এমভি আবদুল্লাহ উদ্ধারে অভিযানের প্রস্তুতি!

সিভয়েস২৪ প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২০:১৫, ১৮ মার্চ ২০২৪
এমভি আবদুল্লাহ উদ্ধারে অভিযানের প্রস্তুতি!

মোজাম্বিক থেকে আবুধাবি যাওয়ার পথে ভারত মহাসাগরে সোমালিয়ান জলদস্যুদের কবলে পড়া বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজ ‘এমভি আবদুল্লাহ’ উদ্ধারে সোমালি পুলিশ এবং আন্তর্জাতিক নৌবাহিনী অভিযানের প্রস্তুতি নিচ্ছে। সোমালিয়ার পান্টল্যান্ড অঞ্চলের পুলিশের উদ্বৃতি দিয়ে এমনটাই জানিয়েছে আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা রয়টার্স। যদিও এর আগে ইউরোপীয় ইউনিয়ন নেভাল ফোর্সের অভিযানের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছিল জাহাজটির মালিকপক্ষ।

রয়টার্সের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারতীয় কমান্ডোরা জলদস্যুদের নিয়ন্ত্রণে থাকা মাল্টার পতাকাবাহী জাহাজ এমভি রুয়েনে অভিযান চালিয়ে ১৭ ক্রুকে অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করার পর এমভি আবদুল্লাহতে অভিযানের এই পরিকল্পনা করা হয়েছে। তবে, সোমালিয়ার পান্টল্যান্ড অঞ্চলের পুলিশ এখন যে আন্তর্জাতিক নৌবাহিনীর অভিযানের কথা বলছে, তাতে কোন কোন দেশের বাহিনী থাকছে, তা স্পষ্ট নয়। এ বিষয়ে তারা (রয়টার্স) ভারতীয় নৌবাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ করলেও তাৎক্ষণিকভাবে তাদের কোনো জবাব পায়নি।

এর আগে গত রবিবার (২৭ মার্চ) এমভি আবদুল্লাহ দখল করে রাখা জলদস্যুদের জন্য ‘খাত’ নামের এক ধরনের মাদক নিয়ে যাওয়ার সময় একটি নৌযান জব্দ করার কথা জানিয়েছিল পান্টল্যান্ড পুলিশ।

এ প্রসঙ্গে পান্টল্যান্ডের নৌ পরিবহনমন্ত্রী আহমেদ ইয়াসিন সালাহ একটি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘এমভি রুয়েনের মত আবদুল্লাহকেও জলদস্যুর কবল থেকে মুক্ত করতে অভিযানের পরিকল্পনা চলছে। পান্টল্যান্ডের উপকূলকে জাহাজ দখল করে দস্যুবৃত্তির কাজে ব্যবহারের সুযোগ আমরা দিতে পারি না। আমাদের বন্ধুদের আমরা বলেছি, জলদস্যুদের তৎপরতা বৃদ্ধির কোনো ধরনের সুযোগ দেওয়া উচিত হবে না।’

গত বৃহস্পতিবার ভারতীয় নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ আইএনএস তর্কশ সকালে এমভি আবদুল্লাহর কাছাকাছি পৌঁছেছিল। কিন্তু নাবিকরা সশস্ত্র জলদস্যুদের হাতে জিম্মি থাকায় ওই সময় অভিযান চালানো থেকে বিরত থাকেন ভারতীয় নৌ সেনারা। এরপর শনিবার সোমালি উপকূলে ৪০ ঘণ্টার শ্বাসরুদ্ধকর অভিযানে এমভি রুয়েনকে জলদস্যুদের কবল থেকে মুক্ত করেন ভারতীয় নৌবাহিনীর কমান্ডোরা। জাহাজটির ১৭ ক্রুকে অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করার পাশাপাশি জাহাজে থাকা ৩৫ জলদস্যুর সবাইকে তারা আটক করেন। 

ইউরোপীয় বাহিনী আবদুল্লাহর জিম্মি নাবিকদের উদ্ধারে অভিযান চালানোর প্রস্তাব দিলেও জাহাজের মালিকপক্ষ তাতে সায় দেয়নি। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্স ইউনিটের সচিব খুরশেদ আলম দুদিন আগে জানিয়েছিলেন, নাবিকদের জীবনের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করেই অভিযানের ওই প্রস্তাবে সরকার ও মালিকপক্ষ রাজি হয়নি।

উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার (১২ মার্চ) বাংলাদেশ সময় বেলা একটার দিকে ‘এমভি আবদুল্লাহ’ ভারত মহাসাগরে সোমালিয়ান জলদস্যুদের কবলে পড়ে। সশস্ত্র জলদস্যুরা মাত্র ১৫ মিনিটে ২৩ নাবিককে জিম্মি করে জাহাজটি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয়। এর পর সোমালিয়া উপকূলের দিকে যাত্রা শুরু করে। তিন মাস আগে আরব সাগরে মাল্টার পতাকাবাহী ওই জাহাজ দখল করে নেওয়ার পর নাবিকদের জিম্মি করে জলদস্যুরা। এরপর জাহাজটি ব্যবহার করে বিভিন্ন নৌযানে তারা হামলা চালাতে থাকে। বাংলাদেশের জাহাজ এমভি আব্দুল্লাহকে ছিনতাইয়ের সময়ও জলদস্যুরা এমভি রুয়েনকে ব্যবহার করে থাকতে পারে বলে ইউরোপীয় ইউনিয়ন নেভাল ফোর্সের ধারণা। 

গত বৃহস্পতিবার দুপুরে জাহাজটি সোমালিয়ান কোস্ট থেকে ৭ মাইল দূরে নোঙর করা হয়েছিল। শুক্রবার বিকেল ৪টার দিকে আগের অবস্থান থেকে আরো ৪০ মাইল দূরে নোঙর করে জলদস্যুরা। গতকাল (রবিবার) রাতে আবদুল্লাহর অবস্থান ছিল সোমালিয়া উপকূলের গারাকাড এলাকা থেকে উত্তর দিকে ৪৫-৫০ মাইল দূরে; ওই স্থানটি গদবজিরান উপকূল থেকে ৪ মাইল দূরে। গত ৭২ ঘণ্টা ধরে জাহাজে থাকা নাবিকদের সাথে যোগাযোগবিচ্ছিন্ন রয়েছে তাদের পরিবার। ফলে, ক্রমাগত উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বেড়েই চলেছে। জিম্মি করার ৬ দিন পার হলেও এখনো মুক্তিপণ চেয়ে যোগাযোগ করেনি জলদস্যুরা।

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়