চট্টগ্রামের ২৩ ডিপো অনিয়মের আঁখড়া— প্রমাণ পেয়েছে ফায়ার সার্ভিস

সিভয়েস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২০:২৯, ১৮ জুন ২০২২
চট্টগ্রামের ২৩ ডিপো অনিয়মের আঁখড়া— প্রমাণ পেয়েছে ফায়ার সার্ভিস

সীতাকুণ্ডের বিএম ডিপো।

সীতাকুণ্ডের বিএম ডিপোতে ভয়াবহ বিস্ফোরণের পরও চট্টগ্রামের ২৩ ডিপোতে অনিয়মের ‘আঁখড়া’ খুঁজে পেয়েছে ফায়ার সার্ভিস।

বিএম ডিপোর ঘটনার পর চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় অবস্থিত ডিপোগুলো পরিদর্শন করছে সংস্থাটি। আর তাতেই উঠে আসছে অনিয়মের চিত্র। 

ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা বলছেন, সাতটি টিম মঙ্গলবার পর্যন্ত চট্টগ্রামের ২৩টি ডিপো পরিদর্শন করেছে। ডিপোগুলোতে অগ্নিনির্বাপণের অপর্যাপ্ত ব্যবস্থা, প্রশিক্ষিত লোকবলের অভাব, সরঞ্জাম সংকটসহ বিভিন্ন ধরনের অনিয়ম পাওয়া গেছে। অনিয়ম ও অসঙ্গতিগুলোর চূড়ান্ত প্রতিবেদন তৈরি করে ইতোমধ্যে ফায়ার সার্ভিসের ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।

ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রামে ২৫টি ডিপো রয়েছে। এরমধ্যে দুটি ডিপোর কার্যক্রম বর্তমানে বন্ধ রয়েছে। পরিদর্শন টিম বাকি ২৩টি ডিপোতে গেছেন। তারা সবগুলো ডিপোতেই অনিয়ম পেয়েছেন। কোন ডিপোতে পর্যাপ্ত অগ্নিনির্বাপণের ব্যবস্থা নেই, কোন ডিপোতে অগ্নিনির্বাপণের সামান্যতম ব্যবস্থাও নেই। কোথাও প্রশিক্ষিত লোকবলের অভাব দেখা গেছে। অথচ ডিপো পরিচালনার লাইসেন্স নেয়ার সময় অগ্নিনির্বাপণ সংক্রান্ত নীতিমালা অনুসরণ, প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি রাখা ও দক্ষ লোকবল রাখার বিষয়ে সব ডিপো মালিক অঙ্গীকারবদ্ধ হয়েছিলেন। 

পরিদর্শনকালে সব ডিপো কর্তৃপক্ষকে রাসায়নিকের কন্টেনারগুলো পরিকল্পিতভাবে রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনে দেয়াল নির্মাণ করে সাধারণ কন্টেইনার থেকে রাসায়নিকের কন্টেইনারকে আলাদা করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। 

আগ্রাবাদ ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক ও ডিপো পরিদর্শন টিমের অন্যতম সদস্য ফারুক হোসেন সিকদার সিভয়েসকে বলেন, সীতাকুণ্ডের বিএম ডিপোতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা সারাদেশের মানুষকে মর্মাহত করেছে। আমরা আমাদের ১০ জন সদস্যও হারিয়েছি। বিএম ডিপোর ঘটনার পর বাকি ডিপোগুলোর অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা, বিপজ্জনক ও অন্যান্য পণ্যভর্তি কনটেইনার রাখার ধরন যাচাই করতে আমরা সাতটি পরিদর্শন টিম গঠন করি। ডিপোগুলোতে গিয়ে আমরা বেশকিছু অনিয়ম পাই। ডিপোগুলোতে ফায়ার সেফটি নাই, অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা নাই, থাকলেও তা বেশ দুর্বল, এরা কোন মহড়া করেনা। আমরা তাদেরকে বিষয়গুলো বাস্তবায়নের তাগিদ দিয়েছি। পাশাপাশি ডিপোগুলোতে প্রাপ্ত অনিয়মের উপর প্রতিবেদন তৈরি করে ইতোমধ্যে ডিজি মহোদয়ের কাছে পাঠানো হয়েছে। 

তিনি বলেন, বিএম ডিপোর মত আরো কোন ঘটনা যেন না ঘটে এ কারণে বিপজ্জনক পণ্যে লাগা আগুন নির্বাপন করতে থাকা একটি টিম এসে আমাদের প্রতিটা স্টেশনে থাকা কর্মীদের প্রশিক্ষণ ও ক্লাস নিচ্ছে। পাশাপাশি সতর্কমূলক ব্যবস্থাও নেয়া হচ্ছে যাতে করে সকলকে সচেতন করা সম্ভব হয়।

গত ৪ জুন রাতে সীতাকুণ্ডের বিএম কন্টেইনার ডিপোতে আগুন লাগার পর একের পর এক বিস্ফোরণে তা ছড়িয়ে পড়ে। ভয়াবহ ওই অগ্নিকাণ্ড ও বিস্ফোরণে প্রথমে ৪১ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়। পরে লাশ উদ্ধার ও হাসপাতালে মৃত্যু নিয়ে সর্বমোট ৪৯ জনের মৃত্যু হয়। এর মধ্যে ১০ জনই ফায়ার সার্ভিসের কর্মী।

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়