Cvoice24.com

চট্টগ্রামে আজ, মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪

সময় ঘন্টা মিনিট সেকেন্ড


৬০ লাখ মানুষের নগরে গণশৌচাগার মাত্র ৪৩টি!

প্রকাশিত: ১১:১৩, ১৯ নভেম্বর ২০২০
৬০ লাখ মানুষের নগরে গণশৌচাগার মাত্র ৪৩টি!

ছবিঃ সিভয়েস

নতুন নতুন প্রকল্প। তারপর ঘটা করে উদ্বোধন। সবকিছুর পরে সময়ের চাকা বছর দু'য়েক না পেরুতেই নানা অনিয়ম, স্বল্প আয়সহ বিভিন্ন কারণে মুখ থুবড়ে পড়েছে চট্টগ্রাম নগরের গণশৌচাগারগুলো। নগরবাসীর আক্ষেপ, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) সদিচ্ছার অভাব ও উপযুক্ত মনিটরিংয়ের অভাবে এমন নাজুক নগরের জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার চিত্র।

৬০ লাখ মানুষের নগরে গণশৌচাগারের সংখ্যা মাত্র ৪৩টি। তাছাড়া প্রতিদিন অন্তত ১৫ লাখ মানুষ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এই বন্দর নগরীতে আসেন ব্যবসা, চাকরিসহ বিভিন্ন কাজে। অপ্রতুল গণশৌচাগারের কারণে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েন তারা।

যদিও নানা অব্যবস্থাপনার চিত্র সরাসরি চসিক প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজনের নজরে এলে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছেন। এর মধ্যে গত ১৪ সেপ্টম্বর নগরীর স্টেশন রোডে গণশৌচাগারের পানি চুরি করে বিক্রির সময় হাতেনাতে ধরা পড়ে একজন। তখন তথ্য উঠে আসে যে সমস্ত এলাকায় পানির সংকট সেখানে গণশৌচাগারের পানি বিক্রি হচ্ছে উচ্চমূল্যে। 

তখন প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন বলেছিলেন, ‘সবকিছু আমার পক্ষ থেকে মনিটরিং করা হবে। একই সাথে গণশৌচাগারের ইজারা বাতিল করা হবে। যদি এমন কাজে জড়িত কাউকে পাওয়া যায় তাহলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।’   

এরপর গত ২৭ সেপ্টেম্বর ঝটিকা অভিযানে ৩টি স্থায়ী দোকান গুড়িয়ে দেওয়ার পাশাপাশি উচ্ছেদ হয় ১টি টং দোকান। ওই সময়ে চসিকের কর্মকর্তারা বলেছিলেন, শর্তভঙ্গ করে চসিকের গণশৌচাগারের আড়ালে দোকানগুলো ভাড়া দেওয়া হয়েছিল।  শেষ পর্যন্ত ইজারা বাতিল করেছে চসিক।

নগরবাসীর অভিযোগ, নানা অনিয়মের কারণে এভাবে মুখ থুবড়ে পড়ছে যে কয়টি গণশৌচাগার আছে সেগুলো। প্রায় সময় পানি থাকছে না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ইজারাদার জানান, করোনার পর থেকে আরও নাজুক প্রায় সব কয়টি গণশৌচাগারের অবস্থা।

অথচ মেয়াদের শেষ বেলায় এসে প্রায় ১ কোটি টাকা ব্যয়ে মোহরা কাপ্তাই রাস্তার মাথা ও নগরীর ২নং গেট এলাকায় দু’টি অত্যাধুনিক গণশৌচাগার উদ্ধোধন করেছেন সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন। গণশৌচাগার দু’টিতে নিরাপত্তার জন্য লকার রুম ছাড়াও ৫ টাকার বিনিময়ে টয়লেট, ১০ টাকার বিনিময়ে গোসল, ৫ টাকার বিনিময়ে লকার রুম ব্যবহার এবং ১ টাকার বিনিময়ে সুপেয় নিরাপদ পানি পানের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে বলে জানানো হয়েছিল চসিকের পক্ষ থেকে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, একে তো চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল দ্বিতীয়ত রয়েছে অব্যবস্থাপনা। এ দশা না কাটলে চিরতরে মুখ থুবড়ে পড়তে পারে চসিকের গণশৌচাগারগুলো।

বন্দরনগরীতে অপ্রতুল গণশৌচাগার 

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ওয়ার্ডের সংখ্যা ৪১ টি। চসিক সূত্র জানায়, এই ৪১টি ওয়ার্ডে চসিকের অধীনে গণশৌচাগার রয়েছে ৪৩টি। এর মধ্যে রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামতের অভাবে কিছু গণশৌচাগার বন্ধ হয়ে গেছে। ইজারা দেওয়া হয়েছে ৩২টি। প্রায় ৭টি ‘ডেভলাপিং’র দায়িত্ব পেয়েছে ‘দুঃস্থ স্বাস্থ্য কেন্দ্র’ (ডিসকে) নামের একটি প্রতিষ্ঠান। 

তবে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, খোলা জায়গায় মলত্যাগের হার কমিয়ে আনলেও স্বাস্থ্যসম্মত উন্নত শৌচাগার ব্যবহারে সন্তোষজনক সাফল্য পাওয়া যাচ্ছে না। করোনা মহামারি এবং তার পরবর্তী সময়ে পানি ও সাবান সবার জন্য সহজলভ্য করতে হবে। শুধু করোনাভাইরাসের বিস্তৃতি রোধে নয়- জ্বর, ডায়রিয়ার মতো রোগের প্রাদুর্ভাব রোধেও উন্নত শৌচাগার ব্যবহার, হাত ধোয়ার মতো স্বাস্থ্যবিধি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক সিভয়েসকে বলেন, ‌‘কর্পোরেশন এলাকায় গণশৌচাগারের সংখ্যা আরও বাড়ানো হবে। এজন্য নগরীর বিভিন্ন স্পটে ফিজিবিলিটি স্টাডি বা সম্ভাব্যতা যাচাই করা হচ্ছে।’

চালু থাকা গণশৌচাগারে বিভিন্ন অনিয়মের ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘যেখানে যেখানে অনিয়ম আছে সেগুলো আমরা খতিয়ে দেখছি।’

চসিকের একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন কাঁচাবাজার এলাকা, বাস স্টেশন এলাকাসহ জনকীর্ণ এলাকা বেছে নিয়ে আরও গণশৌচাগার তৈরির পরিকল্পনা আছে চসিকের। সেই সাথে মেরামত যোগ্য গণশৌচাগার পুননির্মাণে বেশ কয়েক দফা চিঠিও দেওয়া হয়েছে সংশ্লিষ্ট বিভাগে।

প্রসঙ্গত, আজ ১৯ নভেম্বর বিশ্ব শৌচাগার দিবস। স্বাস্থ্যসম্মত শৌচাগারের প্রয়োজনীয়তার কথা বিবেচনা করে বিশ্ব শৌচাগার দিবস পালন শুরু হয়। ২০০১ সাল থেকে দিবসটি পালিত হয়ে এলেও ২০১৩ সালে জাতিসংঘ আনুষ্ঠানিকভাবে এর স্বীকৃতি দেয়। দিনটির উদ্দেশ্য স্বাস্থ্যসম্মত শৌচাগার ব্যবহারে জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং ২০৩০ সালের মধ্যে সবার জন্য শৌচাগারের সুবিধা নিশ্চিত করা।

-সিভয়েস/এপি

সিভয়েস প্রতিবেদক

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়