Cvoice24.com

নকশা জটিলতার ফাঁদে কালুরঘাট সেতু, মন্ত্রী আসবেন চট্টগ্রামে

সিভয়েস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৭:১৩, ২ ফেব্রুয়ারি ২০২১
নকশা জটিলতার ফাঁদে কালুরঘাট সেতু, মন্ত্রী আসবেন চট্টগ্রামে

সেতুর উচ্চতা বাড়ানোর ফলে আগের নকশা ‘রিজেক্ট’ করা হলেও এখনও চূড়ান্ত হয়নি নতুন নকশা।

হচ্ছে, হবে—এ আশ্বাসেই বছরের পর বছর পার। এমপি—মন্ত্রীর শতবারের আশ্বাস যেন এখন মিথ্যা বিশ্বাস! একেক সময় একেক জটিলতায় পিছিয়ে যাচ্ছে কালুরঘাটে বহুল প্রত্যাশিত নতুন সেতুর কাজ। 

চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর উপর নতুন কালুরঘাট সেতু নির্মাণের কাজ শুরু করা নিয়ে জল কম ঘোলা হয়নি। এবার সেই ঘোলা জল আরও ঘোলা হলো নতুন করে নকশা জটিলতায়। সোমবার (১ ফেব্রুয়ারি) ঢাকা রেলভবনে নতুন সেতুর জন্য অর্থায়নকারী দক্ষিণ কোরিয়ার সংস্থটির সাথে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে রেলওয়ের নীতি নির্ধারকদের। সেখানে চট্টগ্রামের রেলওয়ে সিআরবি ভবন থেকে প্রকৌশলীরাও যোগ দিয়েছিলেন। 

বৈঠকে অংশগ্রহণকারী কর্মকর্তারা জানান, সেতুর উচ্চতা বাড়ানোর ফলে আগের নকশা ‘রিজেক্ট’ করতে হয়েছে। কিন্তু এখনও চূড়ান্ত হয়নি নতুন নকশা। রেলওয়ের এক শীর্ষ কর্মকর্তা জানিয়েছেন- এ সেতুর সম্ভাব্যতা পরিদর্শনের জন্য চলতি মাসের শেষে অথবা মার্চের শুরুর দিকে ফের চট্টগ্রামে আসতে পারেন রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন। অথচ গেল বছর অক্টোবরে রেলপথ মন্ত্রী সুজন পুরান সেতুর ওপর দাঁড়িয়ে বলে গিয়েছিলেন, নতুন বছর অর্থাৎ ২০২০ সালের প্রথমভাগে নতুন সেতু নির্মাণের কাজ শুরু হতে পারে।

অন্যদিকে ২০১৮ সালে কালুরঘাটে ৭ দশমিক ২ মিটার উচ্চতার একটি নতুন সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয় রেলওয়ে। কিন্তু তখনই প্রস্তাবিত সেতুটির উচ্চতা নিয়ে আপত্তি তোলে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কতৃপক্ষ(বিআইডব্লিওটিএ)। ওই উচ্চতায় কর্ণফুলীর তীর ঘেঁষা সেতুটি নির্মাণ হলে সেতুর নীচ দিয়ে নৌ-চলাচল বাধাগ্রস্থ হবে বলে দাবি করেন তারা। পরে রেলওয়ে ও বিআইডব্লিওটিএ নিজেদের অবস্থানে অনড় থাকলে সেখানে বেশ কিছুদিন থমকে ছিল নতুন সেতু নির্মাণের কাজ। 

পরে গেল বছরের অক্টোবরে সংস্থা দু’টি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দ্বারস্থ হলে তার নির্দেশনায় কেটে যায় উচ্চতা সংক্রান্ত জটিলতা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্দেশ দেন ১২.২ মিটার উচ্চতায় এ সেতু নির্মাণ করার। তখনই রেলওয়ের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছিল- ‘নকশা অনুযায়ী এ সেতুর উচ্চতা ধরা হয়েছে ৭ দশমিক ২ মিটার। যা নকশা অপরিবর্তিত রেখ  ৯ মিটার পর্যন্ত বাড়ানো যাবে। বিআইডব্লিউটিএ'র প্রস্তাবিত ১২ দশমিক ২ মিটার সেতুর উচ্চতা করতে গেলে বর্তমান প্রস্তুতি অনুযায়ী এ সেতু নির্মাণ করা সম্ভব হবে না। সেই সাথে নতুন সেতু নির্মাণের ব্যয় বেড়ে যাবে প্রায় ৪ গুণ বেশি। সবমিলিয়ে নতুন সেতুর ব্যয় দাঁড়াতে পারে পাঁচ থেকে ছয় হাজার কোটি টাকা। এখন প্রধানমন্ত্রীর নতুন নির্দেশনার পর নতুন করে দাতা সংস্থার সাথে বৈঠক, নতুন নকশা প্রণয়ন ও ভূমি অধিগ্রহণের সব সিদ্ধান্তই নতুন করে করতে হবে।’

তারই ধারাবাহিকতায় সোমবারের এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হলো কোরিয়ান দাতা সংস্থা ও রেলওয়ের মধ্যে। রেলওয়ে সূত্র জানায়, উচ্চতা বাড়ানোর সিদ্ধান্তে বেড়েছে সম্ভাব্য ব্যয়। এ সেতু নির্মাণে ব্যয় হতে পারে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা। তাই বর্ধিত ব্যয়ের অর্থায়ন কিভাবে হবে তা জানতে চেয়ে বাংলাদেশ সরকারের কাছে চিঠি দিয়েছিল কোরিয়ান দাতা সংস্থাটি। 

এ চিঠির জবাবে বলা হয়েছিল, বর্ধিত টাকার অর্ধেক (প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা) সরকার এবং অর্ধেক (দেড় হাজার কোটি টাকা) কোরিয়ান সংস্থাটি দিবে।’ এর আগের নকশা অনুযায়ী সেতুটির সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছিল প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা।

রেলওয়ের পরিচালক (প্রকিউরমেন্ট) মো. গোলাম মোস্তফা সিভয়েসকে বলেন, ‘উচ্চতার কারণে ব্যয় বাড়ছে। যেটা আগে ছিল প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা। এখন হচ্ছে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা।’ তাছাড়া নতুন উচ্চতায় সেতুর নির্মাণ করতে হলে ভূমি অধিগ্রহণসহ নানা বিষয় সামনে আসছে বলে জানান তিনি। 

রেলওয়ে প্রকৌশলীরা জানান, নতুন উচ্চতা অনুযায়ী সেতুটি নির্মাণ করতে হলে সেতুর দু’পাশে কিছুটা দূর থেকে রেললাইন–সেতুর ব্যল্যান্স মিলিয়ে আনতে হবে। 

রেলওয়ের সংশ্লিষ্টরা বলছেল, সরকারের অন্যতম অগ্রাধিকার প্রকল্প দোহাজারী-কক্সবাজার-ঘুনধুম রেলপথ নির্মাণ। রাজধানী ঢাকা এবং বন্দরনগরী চট্টগ্রামের সঙ্গে সরাসরি রেল যোগাযোগ স্থাপন হবে চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত। পরিকল্পনা অনুযায়ী যার সংযুক্তি পথ রয়েছে  কালুরঘাট সেতুর সাথে রয়েছে। তাই  ‘আগে-পরে’ সবকিছু ভেবে চিন্তে কাজ করছে রেলওয়ে। 

এ বিষয়ে কথা বলতে চাইলে সরাসরি কোন কথা বলতে রাজি হয়নি রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী মো. সবুক্তগীন। বৈঠক সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন- ‘আমরা ঢাকায় এসেছি। এ মুহূর্তে আর বেশি কিছু বলতে পারছি না।’ 

সিভয়েসের এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘একটি রেলপথ নির্মাণ করতে হলে অনেক বিষয় আছে।’ ভূমি অধিগ্রহণ এবং কাজ শুরুর সিদ্ধান্তের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘নতুন নকশা প্রণয়নের বিষয়টি প্রসেসিংয়ে আছে। আশা করছি দ্রুত ভালো খবর দিতে পারবো।’

সিভয়েস/এপি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়