Cvoice24.com

শেষ ওভারে হাসান ম্যাজিকে বাংলাদেশের সিরিজ জয়

ক্রীড়া ডেস্ক

প্রকাশিত: ১০:০০, ১৫ মে ২০২৩
শেষ ওভারে হাসান ম্যাজিকে বাংলাদেশের সিরিজ জয়

শেষ ওভারে আয়ারল্যান্ডের দরকার ছিল ১০ রান। ঠান্ডা মাথায় বল করে শেষ ভেল্কিটা দেখান হাসান মাহমুদ। প্রথম বলটা হাসান দিয়েছিলেন স্লোয়ার। প্যাডেল সুইপ করতে গিয়ে স্টাম্প হারান মার্ক এডায়ার (১০ বলে ২০)। আগের ওভারে মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরীকে একটি চার ও ছক্কা হাঁকিয়ে ম্যাচ অনেকটাই হাতে নিয়ে এসেছিলেন এই এডায়ার।

তৃতীয় বলে হাসানের শিকার অ্যান্ডি ম্যাকব্রিন (৪)। এবার শর্ট থার্ডম্যানে দারুণ এক ক্যাচ মৃত্যুঞ্জয়ের। চতুর্থ বলে ১ আর পঞ্চম বলে ২ দেন হাসান। প্রথম ৫ বলে মাত্র ৪ রান দিয়ে ২টি উইকেট তুলে নেন তরুণ এই পেসার। 

শেষ বলে আয়ারল্যান্ডের দরকার ছক্কা। পিনপতন নীরবতা তখন স্টেডিয়ামে। হাসান দেন দুর্দান্ত এক ইয়র্কার। বল গিয়ে সরাসরি আঘাত করে উইল ইয়ংয়ের প্যাডে। রান হয়নি। ততক্ষণে উল্লাসে ফেটে পড়েছে গ্যালারিতে থাকা বাংলাদেশি সমর্থকরা। উল্লাস বাংলাদেশ শিবিরে। 

যে ম্যাচে হার প্রায় নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল, সে ম্যাচে ৫ রানের জয় তুলে ২-০ ব্যবধানে সিরিজও জিতে নিয়েছে তামিম ইকবালের দল। প্রথম ম্যাচটি বৃষ্টির কারণে পরিত্যক্ত হয়েছিল।

এর আগে আইরিশদের সামনে লক্ষ্য ছিল ২৭৫ রানের। ৪১ ওভার শেষে ৩ উইকেটেই ২২৩ রান তুলে ফেলে স্বাগতিকরা। ৫৪ বলে দরকার ৫২, হাতে ৭টি উইকেট। বাংলাদেশের সামনে তখন নিশ্চিত হার।

এমন সময়ে বাজি ধরেন তামিম ইকবাল। টাইগার অধিনায়ক আক্রমণে আনেন অকেশনাল স্পিনার নাজমুল হোসেন শান্তকে। শান্ত নিজের প্রথম ওভারেই উইকেট এনে দেন অধিনায়ককে। সেট ব্যাটার হ্যারি টেক্টরকে (৪৮ বলে ৪৫) আউট করেন অফস্পিনে। এরপরই ভোজবাজির মতো পাল্টে যায় ম্যাচ। হারের মুখ থেকে অবিশ্বাস্য জয়। সেটাও আবার শেষ বলে।

মাঝারি লক্ষ্যে খেলতে নামা আয়ারল্যান্ড ইনিংসের শুরু থেকেই রান তুলতে হাঁসফাঁস করেছে। তবে উইকেটের দেখা পেতে ইনিংসের ষষ্ঠ ওভার পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছে বাংলাদেশকে। মুস্তাফিজের ফুল লেন্থের ডেলিভারিতে স্টিফেন ডোহানি উইকেটের পেছনে লিটন দাসকে ক্যাচ দিয়ে আউট হয়েছেন। 

মাত্র ১৭ রানে প্রথম উইকেটের পতনের পর দ্বিতীয় উইকেটে শতরানের জুটি গড়েছেন দুই অভিজ্ঞ ব্যাটার। পল স্টার্লিং ও অ্যান্ড্রু বালবির্নি। বাংলাদেশের বোলারদের কোনো সুযোগই দেননি তারা। মাত্র ৫৮ বলে ক্যারিয়ারের ১৪তম ওয়ানডে হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন স্টার্লিং। খানিক বাদে ৭১ বলে হাফ সেঞ্চুরি করেছেন বালবির্নি। হাফ সেঞ্চুরির পর ইবাদত হোসেনের বলে ডিপ অঞ্চলে উড়িয়ে মারতে গিয়ে রনি তালুকদারের হাতে সহজ ক্যাচ দিয়ে আউট হন বালবির্নি। এর ফলে শেষ হয় তার ৫৩ রানের ইনিংস।

হাফ সেঞ্চুরির পর আরেক ব্যাটার স্টার্লিংকেও বেশিক্ষণ টিকতে দেননি মেহেদী হাসান মিরাজ। অফ স্টাম্পের বাইরের বল টেনে খেলতে গিয়ে থার্ড ম্যান অঞ্চলে মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরীতে ক্যাচ দিয়ে আউট হন তিনি। এরপর অবশ্য লরকান টাকার ও হ্যারি টেক্টর মিলে আয়ারল্যান্ডের ইনিংস টানেন। এই দুজনের অর্ধশতরানের জুটিতেই দলীয় দুইশো পেরিয়ে যায় আইরিশরা।

পরপর দুই ওভারে নাজমুল হোসেন শান্ত ও মুস্তাফিজুর রহমানের জোড়া আঘাতে আবারও ম্যাচে ফিরেছে বাংলাদেশ। উইকেটে জমে যাওয়া টেক্টর ও টাকারের জুটি ভাঙলে তামিম দারস্থ হন অনিয়মিত বোলার শান্তর। শান্তর বলে পুল করতে চেয়েছিলে টেক্টর। কিন্তু ব্যাটে-বলে না হলে তা ধরে পড়ে ওয়াইড লং অনে লিটনের হাতে।

পরের ওভারে কার্টিস ক্যাম্ফার মুস্তাফিজের বলে মিড অফে ক্যাচ দেন তামিম ইকবালের হাতে। এরপর জর্জ ডকরেলকেও আউট করেছেন মুস্তাফিজ। একপ্রান্ত আগলে রেখে টাকার অবশ্য ৫১ বলে হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন টাকার। নিজের শেষ ওভারে হাফ সেঞ্চুরিয়ান টাকারকে বোল্ড করে ফেরান মুস্তাফিজ।

৪৯তম ওভারে মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরীর ওপর চড়াও হন আইরিশ ব্যাটার মার্ক অ্যাডায়ার। সেই ওভারের চতুর্থ বলে ব্যাকওয়ার্ড স্কয়ার লেগে অ্যাডায়ারের ক্যাচ ফেলেন মেহেদী হাসান মিরাজ। পরের ওভারে বোলিংয়ে এসে অবশ্য অ্যাডায়ারকে বোল্ড করে বাংলাদেশের জয়ের আশা বাঁচিয়ে রাখেন হাসান মাহমুদ।

তৃতীয় বলে হাসানের স্লোয়ার ডেলিভারিতে কাট করতে চেয়েছিলেন অ্যান্ডি ম্যাকব্রেইন। তবে শর্ট থার্ড ম্যান অঞ্চলে ডাইভ দিয়ে দারুণ ক্যাচ নিয়েছেন মৃত্যুঞ্জয়। শেষ বলে ৬ রানের সমীকরণ ছিল। তবে এক রান নিতে পারেন কেবল ইয়ং। ফলে বাংলাদেশ ম্যাচ জিতে নেয় ৪ রানে। সিরিজের প্রথম ম্যাচটি বৃষ্টিতে ভেসে গেলেও। দ্বিতীয় ম্যাচে বাংলাদেশ জয় পেয়েছিল ৩ উইকেটে। দ্বিতীয় ওয়ানডেতে জয়ের ফলে বাংলাদেশ সিরিজ জিতে নিয়েছে ২-০ ব্যবধানে।

এর আগে একাদশে তিন পরিবর্তন নিয়ে খেলতে নামে বাংলাদেশ। এই ম্যাচ অভিষেক হয় ব্যাটার রনি তালুকদার ও পেসার মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরীর। অভিষিক্ত ম্যাচে তামিমের সঙ্গে ওপেনিংয়ে ব্যাট করতে নামেন রনি। তবে অভিষেক রাঙাতে পারলেন না এই ব্যাটার। শুরু থেকেই আইরিশ পেসারদের তোপের মুখে ধুঁকতে থাকে রনি। দলীয় ১৮ রানে মার্ক অ্যাডায়ারের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান তিনি। তার আগে ১৪ বলে মাত্র ৪ রান করেন রনি। ।

এরপর  ক্রিজে আসেন আগের ম্যাচের সেঞ্চুরি করা নাজমুল হাসান শান্ত। শান্তকে সঙ্গে নিয়ে শুরুর ধাক্কা সামাল দেন তামিম। কিছুটা মারমুখী ব্যাটিং করতে থাকেন শান্ত। তবে দলীয় ৬৭ রানে আউট হন শান্ত। ৩২ বলে ৩৫ রান করে সাজঘরে ফিরে যান তিনি।

শান্তর বিদায়ের পর ক্রিজে আসেন লিটন দাস। লিটনকে সঙ্গে নিয়ে রানের চাকা সচল রাখেন তামিম। সাবলীল ব্যাটিং করতে থাকেন লিটন। তবে ইনিংস বড় করতে ব্যর্থ হন তিনি। দলীয় ১৩৭ রানে ৩৯ বলে ৩৫ রান করে সাজঘরে ফিরে যান লিটন। তবে অন্যপ্রান্তে কিছুটা দেখেশুনে খেলে ৬১ বলে ফিফটি তুলে নেন তামিম।

তামিমের ফিফটির পর পরই সাজঘরে ফিরে যান তাওহীদ হৃদয়। দলীয় ১৫৯ রানে ১৬ বলে ১৩ রান করে ফিরে যান তিনি। হৃদয়ের বিদায়ের পর ক্রিজে আসেন মুশফিকুর রহিম। মুশফিককে সঙ্গে নিয়ে ব্যাট করতে থাকেন তামিম। তবে নিজের ইনিংস বড় করতে পারেননি তিনি।

দলীয় ১৮৬ রানে ৮২ বলে ৬৯ রান করে আউট হন তামিম। ক্রিজে আসেন মেহেদী মিরাজ। তাকে সঙ্গে নিয়ে ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে ৭৫ রান সংগ্রহ করেন মুশফিক। তবে দলীয় ২৬১ রানে ৫৪ বলে ৪৫ রান করে আউট হন মুশফিক।

মুশফিকের বিদায়ের পর দ্রুতই সাজঘরে ফিরে যান মিরাজও। দলীয় ২৬৫ রানে ৩৯ বলে ৩৫ করেন তিনি। এরপর দ্রুতই আরও তিন উইকেট হারায় টাইগাররা। শেষ পর্যন্ত নির্ধারিত ৫০ ওভারে ২৭৪ রানে অলআউট হয় বাংলাদেশ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:

বাংলাদেশ-  ২৭৪/১০ (৪৮.৫ ওভার) (শান্ত ৩৫, তামিম ৬৯, রনি ৪, লিটন ৩৫, হৃদয় ১৩, মুশফিক ৪৫, মিরাজ ৩৭; অ্যাডায়ার ৪/৪০)

আয়ারল্যান্ড- ২৭০/৯ (৫০ ওভার) (স্টার্লিং ৬০, বালবির্নি ৫৩, টেক্টর ৪৫, টাকার ৫০, অ্যাডায়ার ২০; ইবাদত ১/৫৩, মুস্তাফিজ ৪/৪৪, হাসান ২/৪৪)

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়