Cvoice24.com

কাজ শেষ না হতেই নালার স্ল্যাব দখল শুরু

সিভয়েস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২০:০৮, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২১
কাজ শেষ না হতেই নালার স্ল্যাব দখল শুরু

জলবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের কাজ শেষ না হতেই বেদখল হয়েছে অলিগলি জুড়ে গড়ে তোলা এসব স্ল্যাবের অধিকাংশ।

পুরো নগরজুড়ে একদিকে চলছে হাজার কোটি টাকার জলবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের কাজ। নগরের সংকুচিত ড্রেনগুলো নতুন সংযোজনে বাড়ানো হচ্ছে দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও গভীরতা। নতুন সুগভীর ড্রেনগুলোকে সুরক্ষিত রাখতে ইতোমধ্যে সেখানে বসানো হয়েছে যুথসই স্ল্যাবও। অন্যদিকে কোটি টাকার সেই জলবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের কাজ শেষ না হতেই বেদখল হয়েছে অলিগলি জুড়ে গড়ে তোলা এসব স্ল্যাবের অধিকাংশ।

নগরের বাকলিয়া, চকবাজার, দুই নম্বর গেইট, বউবাজারসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, এসব স্ল্যাবের ওপর অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে দোকান পাটসহ নানা স্থাপনা। কোথাও বসেছে ভ্রম্যমাণ দোকান আবার কোথাও ভ্যান গাড়ি নিয়ে সবজি-পণ্য বিক্রেতারা। কোথাও সেই স্ল্যাবকে ঢাল বানিয়ে পেটানো হচ্ছে লোহার কলকব্জা। 

এতে করে এসব স্ল্যাবের স্থায়ীত্ব কমে যাওয়ার শঙ্কা প্রকাশ করেছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, বহু কাঠখড় পুড়িয়ে গড়ে তোলা এসব স্ল্যাব ও ড্রেনের বর্ধিত অংশ সঠিক মেনটেইনেন্স না হলে পথের সুফলের বদলে অচিরেই ভোগান্তি সৃষ্টি হতে পারে। 

ভরা বর্ষায় বৃষ্টির আঁচ না পেতেই পানিতে ডুবে যায় পুরো চট্টগ্রাম নগর। বৃষ্টি আর জোয়ারের পানি মিলেমিশে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি করে পুরো নগরজুড়ে। নগরবাসীর দীর্ঘদিনের আক্ষেপ— সংকীর্ণ ড্রেনগুলো ভরাট হয়ে জলজট সৃষ্টি হচ্ছে নগরে। নালা নর্দমা পরিস্কার না থাকার ফলে এমন দুর্ভোগের সৃষ্টি বলেও দীর্ঘদিনের অভিযোগ তাদের।

এদিকে দীর্ঘদিনের এসব বেহাল দশার চিত্রের নিখুঁত ম্যাপে নগরের ‘ওয়াটার মডেল’ করে জলজট সৃষ্টি হওয়ার কারণগুলো অনুসন্ধান করেছে প্রকল্পের দায়িত্ব প্রাপ্ত সংস্থা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন। তাদের রিপোর্ট অনুযায়ী, নগরে ২২টি স্পটে সংকীর্ণ ড্রেনের কারণে জলবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। এরমধ্যে রয়েছে  নাসিরাবাদ, ষোলশহর ২ নম্বর গেইট, মুরাদপুর, বহদ্দারহাট, শুলকবহর, বাদুরতলা, প্রবর্তক মোড়, কাতালগঞ্জ, কাপাসগোলা, চকবাজার, রাহাত্তারপুল, খাজা রোড, বাকলিয়া, শান্তিবাগ, ওয়াসা, চান্দগাঁও, আগ্রাবাদ, অক্সিজেন, হালিশহর, আছাদগঞ্জ, মিয়াখান নগর, চাক্তাই-খাতুনগঞ্জসহ ২২টি স্পট।

প্রকল্প সূত্র জানায়, এ প্রকল্পের আওতায় নগরজুড়ে নতুন ড্রেন গড়ে তোলা হয়েছে ১০ দশমিক ৭৭ কিলোমিটার। যার কাজ ইতিমধ্যে শতভাগ শেষ হয়েছে। অন্যদিকে রাস্তার পাশে পুরানো ড্রেনের সাথে সংযোজিত হয়েছে ১৫ দশমিক ৫০ কিলোমিটার ড্রেন। সবমিলিয়ে এ প্রকল্পের আওতায় ড্রেন করা হয়েছে প্রায় ২৭ কিলোমিটার। এলাকাভেদে এসব ড্রেনের দৈর্ঘ্য ৪ থেকে ১২ ফুট এবং গভীরতা ৭ থেকে ১২ ফুট। সুগভীর এসব ড্রেনে দুর্ঘটনা এড়াতে বেশ পাকাপোক্ত স্ল্যাবও নির্মিত হয়েছে। সেই হিসাবে এ প্রকল্পের আওতায় নগরজুড়ে প্রায় ২৭ কিলোমিটারের মত ড্রেন গড়ে তোলা হয়েছে ।

নগরের আগ্রাবাদ এলাকায় এভাবেই নালার ওপর বসানো স্ল্যাব দখল হয়ে যাচ্ছে। ছবি : সিভয়েস। তবে ড্রেনের কাজ শেষে এসব স্ল্যাব বেদখল হওয়ায় শঙ্কা প্রকাশ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। কদমতলী থেকে ডিটি রোডে চলাচল করা নাজিম নামের এক পথচারী বলেন, 'ড্রেনে যে স্ল্যাব বসানো হয়েছে তা ফুটপাত হিসেবে ব্যবহার করা যেতো। কিন্তু এগুলো রাস্তার পাশের দোকানদাররা দখল করে রাখে। এজন্য আমাদের রাস্তায় হাঁটতে হয়।'

প্রকল্পের পরিচালক সেনাবাহিনীর লে. কর্নেল শাহ আলী  সিভয়েসকে বলেন, ‘এলাকাভিত্তিক ওয়াটার মডেলিং করে ড্রেন গুলো নির্মাণ করা হয়েছে। কোন এলাকায় কি পরিমাণ পানি জমে বা কি পরিমাণ পানি যেতে হবে সেটা ভেবেই ড্রেন গুলো হয়েছে।’

এসব ড্রেন সিডিএকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘১৫ দশমিক ৫০ কিলোমিটারের যে ড্রেন আমরা শেষ করেছি, সেটা দু’মাস আগে সিডিএকে হস্তান্তরের জন্য আমরা দিয়েছি। ১০ দশমিক ৭৭ কিলোমিটার ড্রেনের কাজ শেষ। তাই এটাও দ্রুত বুঝিয়ে দিব।’

এসব মেইনটেন্স’র ব্যয় সংস্থাটির নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা চাইছি প্রকল্পের যে কাজ শেষ হয়েছে সেটা সিডিএকে বুঝিয়ে দিতে। কেননা মেনটেইনন্স ব্যয় আমাদের নেই। তাই সিডিএ বা সিটি করপোরেশন তাদের মত করে মেনটেইন করবে।’

এদিকে কোটি টাকার এ প্রকল্প ঘিরে এমনিতেই জল কম ঘোলা হয়নি। বহু কাঠখড় পুড়িয়ে চলছে প্রকল্পের কাজ। এক কথায় আর্থিক জটিলতা সহ বিভিন্ন সংকটে ধুঁকছে প্রকল্পটি। এমন অবস্থায় ড্রেনের উপর গড়ে তোলা স্ল্যাবগুলো রক্ষায় অনেকটা নির্বিকার ভূমিকায় সিডিএ। শুধু নির্মাণ বা পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পাশাপাশি সেগুলো নজরদারিতে রাখা প্রয়োজন মনে করেন বিশিষ্টজনরা।

পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক ড. আকতার মাহমুদ সিভয়েসকে বলেন, 'এ দখল ও উচ্ছেদ পুরো দেশের জন্যই একটা সমস্যা। চট্টগ্রামে এখন‌ অনেক কাজ হচ্ছে। এ কাজগুলো যারা করছেন, তারা কাজগুলো শেষ করে মাত্র মেনটেইন্সের দায়িত্ব যাদের উপর অর্পিত তাদের হস্তান্তর করা দরকার। নতুবা যে কাজগুলো হচ্ছে তা নিয়ে আবার দুর্ভোগ সৃষ্টি হতে পারে।'

নগরজুড়ে প্রায় ২৭ কিলোমিটর নালার ওপর স্ল্যাবগুলো সুরক্ষায় কোন ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি’না জানতে চাইলে সিডিএ’র প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস সিভয়েসকে বলেন, 'এ ধরনের অনিয়ম সম্পর্কে আমরাও অবগত হয়েছি। আমরা পরিকল্পনা অনুযায়ী যে প্রকল্প বাস্তবায়ন করছি, তার পাশাপাশি বাস্তবায়িত কাজগুলো মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা করছি।'

-সিভয়েস/এসবি/এপি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়