈর্ঘ্য অনেক বেশী হওয়ার কারণে একসাথে পুরো সড়কের উন্নয়ন সম্ভব হয়নি। যতবার উদ্বোধন করা হয়েছে ততবারই অংশ বিশেষ ভাগ করে উন্নয়ন কাজ করা হয়েছে। শীঘ্রই এ সড়কের পুরো উন্নয়ন কাজ যাতে শেষ করা যায় তার জন্য প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

সিভয়েস/এএস

সাতকানিয়া প্রতিনিধি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়