Cvoice24.com


লোহাগাড়ায় বন্য হাতির রহস্যজনক মৃত্যু

প্রকাশিত: ০৮:৪৬, ২৩ নভেম্বর ২০২০
 লোহাগাড়ায় বন্য হাতির রহস্যজনক মৃত্যু

চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার বড়হাতিয়া এলাকায় বন্য শূকর শিকারীর ফাঁদে পড়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে বন্য হাতির মৃত্যু হয়েছে। সোমবার (২৩ নভেম্বর) ভোর ৭টায় উপজেলার বড়হাতিয়া চাকফিরানি গ্রামের পশ্চিম পাশে এ বন্য হাতির মৃত্যুর ঘটনা ঘটে।

সরেজমিন পরিদর্শনে গিয়ে জানা যায়, বড়হাতিয়া চাকফিরানী এলাকায় শীত মৌসুমে ক্ষেতের পাশে বন্য শূকর শিকারীর ফাঁদ বৈদ্যুতিক তারে জড়িয়ে বন্য হাতির মৃত্যু হয়।

স্থানীয়রা জানান, গত ৩ বছর আগে একই জায়গায় শূকর শিকারীর ফাঁদে ২টি বন্য হাতি নিহত হয়। ওই ঘটনায় মামলাও হয়। তবে রহস্যজনক কারণে জড়িতরা মামলায় আসামী হয়নি।

স্থানীয়রা আরো জানান, গত শনিবার রাতেও শিকারীরা অবৈধভাবে বিদ্যুৎ সংযোগ নিয়ে গিয়ে ফাঁদ বসিয়ে বন্য শূকর শিকার করে। ঘটনার দিন শিকারীর বৈদ্যুতিক তারের ফাঁদে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে বন্য হাতিটি মারা যায় বলে ধারণা করছেন স্থানীয়রা।

স্থানীয় কৃষক মো. সেলিম উদ্দিন বলেন, ‘আমি বর্গচাষা হিসেবে চাষ করি। গত শনিবার যখন লোকজন ধান কাটতে যায় স্থানীয় চৌকিদার মহিউদ্দিন, নুরুল আলম ও নাছির উদ্দিন আমার লোকদের ধরে নিয়ে যায়। আমি যখন জানতে পারি ফোন দিলে চৌকিদার মহিউদ্দিন বলেন- কিছুদিন থাকুক, এরই মধ্যে হাতি মারা গেল ফাঁদের মধ্যে।’

স্থানীয় নুরুল ইসলাম জানান, ‘গত কয়েক বছর আগেও ২টি বন্য হাতি মারা গিয়েছিল। সেই মামলায় অনেক নিরহ মানুষ আসামী হয়েছিল। প্রকৃতপক্ষে যাদের কারণে বন্য হাতি মারা গিয়েছে তাদেরকে আইনের আওতায় আনার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।’

এদিকে অভিযুক্ত চৌকিদার মহিউদ্দিন প্রতিবেদককে সরজমিন ঘটনাস্থলে উপস্থিত হতে দেখে অবাক হয়ে বলেন, ‘এতো দূরে আসতে হয় নাকি। আমাকে ফোন দিলে বিস্তারিত পেয়ে যেতেন।’ হাতি নিহতের কারণ জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান।

বন্য প্রাণী চুনতি অভয়ারণ্যের রেঞ্জ অফিসার মন্জরুল আলম বলেন, ‘বন্য হাতি নিহতের খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করি। ঘটনাস্থলে এসে বৈদ্যুতিক তারের ফাঁদে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা গেছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি।’ 

উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা এসে নিহত হাতির সুরতহাল শেষ করে ঘটনাস্থলে মাটি চাপা দেওয়া বলেও জানান তিনি। 

তবে তদন্ত করে উর্ধতন কর্তৃপক্ষের নিকট রিপোর্ট জমা দেবেন বলে জানান রেঞ্জ অফিসার মন্জরুল আলম। 

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান এমডি জোনাঈদ চৌধুরী বলেন, ‘ঘটনার খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম।’ তবে হাতি কি কারণে মারা গেছে সে ব্যাপারে অবগত নন বলেও জানান তিনি।

বড়হাতিয়া বন বিট কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান বলেন, ‘বড়হাতিয়া বন বিটের আওতাধীন সব জায়গা এখন প্রভাবশালিরা দখল করে রেখেছে। যার ফলে বন জঙ্গল উজাড় হয়ে গেছে। খাদ্যের অভাবে প্রতিনিয়ত বন্য প্রাণীরা লোকালয়ে হানা দিচ্ছে। শিকারীরা ফাঁদ পেতে বন্য প্রাণী শিকার করছে।’ 

শিকারীর ফাঁদে বন্য হাতি নিহতের ঘটনায় মামলা রুজুর প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে বলেও জানান তিনি।

লোহাগাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আহসান হাবিব জিতু বলেন, ‘হাতি নিহতের ঘটনা শুনেছি। হাতির ময়নাতদন্ত করা হয়েছে। তবে ফাঁদ পাতানোর ফলে হাতির মৃত্যু হওয়ার ঘটনাটি খুবই দুঃখ জনক বলে জানান তিনি।’

ঘটনার খবর পেয়ে চট্টগ্রাম দক্ষিণ বনবিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম, বন্য প্রাণী অভয়ারণ্যের বিভাগীয় কর্মকর্তা আ.ন.ম. ইয়াছিন নেওয়াজ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।

-সিভয়েস/আরএস/এএ

লোহাগাড়া প্রতিনিধি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়