Cvoice24.com

‘গ্রেপ্তার ঠেকাতে’ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাসায় গেলেন হেফাজতের নেতারা 

সিভয়েস ঢাকা

প্রকাশিত: ২৩:৩৫, ১৯ এপ্রিল ২০২১
‘গ্রেপ্তার ঠেকাতে’ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাসায় গেলেন হেফাজতের নেতারা 

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাসভবনে প্রবেশ করছেন হেফাজত নেতারা

সরকারের কঠোর অবস্থানের কারণে অনেকটাই কোণঠাসা হেফাজতে ইসলামের শীর্ষ নেতারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। সেই বৈঠকে ছিলেন পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও। বৈঠক শেষে কোনও মন্তব্য না করলেও মূলত গ্রেপ্তার অভিযান থামাতেই হেফাজতের নেতারা এ বৈঠকে গেলেন বলে জানা গেছে।  

সোমবার (১৯ এপ্রিল) রাত ১০টার দিকে হেফাজতের অন্তত ১০ জন শীর্ষ নেতা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ধানমন্ডির বাসায় যান। এতে মামুনুল হকের ভাই বেফাক মহাসচিব মাওলানা মাহফুজুল হকও ছিলেন। পরে রাত ১১টা ১৫ মিনিটের দিকে তারা বেরিয়ে আসেন।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাসা থেকে বের হয়ে আসার পর গেটের সামনে দাঁড়িয়ে নিজেরা কিছুক্ষণ কথা বললেও তারা সাংবাদিকদের সাথে কথা না বলেই গাড়িতে করে স্থান ত্যাগ করেন। 

হেফাজতে ইসলামের মহা-সচিব মাওলানা নুরুল ইসলাম, হেফাজতের নায়েবে আমির মাওলানা মাহফুজুল হক, হেফাজত নেতা ও খেলাফত আন্দোলনের আমির মাওলানা আতাউল্লাহ হাফেজ্জী, তার ভাতিজা মাওলানা হাবিবুল্লাহ মিয়াজীসহ ১০ জন নেতা বৈঠকে অংশ নিয়েছেন। এছাড়া তেজগাঁও বিভাগের উপ কমিশনার (ডিসি) হারুন-অর-রশিদসহ পুলিশের দুই-তিনজন সদস্য উপস্থিত ছিলেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সরকারের কঠোর অবস্থানের কারণে কোণঠাসা হেফাজতে ইসলামের শীর্ষ নেতারা সমঝোতার চেষ্টা করছেন। এরই ধারাবাহিকতায় তারা গোয়েন্দা সংস্থা ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন। হেফাজতের নেতারা চাইছেন, আর কোনও নেতাকর্মীকে যেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গ্রেপ্তার না করে।

গত ২৬ মার্চ স্বাধীনতার ৫০ বছর ও বঙ্গবন্ধুর জন্মশত বার্ষিকী উপলক্ষে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরের বিরোধিতা করে আন্দোলনের নামে তাণ্ডব চালায় হেফাজতে ইসলাম। তখনও হেফাজতের শীর্ষ নেতাকর্মীদের নাম উল্লেখ না করেই একাধিক মামলা দায়ের করা হয়। তবে ৩ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের রয়েল রিসোর্টে হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক এক নারী সঙ্গীসহ অবরুদ্ধ হলে ইউটার্ন নেয় সরকার। এরপর থেকে একে একে হেফাজতের নেতাদের গ্রেপ্তার করা শুরু করে।

এরআগে রাত সাড়ে আটটার দিকে এক ভিডিও বার্তায় হেফাজতের আমির হাফেজ জুনায়েদ বাবুনগরী বলেন, ‘হেফাজত হলো অরাজনৈতিক দেশের বড় একটি দল। বিগত ২০১০ সালে প্রতিষ্ঠা লাভ করা হেফাজত ২০২১ সালে এসে, প্রায় ১১ বছরে কেউ প্রমাণ দিতে পারবে না- কোনো পার্টির সঙ্গে হেফাজতের সম্পর্ক ছিল। হেফাজত শান্তি-শৃঙ্খলা চায়। কোনো অশান্তি বা বিশৃঙ্খলায় যেতে চায় না। হেফাজত কোনো সংঘাতেও যেতে চায় না। কাউকে ক্ষমতায় বসানো বা কাউকে ক্ষমতা থেকে নামানো হেফাজতের উদ্দেশ্য নয়। কোনো পার্টি বা দলের এজেন্ডা বাস্তবায়ন হেফাজত ইসলামের উদ্দেশ্য নয়। হেফাজতের উদ্দেশ্য হচ্ছে আল্লাহর জমিনে হযরত মুহাম্মদ (স:) এর এজেন্ডা বাস্তবায়ন করা। এই হল হেফাজতের অবস্থান। যারা বলে হেফাজত কারো এজেন্ডা বাস্তবায়নে নেমেছে আমি বলব নাউজিবিল্লাহ।’ 

হেফাজতের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে চলমান ধরপাকড়ের দিকে ইঙ্গিত করে সংগঠনটির আমির বলেন, ‘আমাদের দেশের অবস্থা একটু ব্যতিক্রম দেখা যাচ্ছে। মাহে রমজানে প্রশাসন বেধড়কভাবে আমাদের হেফাজত ইসলামের নেতাকর্মী, হক্কানি আলেম ওলামাদের, দেশের জনগণকে, ছাত্র ও তৌহিদী জনতাকে হয়রানি ও গ্রেপ্তার করছে। অবিলম্বে এ ধরপাকড় ও হয়রানি বন্ধ এবং মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। তাছাড়া আমাদের হেফাজত নেতৃবৃন্দ ছাড়াও নেতৃবৃন্দ ও আলেম-ওলামাসহ ছাত্র ও তৌহিদী জনতা যাদেরকে ইতোমধ্যে আটক করা হয়েছে তাদের নি:শর্ত মুক্তি দিতে হবে।’ 

নেতাকর্মীদের শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়ে হেফাজতে আমির বলেন, শুধু দুনিয়ার হায়াত নয়, আসল হায়াত শুরু হবে মৃত্যুর পর থেকে। কবরের হায়াত, হাশরের হায়াত, আখেরাতের হায়াত, বেহেস্তের হায়াত। নিরাশ হবেন না। হতাশ হবেন না। হিম্মত, সাহস রাখুন, বালা মুসিবত বিপদের ওপর ধৈর্য ধারণ করুন। খবরদার কোনও ভাঙচুর করবেন না। জ্বালাও পোড়াও করবেন না। সংঘাতে যাবেন না।’ 

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়