Cvoice24.com

হাটহাজারী মাদরাসার মহাপরিচালক হচ্ছেন মুফতি আব্দুস ছালাম!

সিভয়েস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৯:১৫, ৭ সেপ্টেম্বর ২০২১
হাটহাজারী মাদরাসার মহাপরিচালক হচ্ছেন মুফতি আব্দুস ছালাম!

প্রায় এক বছর পর নতুন করে নেতৃত্ব সংকটে পড়া হাটহাজারী দারুল উলুম মুঈনুল ইসলাম মাদরাসার মহাপরিচালক পদে আসছেন কে? সেই প্রশ্নের অবসান ঘটতে যাচ্ছে আগামীকাল বুধবার রাতেই। ১৯৮৬ সাল থেকে টানা ৩৫ বছর ধরে এই মাদরাসা পরিচালনা করে আসছিলেন হেফাজতের প্রতিষ্ঠাতা আমির শাহ আহমদ শফী। তার মৃত্যুর একবছরেও পূরণ হয়নি এ পদ। তিন সদস্যের কমিটি যৌথভাবে মাদরাসা পরিচালনা করে আসলেও হেফাজতের আমির ও শিক্ষা পরিচালক জুনায়েদ বাবুনগরী মারা গেলে নতুন করে সৃষ্টি হয় সংকট। এ সংকট কাটাতে আগামীকাল (৮ সেপ্টেম্বর ) বৈঠকে বসছে ১১ সদস্যের শুরা কমিটি। এদিন সকাল ১০টার পরই চূড়ান্ত করা হবে কে হবেন শাহ আহমদ শফীর উত্তরসূরী। পাশাপাশি চূড়ান্ত করা হবে সহকারী পরিচালক ও শিক্ষা পরিচালকও।

আলোচনায় বেশ কয়েকজন প্রবীণ শিক্ষক থাকলেও সব কিছু ঠিক থাকলে বর্তমান শুরা কমিটির সদস্য মুফতি আব্দুস ছালাম চাটগাঁমী-ই হতে যাচ্ছেন হাটহাজারী মাদরাসার পরবর্তী মহাপরিচালক। সরকারের একটি গোয়েন্দা সংস্থা থেকে আরেক শুরা সদস্য মাওলানা শেখ আহমদকে চাইলেও শুরা কমিটির পছন্দের শীর্ষে আব্দুস ছালাম চাটগাঁমী-ই। এছাড়া সহকারী পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব আসতে পারেন মাওলানা শেখ আহমদ ও শিক্ষা পরিচালক হিসেবে মাওলানা ইয়াহইয়া এবং প্রধান শায়খুল হাদিস ও শিক্ষা সচিব হিসেবে আসতে পারেন মাওলানা শোয়েব জমিরী। যা এতোদিন ধরে জুনায়েদ বাবুনগরী পালন করে আসছিলেন। এদিন নতুন দুজন শুরা সদস্যও যুক্ত করা হতে পারে। তবে তার জন্য অপেক্ষা করতে হবে চূড়ান্ত ঘোষণা পর্যন্ত, যা ঘোষণা করা হবে আগামীকাল বুধবার এশার নামাজের পর শুরা বৈঠক শেষে। 

দেশের কওমি অঙ্গনের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ হিসেবে বিবেচনা করা হয় হাটহাজারী দারুল উলুম মুঈনুল ইসলাম মাদরাসাকে। হেফাজতের প্রতিষ্ঠাতা আমির শাহ আহমদ শফীর মৃত্যুর আগের দিন থেকে প্রায় এক বছর থেকে শূণ্য রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির মহাপরিচালকের পদ। আহমদ শফীর মৃত্যুর পর তিন সদস্যের শুরা কমিটির নেতৃত্বে এতোদিন হাটহাজারী মাদারাসাটি পরিচালিত হয়ে আসলেও প্রতিষ্ঠানটির প্রধান শায়খুল হাদিস হিসেবে দায়িত্ব নেন প্রয়াত জুনায়েদ বাবুনগরী। তিন সদস্যের শুরা কমিটি মাদরাসা চালালে অদৃশ্যভাবে হেফাজতের মত পুরো মাদরাসাই নিয়ন্ত্রণ ছিল জুনায়েদ বাবুনগরীর। তবে ১৯ আগস্ট বাবুনগরী মারা গেলে মাদরাসা পরিচালনায় আবার নতুন করে সংকট সৃষ্টি হয়। ফলে নতুন করে আলোচনায় আসে মাদারাসার মহাপরিচালক নির্বাচনের বিষয়টি। 

আগামীকাল বুধবার সকাল ১০টার পর মাদারাসায় শুরা কমিটির বৈঠক ডাকা হয়েছে। ১১ সদস্যের শুরা কমিটির সদস্যদের দাওয়াতপত্র পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। শুরা কমিটির অন্যতম সদস্যরা হলেন— ঢাকার জামিয়া আরাবিয়া ইমদাদুল উলুম ফরিদাবাদ মাদ্রাসা পরিচালক আল্লামা আব্দুল কুদ্দুস, ফরিদাবাদ মাদ্রাসা নায়েবে মুহতামিম মুফতি নুরুল আমিন, ঢাকার খিলগাঁও মাখজানুল উলুম মাদ্রাসার মাওলানা নুরুল ইসলাম জিহাদী, হাটহাজারীর আল জামিয়াতুল ইসলামিয়া হামিউচ্ছুন্নাহ মেখল মাদ্রাসার পরিচালক মাওলানা নোমান ফয়জী, ফটিকছড়ির জামিয়া উবাইদিয়া নানুপুর মাদ্রাসার পরিচালক মাওলানা সালাহউদ্দিন নানুপুরী ও হাটহাজারীর ফতেপুর মাদ্রাসার পরিচালক মাওলানা মাহমুদুল হাসান ফতেপুরী। 

গত বছরের ১৯ সেপ্টেম্বর শাহ আহমদ শফীর দাফনের দিনেই হাটহাজারীর ‘বড়’ মাদ্রাসা পরিচালনার জন্য তিন সদস্যের কমিটি করে দিয়েছিল শূরা কমিটি। এই কমিটির তিন সদস্য হলেন- মুফতি আবদুস সালাম, মাওলানা শেখ আহমদ ও মাওলানা মো. ইয়াহিয়া। তারাই মূলত মাদরাসা পরিচালনা করতেন এতোদিন। তাদের সাথে অদৃশ্যভাবে নিয়ন্ত্রণক হিসেবে ছিলেন মাদরাসাটির শায়খুল হাদিস প্রয়াত হেফাজত আমির জুনায়েদ বাবুনগরী। 

সংশ্লিষ্টরা জানান, ১৯৮৬ সাল থেকে টানা ৩৪ বছর হাটহাজারী মাদরাসার মহাপরিচালক ছিলেন আহমদ শফী। দীর্ঘদিন শুধু মাদরাসাটি নয়, পুরো কওমি অঙনে তার একচ্ছত্র প্রভাব ছিল। পাশাপাশি মাদরাসাটির নায়েবে মোহতামিম ছিলেন আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী। শফী-পরবর্তী মহাপরিচালক পদের অন্যতম দাবিদার ছিলেন বাবুনগরী। এরই মধ্যে ২০১০ সালের ১৯ জানুয়ারি প্রতিষ্ঠিত হয় অরাজনৈতিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। সংগঠনটির আমির ছিলেন আহমদ শফী ও মহাসচিব জুনায়েদ বাবুনগরী।

প্রতিষ্ঠার পর থেকে হেফাজতে দেশের ধর্মীয়সহ নানা ইস্যুতে আন্দোলন করে। ২০১৩ সালে এসে ইসলাম ও রাসুল (সা.)-কে কটূক্তিকারীদের ফাঁসি চেয়ে আন্দোলন শুরু করে। ওই বছর ১৩ দফা দাবি উত্থাপন করে ৫ মে সারাদেশ থেকে ঢাকা অভিমুখে লংমার্চ করে। ওই সময় রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের কর্মীদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। শাহবাগে থাকা গণজাগরণ মঞ্চের কর্মীদের সঙ্গেও তাদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরদিন ৬ মে হেফাজতের তৎকালীন মহাসচিব জুনায়েদ বাবুনগরীকে গ্রেফতার করা হয়। এরপর আহমদ শফীর সঙ্গে সমঝোতা করে কৌশলে তাদের সহিংস আন্দোলন থামায় সরকার।

এ ঘটনার পর থেকে শাহ আহমদ শফী এবং বাবুনগরীর মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্ব মাদরাসার বিভিন্ন ইস্যুতেও প্রভাব ফেলে। বাবুনগরীপন্থিদের দাবি, আহমদ শফীর ছেলে আনাস মাদানি বাবুনগরীর বিষয়ে তার বাবাকে ভুল বোঝায়। বাবাকে দিয়ে কৌশলে ২০২০ সালের ১৭ জুন এক বৈঠকের মাধ্যমে বাবুনগরীকে মাদরাসার সহযোগী পরিচালকের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। তার স্থলে নিয়োগ দেওয়া হয় শেখ আহমদকে। এরপর থেকে সংকট আরও ঘনীভূত হতে থাকে। 

একই বছরের ১৬ সেপ্টেম্বর শফীর অব্যাহতি এবং তার ছেলে মাদরাসার সহকারী পরিচালক আনাস মাদানির বহিষ্কার দাবিতে ছাত্রবিক্ষোভ শুরু হয়। আন্দোলনের সময় মাদরাসায় ব্যাপক ভাঙচুর চলে। এর পরিপ্রেক্ষিতে একদিন পর ১৭ সেপ্টেম্বর শফী নিজে মহাপরিচালক পদ থেকে অব্যাহতি নেন এবং ছেলে আনাস মাদানিকেও সহকারী পরিচালক (শিক্ষা) থেকে বাদ দেন। এরপর ১৮ সেপ্টেম্বর রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আহমদ শফীর মৃত্যু হয়।

শফীর মৃত্যুর পর থেকে হাটহাজারী মাদরাসার দৃশ্যপট আবার পাল্টাতে শুরু করে। তার দাফনের দিন হাটহাজারী মাদরাসায় শুরা বৈঠক বসে। বৈঠকে আবার জুনায়েদ বাবুনগরীকে শিক্ষা পরিচালক ও প্রধান শায়খুল হাদিস হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয় এবং মাদরাসা পরিচালনার জন্য তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। 

হাটহাজারী মাদরাসার শুরা কমিটির সদস্য ও ফটিকছড়ির জামিয়া উবাইদিয়া নানুপুর মাদরাসার পরিচালক মাওলানা সালাহউদ্দিন নানুপুরী বলেন, ‘আগামীকাল বুধবার সকালে মাদরাসার শুরা কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে মহাপরিচালক, সহকারী মহাপরিচালক ও শিক্ষা পরিচালক নির্বাচন করা হবে।’ 

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়