Cvoice24.com

তের সালের মামলায় একুশ সালে কেন গ্রেপ্তার— প্রশ্ন বাবুনগরীর

সিভয়েস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২১:১৫, ১৯ এপ্রিল ২০২১

 

২০২১ সালে এসে কেন ২০১৩ সালের মামলায় গ্রেপ্তার করা হচ্ছে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন হেফাজতে ইসলামের আমির হাফেজ জুনায়েদ বাবুনগরী। একই সাথে নেতাকর্মীর মুক্তি দাবি করে সকলকে শান্ত থেকে পরিস্থিতি মোকাবেলার আহ্বানও জানান তিনি। এতোদিন হেফাজতের নানা আন্দোলনের হুঙ্কার থাকলেও এ ভিডিও বার্তায় এরকম কিছুই ছিল না। 

সোমবার (১৯ এপ্রিল) রাত সাড়ে ৮টার দিকে নিজের ফেসবুক আইডিতে পোস্ট করা এক ভিডিও বার্তায় তিনি এসব কথা বলেন। মামুনুল হকের গ্রেপ্তারের দুই দিনের মাথায় এসে নীরবতা ভেঙে তিনি ২০ মিনিট ৩৭ সেকেন্ডের একটি ভিডিও বার্তা দেন। 

হেফাজতের বিরুদ্ধে অলআউট অ্যাকশনে যাচ্ছে সরকার

হেফাজতে আমির বলেন, ‘২০২১ সালে এসে কেন ২০১৩ সালের মামলায় গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। এতোদিন কোথায় ছিলেন আপনারা? এসব মামলায় যাদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে সবই ডাহা মিথ্যা মামলা। এ পর্যন্ত যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে সবার মুক্তি দিতে হবে। ২৬ মার্চের ঘটনার রেশ ধরে পুলিশ দিনরাত হেফাজতের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করছে। আলেমরা এলাকায় থাকতে পারছেন না। সেহেরী খেতে ঘরে আসলে পুলিশ তাদের ধরে নিয়ে যাচ্ছে। রমজানের সময় এমন অভিযান কোনও ভাবে কাম্য নয়। আজিুজুল হক ইসলামবাদী, জুনায়েদ আল হাবীব ও মামুনুল হকসহ হেফাজতের সব নেতাকর্মীর মুক্তি দিতে হবে।’ 

চট্টগ্রামে হঠাৎ বাড়তি সতর্কতায় পুলিশ 

তিনি বলেন, ‘গত ২৬ মার্চ জুমাবার কিছু দুর্ঘটনা হয়েছে। অথচ ২৬শে মার্চ হেফাজতে ইসলামের কোন কর্মসূচী ছিল না, আমাদের কোন কমান্ড ছিল না। আমি নিজেও হাটহাজারী মাদ্রাসায় ছিলাম না, দূরে সফরে ছিলাম। এর আগে বায়তুল্ল মোকররমেও কিছু মুসল্লি আর ক্যাডারের মাঝখানে কিছু অঘটন ঘটেছে। ক্যাডাররা মুসল্লিদেরকে মারধর করেছে। বায়তুল মোকররমের পরেই হাটহাজারীর ঘটনা ঘটেছে, যার জন্যে আমরা অত্যন্ত দুঃখিত। আবার ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়ও কিছু ঘটনা ঘটেছে। মোট কথা হলো এইসব কোন ঘটনায় হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের কোন কর্মসূচি ছিল না, কোন কমান্ড ছিল না। বরং ভারত প্রধান মোদীর আসা উপলক্ষে হেফাজতে ইসলামের কোন কর্মসূচি ছিল না। এমনি কিছু কিছু বক্তারা বক্তৃতায় কিছু বললেও মোদী আসার ব্যাপারে হেফাজতের কোন কর্মসূচি ছিল না— এই হলো হেফাজতের অবস্থান।’ 

২০১৩ সালের শাপলা চত্ত্বরে তাণ্ডবের মামলায় সাত দিনের রিমান্ডে আজিজুল হক

হেফাজতে আমির বলেন, ‘হেফাজত হলো অরাজনৈতিক দেশের বড় একটি দল। বিগত ২০১০ সালে প্রতিষ্ঠা লাভ করা হেফাজত ২০২১ সালে এসে, প্রায় ১১ বছরে কেউ প্রমাণ দিতে পারবে না- কোনো পার্টির সঙ্গে হেফাজতের সম্পর্ক ছিল। হেফাজত শান্তি-শৃঙ্খলা চায়। কোনো অশান্তি বা বিশৃঙ্খলায় যেতে চায় না। হেফাজত কোনো সংঘাতেও যেতে চায় না। কাউকে ক্ষমতায় বসানো বা কাউকে ক্ষমতা থেকে নামানো হেফাজতের উদ্দেশ্য নয়। কোনো পার্টি বা দলের এজেন্ডা বাস্তবায়ন হেফাজত ইসলামের উদ্দেশ্য নয়। হেফাজতের উদ্দেশ্য হচ্ছে আল্লাহর জমিনে হযরত মুহাম্মদ (স:) এর এজেন্ডা বাস্তবায়ন করা। এই হল হেফাজতের অবস্থান। যারা বলে হেফাজত কারো এজেন্ডা বাস্তবায়নে নেমেছে আমি বলব নাউজিবিল্লাহ।’ 

মামুনুল হক গ্রেপ্তার

হেফাজতের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে চলমান ধরপাকড়ের দিকে ইঙ্গিত করে সংগঠনটির আমির বলেন, ‘আমাদের দেশের অবস্থা একটু ব্যতিক্রম দেখা যাচ্ছে। মাহে রমজানে প্রশাসন বেধড়কভাবে আমাদের হেফাজত ইসলামের নেতাকর্মী, হক্কানি আলেম ওলামাদের, দেশের জনগণকে, ছাত্র ও তৌহিদী জনতাকে হয়রানি ও গ্রেপ্তার করছে। অবিলম্বে এ ধরপাকড় ও হয়রানি বন্ধ এবং মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। তাছাড়া আমাদের হেফাজত নেতৃবৃন্দ ছাড়াও নেতৃবৃন্দ ও আলেম-ওলামাসহ ছাত্র ও তৌহিদী জনতা যাদেরকে ইতোমধ্যে আটক করা হয়েছে তাদের নি:শর্ত মুক্তি দিতে হবে।’ 

নেতাকর্মীদের শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়ে হেফাজতে আমির বলেন, শুধু দুনিয়ার হায়াত নয়, আসল হায়াত শুরু হবে মৃত্যুর পর থেকে। কবরের হায়াত, হাশরের হায়াত, আখেরাতের হায়াত, বেহেস্তের হায়াত। নিরাশ হবেন না। হতাশ হবেন না। হিম্মত, সাহস রাখুন, বালা মুসিবত বিপদের ওপর ধৈর্য ধারণ করুন। খবরদার কোনও ভাঙচুর করবেন না। জ্বালাও পোড়াও করবেন না। সংঘাতে যাবেন না।’

একটি হাদিসের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, ‘এটাতো হযরত আদম (আ.) এর যুগ থেকে চলে আসতেছে। যাদের ঈমান আকিদা বেশি মজবুত তাদের ওপর আল্লাহর পক্ষ থেকে পরীক্ষাও শক্ত হয়। বিপদও শক্ত আছে। নবীগণের দ্বীন ও ঈমান সবচেয়ে বেশি শক্ত ছিল, তাই নবীরা বেশি বিপদের শিকার হয়েছেন। এরপর সাহাবায়ে কেরাম, তাদের দ্বীন ও ঈমান শক্ত ছিল বিধায় তারাও নবীদের পরে বেশি বিপদের মুখোমুখি হয়েছেন। এভাবে সিলসিলা চলতে থাকবে। আমাদের মধ্যেও যাদের দ্বীন ঈমান বেশি মজবুত, যাকে আল্লাহ ভালোবাসেন, তার ওপর বিপদ আসে। তারা পরীক্ষার সম্মুখীন হন।’

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়