Cvoice24.com

করোনার মধ্যেও কওমি মাদ্রাসা খুলতে চায় হেফাজত

সিভয়েস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৮:২৫, ১১ এপ্রিল ২০২১
করোনার মধ্যেও কওমি মাদ্রাসা খুলতে চায় হেফাজত

হাটহাজারী মাদ্রাসায় এক জরুরী বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিং করছেন হেফাজতের আমির।

ভয়াবহ আকারে সংক্রমিত হচ্ছে করোনা। দিনদিন রেকর্ড ভাঙছে করোনার আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা। সরকার গত ৫ এপ্রিল থেকে কঠোর বিধি নিষেধ দিয়ে দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও বন্ধ ঘোষণা করে। সামনে আসছে কঠোর লকডাউন। এমন পরিস্থিতিতেও দেশের সকল কওমি মাদ্রাসা এতিমখানা, মক্তব ও হিফজখানা বন্ধে সরকারি নির্দেশ প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। করোনার অজুহাতে দেশের ঐতিহ্যবাহী কওমী মাদরাসা বন্ধ করার ‘ষড়যন্ত্র’ দেশের তৌহিদী জনতা মেনে নেবে না—এমন হুশিয়ারিও আসে হেফাজতের শীর্ষ নেতৃত্ব থেকে। 

শনিবার দুপুরে হেফাজতে ইসলামের শীর্ষ ৩৫ আলেম হাটহাজারী মাদ্রাসায় এক জরুরী বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে এসব দাবি জানান সংগঠনের আমির হাফেজ জুনায়েদ বাবুনগরী। 

যদিও গত ৮ এপ্রিল শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল জানিয়েছিলেন, নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা রাখা হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মন্ত্রী পরিষদে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যাতে বন্ধ রাখা হয়। এরই মধ্যে এ বিষয়ে পুলিশ প্রশাসনকে নির্দশেনা দেওয়া হয়েছে। আজ (বৃহস্পতিবার) থেকেই বিষয়টি মনিটরিং করা হবে। যারাই নির্দেশনা না মেনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা রাখবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।  

এসময় কওমী শিক্ষার সর্বোচ্চ ডিগ্রীকে সরকার সম্মান দিয়ে মাস্টার্সের সমমর্যাদার বিষয়টি পুনরায় বিবেচনা করে দেখার হুশিয়ারি দেন নওফেল।   

এদিকে হেফাজতের জরুরী সভা শেষে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘করোনার অজুহাতে দেশের ঐতিহ্যবাহী কওমী মাদরাসা বন্ধ করার ষড়যন্ত্র দেশের তৌহিদী জনতা মেনে নেবে না। করোনা মহমারী থেকে মুক্তির জন্য মহান আল্লাহর দরবারে কুরআনের তিলাওয়াত, যিকির, তাসবী পাঠ ও দুআ ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। সুতরাং মহান আল্লাহর সাহায্য পাওয়ার লক্ষে কুরআন ও হাদীসের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো চালু রাখ সরকারেরেই নৈতিক কর্তব্য। তাই পবিত্র মাহে রমযানে হিফয খানা, নূরানী, মক্তব চালু রাখতে হবে। মসজিদে সুন্নাহ মুতাবেক নামায তারাবীহ, ইতিকাফ চলবে। লকডাউনের নামে শরীয়ত বিরোধী কোনো বিধি-নিষেধ আরোপ করা যাবে না। যথা নিয়মে তাফসীর, দাওয়াত ও তালীমের কাজ চালু রাখতে হবে।’

সভায় দেশের সকল মাদরাসা ও মসজিদে করোনা মহামারী থেকে মুক্তি ও সমকালীন সঙ্কট থেকে উত্তরনের জন্য কুনূতে নাযেলার আমল চালু করার জন্য আহ্বান জানানো হয়।

হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা আল্লামা শাহ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী’র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় উপস্থিত ছিলেন- হেফাজতের আমির আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী, নায়েবে আমির মাওলানা হাফেয তাজুল ইসলাম (পীর সাহেব ফিরোজশাহ), মাওলানা আব্দুল আওয়াল, মাওলানা মুহাম্মদ ইয়াহইয়া, মাওলানা সালাহ উদ্দিন নানুপুরী, মাওলানা জুনায়েদ আল-হাবীব, মাওলানা শোআইব জমীরী, মাওলানা ওমর মেখলী, মাওলানা নাসির উদ্দিন মুনির, মাওলানা খুরশিদ আলম কাসেমী, মাওলানা জসিম উদ্দিন, মাওলানা মুনির হুসাইন কাসেমী, মুফতী সাখাওয়াত হুসাইন রাজী, মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী, মাওলানা মীর মুহাম্মদ ইদরীস, মাওলানা জাকারিয়া নোমান ফয়জী, ড. নূরুল আবসার আজহারী, মাওলানা আতাউল্লাহ আমিন. মাওলানা ফয়সাল আহমদ, মাওলানা ইলিয়াস হামিদী , জনাব মুহাম্মদ আহসান উল্লাহ প্রমুখ।

হেফাজতের পক্ষ থেকে আরও বলা হয়, গত ২৬মার্চ হেফাজতের কোনো কর্মসুচি ছিলো না। কিন্তু ঢাকা বায়তুল মোকাররম মসজিদে মুসল্লিদের উপর পরিকল্পিতভাবে পুলিশ ও সরকার দলীয় হেলমেট বাহিনী কর্তৃক আক্রমনের প্রতিবাদে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিক্ষুদ্ধ জনতা মিছিল বের করে। হাটহাজারী ও বি-বাড়ীয়ায় মিছিল বের হলে পুলিশ বিনা উস্কানিতে গুলি করে পাঁচ জনকে শহিদ করে। এ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে হেফাজতে ইসলাম ২৭মার্চ বিক্ষোভ  ও ২৮ই মার্চ শান্তিপুর্ণ হরতালের কর্মসুচি ঘোষণা করে। কিন্তু হেফাজতের শান্তিপূর্ণ কর্মসুচিতে ২১ জনকে গুলি করে হত্যা করে পুলিশ ও সরকার দলীয় ক্যাডার বাহিনী।

‘আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই, হেফাজত কোনো তাণ্ডব চালায়নি; বরং ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও শ্রমিক লীগের সন্ত্রাসীরদের দিয়ে গুপ্ত হামলার তাণ্ডব চালিয়ে রাজনৈতিকভাবে এখন হেফাজতকে দোষারোপ করা হচ্ছে। সরকারের লোকজন এবং কতিপয় ইসলাম বিদ্বেষী মিডিয়া এখন আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি নিয়ে মিথ্যাচার করছেন।’

সভায় আরো বলা হয়, ‘আমরা জানতে চাই, আমাদের শান্তিপূর্ণ হরতাল চলাকালীন কারা তাণ্ডব চালিয়েছিল? কারা সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটিয়েছে, নিশ্চয়ই সেখানকার সিসি ক্যামেরাগুলোতে ভিডিও ফুটেজ রয়েছে। ভিডিও ফুটেজ দেখে প্রকৃত অপরাধীদের শাস্তির ব্যবস্থা করুন। কিন্তু নিরিহ আলেম, ওলামা, মাদরাসা ছাত্র ও তৌহিদী জনতাকে হয়রানী করবেন না। অবিলম্বে গণগ্রেফতার বন্ধ করুন। মিথ্যা ও হয়রানী মুলক মামলা প্রত্যাহার করুন। যাদেরকে গ্রেফতার করা হয়েছে অবিলম্ভে নিঃশর্তে মুক্তি দিন।’

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়