পিডিবির বৈদ্যুতিক খুঁটি জটিলতায় সিডিএ’র এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে

সিভয়েস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৪:৩২, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২১
পিডিবির বৈদ্যুতিক খুঁটি জটিলতায় সিডিএ’র এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে

ছবি: সিভয়েস।

একের পর এক জটিলতায় সময়ক্ষেপণ হচ্ছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) নির্মাণাধীন এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের নির্মাণ কাজ। সম্প্রতি চসিকের সঙ্গে নকশা নিয়ে জটিলতার পর এবার বিদ্যুতের খুঁটি নিয়ে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) সঙ্গে সিডিএর বিপত্তি বাধে। নগরের পতেঙ্গা অংশে ১৩টি বিদ্যুতের লাইনের কারণে থমকে আছে গার্ডার বসানোর কাজ। ফলে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়া নিয়ে তৈরি হয়েছে শঙ্কা। যদিও অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে ঠিকাদারকে খুঁটিগুলো সরানোর নির্দেশ দিয়েছে বলে জানিয়েছে পিডিবি। 

প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নগরের লালখান বাজার থেকে চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দর পর্যন্ত নির্মিত হচ্ছে ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। এ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে বসানো হচ্ছে ৩৭৫টি স্প্যান। এসব স্প্যানের মাঝখানে মোট ৩ হাজার গার্ডার বসানোর কথা রয়েছে। তবে নগরের পতেঙ্গা অংশে ৬শ’টি গার্ডার বসানোর পর বৈদ্যুতিক লাইন থাকার কারণে প্রকল্পের কাজ আর এগোনো যাচ্ছে না৷ 

তারা আরও জানান, পতেঙ্গা অংশে থাকা বৈদ্যুতিক লাইন ও ১৩টি খুঁটি সরাতে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডকে ১৮ কোটি টাকা দেয়া হয়েছে। এরপরও এ বিষয়ে তারা কোন ধরনের উদ্যোগই গ্রহণ করেনি। এ কারণে প্রকল্পের কাজ বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে।

অপরদিকে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) জানায়, হঠাৎ করে বলার কারণে বৈদ্যুতিক লাইন ও খুঁটিগুলো সরানো সম্ভব হয়নি। এসব সরাতে গেলে ঠিকাদার নিয়োগ, টেন্ডার দেয়াসহ আনুষঙ্গিক কিছু বিষয় জড়িত রয়েছে। প্রকল্পের কাজ শুরু করার সময় এ বিষয়ে বলে রাখলে এ সমস্যায় পড়তে হতো না।  

চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের প্রধান প্রকৌশলী হাসান বিন শামস্ সিভয়েসকে বলেন, ‘আগামী দেড় থেকে দুই বছরের মধ্যে প্রকল্পটির কাজ শেষ করার লক্ষ্য ছিল আমাদের। এজন্য প্রকল্পের কাজ দ্রুত এগিয়ে নিতে পাঁচ ভাগে কর্মী বিভক্ত করা হয়েছে। তবে পতেঙ্গা অংশে এসে বিদ্যুতের খুঁটি থাকার কারণে কাজ এগিয়ে নিতে সমস্যা হচ্ছে। অথচ আমরা সব ধরনের অর্থও পরিশোধ করা হয়েছে। দ্রুত এ সমস্যাটির সমাধান না হলে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করা অসম্ভব হয়ে পড়বে।’ 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী (পিডিবি) দেওয়ান সামিনা বানু সিভয়েসকে বলেন, ‘যখন সিডিএ প্রকল্পটি নিয়ে পরিকল্পনা করছিল, তখনই বিষয়টি আমাদের জানালে এ সমস্যার মধ্যে পড়তে হতো না। এটা তো সাধারণ লাইন নয় যে বলা মাত্রই সরিয়ে দেওয়া যাবে। এসব সরাতে কন্ট্রাকটর নিয়োগ, টেন্ডার দেয়াসহ কিছু আনুষঙ্গিক কাজ আছে। তারপরেই আসবে বৈদ্যুতিক তার সরানোর কথা। এ সমস্যাটি তৈরি হবার পর থেকে সিডিএ নানাভাবে পিডিবিকে দোষারোপ করে আসছে। এটা কখনও দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠানের আচরণ হতে পারে না। সিডিএ টাকা দিয়েছে, তার মানে এই না যে হুট করে বললেই কাজ হয়ে যাবে। তবে অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে বৈদ্যুতিক লাইনের ওভার হেডগুলো সরানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে।’ 

জানা গেছে, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মিত হচ্ছে নগরীর লালখান বাজার থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত বিদ্যমান সড়কের ওপর দিয়ে। দক্ষিণ প্রান্ত থেকে এ কাজ এগিয়ে আসছে উত্তরের দিকে, যা এসে থামবে নগরের লালখান বাজার এলাকায়। যদিও লালখান বাজারের পাহাড় রক্ষার ইস্যুতে চসিকের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়েছে সিডিএ। চসিকের পক্ষে মাঠে নেমেছে একদল পরিবেশকর্মীও। 

প্রসঙ্গত, চট্টগ্রাম নগরীর যানজট নিরসনে ২০১৭ সালের ১১ জুলাই ৩ হাজার ২৫০ কোটি ৮৩ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদন পায়। অনুমোদনের দেড় বছর পর ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ প্রকল্পটির পিলার পাইলিং কাজের উদ্বোধন করেন। তখন ২০২০ সালের মধ্যেই প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও সাড়ে তিন কিলোমিটার অংশের অ্যালাইনমেন্ট নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের সঙ্গে জটিলতা তৈরি হওয়ায় তা সম্ভব হয়নি। পরে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। প্রকল্পটির নির্মাণকাজে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হচ্ছে মেসার্স ম্যাক্স-র্যানকেন জয়েন্ট ভেনচার।

-সিভয়েস/টিএম/এমএম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়