Cvoice24.com

নির্ধারিত ৩০৪ স্পটে পশু জবাই করেনি কেউ, ঘোষণাতেই দায় সেরেছে চসিক

সিভয়েস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২১:২৫, ২৩ জুলাই ২০২১
নির্ধারিত ৩০৪ স্পটে পশু জবাই করেনি কেউ, ঘোষণাতেই দায় সেরেছে চসিক

প্রতিকী ছবি।

পূর্ব মোহরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠ। এটি কোরবানি পশু জবাইয়ের জন্য নির্ধারণ করেছিল চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক)। তবে তা বাস্তবে নয়। সবই কাগজে কলমে। পশু জবাইয়ের জন্য চসিকের যেমন আয়োজন ছিল না তেমনি কোরবানিদাতারাও সেখানে কোনও পশু জবাই করেন নি। এরকম দিদার মার্কেট এলাকার সিএন্ডবি কলোনি স্কুল মাঠকেও চসিক কাগজে কলমে পশু জবাইয়ের স্থন নির্ধারণ করলেও সেখানেও তার চিহ্ন ছিল না। 

এরকম ৩০৪ স্পটকে কোরবানির পশু জবাইয়ের জন্য নির্ধারণ করেছিল চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক)। কিন্তু কোরবানের দিন এসব স্পট পড়েছিল ফাঁকা। মূলত- এ কার্যক্রমকে ঘিরে কোন প্রস্তুতি ছিল না চসিকের। কোরবানির আগে পরে দেখা গেছে- নগরে বর্জ্য অপসারণেই বেশি মনোযোগী চসিক।

এদিকে চসিকের কর্মকর্তারা বলছেন,  'জনমতের' ভিত্তিতেই এসব স্পটে ত্রিপল টাঙ্গানো কিংবা অন্যান্য আয়োজন করা হয়নি। তবে এসব স্পটে কেউ কোরবানি দিতে চাইলে তার জন্য 'নূন্যতম' প্রস্তুতি ছিল। বিগত বছরগুলোর অভিজ্ঞতার আলোকে অপচয়রোধে সিরিয়াস আয়োজন ছিল না, বলছেন চসিক কাউন্সিলর ও কর্মকর্তারা। 

কোরবানির নির্ধারিত প্রায় ৩০৪টি স্পটে চসিকের প্রস্তুতি কেমন ছিল? এমন প্রশ্নের উত্তরে ঘুরে ফিরে বিগত বছরের অভিজ্ঞতা ও ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের কথা দেখিয়ে দিচ্ছেন চসিকের দায়িত্বশীলরা। তারা বলছেন, নিজ বাড়ির আঙ্গিনায় কিংবা সড়কে কোরবানি পশু জবাইয়ে রেওয়াজ আছে নগরের বাসিন্দাদের। তাই মন্ত্রণালয়ের 'চাপে' অনুযায়ী এসব স্পটকে পশু জবাইয়ের জন্য নির্ধারণ করা হলেও ত্রিপল টাঙ্গানো বা অন্যান্য ব্যয়বহুল আয়োজন করা হয়নি।

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের উপপ্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা মোরশেদুল আলম চৌধুরী সিভয়েসকে বলেন, 'এসব স্পটে কোরবানি দেওয়ার জন্য আমরা মসজিদ থেকে শুরু করে পত্রিকার মাধ্যমেও প্রচারণা চালিয়েছি। কিন্তু কোরবানের দিন সেখানে কেউ আসেনি।'

চসিকের প্রস্তুতির ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন,  'স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের সাথে কথা বলেই সেখানে কোন ব্যয়বহুল আয়োজন করা হয়নি। কারণ স্থানীয়রা স্ব-স্ব কাউন্সিলরদের জানিয়েছেন নিজ নিজ আঙ্গিনা কিংবা সড়কেই কোরবানি দিবেন তারা। তবে পশু জবাইয়ের স্পটে কেউ চাইলে কোরবানি দিতে পারতেন। তার জন্য সেখানে নূন্যতম প্রস্তুতি ছিল।'

কিন্তু এসব স্পট ঘিরে কোনরকম প্রস্তুতি না থাকার বিষয়টি স্বীকার করেছেন কয়েকজন কাউন্সিলর। নিয়মের ব্যতিক্রম হওয়ার কারণে ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করেছেন অনেকেই। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কাউন্সিলর সিভয়েসকে বলেন, 'এটার প্রস্তুতি শুধু মুখে মুখে হয়েছে। কাউন্সিলদের মধ্যেও কোন প্রস্তুতি ছিল না। তারা তাদের কাজ নিয়েই ব্যস্ত ছিল।  অনেকেই এক ঘণ্টা পর পর শুধু ফেসবুকে ছবি আপলোড করেছে। কাজের কাজ কিছুই হয়নি।'

চসিকের নির্ধারিত তিন শতাধিক স্পটের মধ্যে ছিল স্কুল মাঠ, পরিত্যক্ত বাড়ি ও উপসড়ক, মসজিদ মাঠ, খেলার মাঠ।

সিটি কর্পোরেশনের ২০ নং ওয়ার্ড চৌধুরী হাসান মাহমুদ হাসনী সিভয়েসকে বলেন, 'আমার এলাকায় পশু জবাইয়ে কোন নিয়ম মানা হয়নি। পশু জবাইয়ের জন্য এসব স্পটে কোন প্রস্তুতিও ছিল না।'

অথচ এ ওয়ার্ডে সিএন্ডবি কলোনীর মাঠ দিদার মার্কেট, নূর মো. সওদাগর এর মাঠ বলুয়ার দিঘীর পাড়, সমবায় কলোনী মাঠ, নবাব সিরাজদ্দৌলা রোড, খলিফাপট্টি মাঠ, কাজেম আলী বাই লেইন, হাবিব ম্যানসনের মাঠ, কোরবানীগঞ্জকে গরু জবাইয়ের স্পট হিসেবে নির্ধারণ করেছিল চসিক। কোরবানের দু'দিন একইভাবে প্রস্তুতি ছিল না ৪১ ওয়ার্ডের বাকি স্পটগুলোও।

শুরু থেকেই বলা হয়েছিল এসব স্পটে পশু জবাই হলে নগরের কোরবানি বর্জ্য দ্রুত অপসারণ করা সম্ভব হবে। কিন্তু এসব স্পটে পশু জবাই ছাড়াই দ্রুত বর্জ্য অপসারণ হয়েছে বলে দাবি করেছে চসিক। 

চসিক জানায়, কোরবানের দিন নগরে অপসারণ করা হয়েছে ৬ হাজার ৮০০ মেট্রিকটন বর্জ্য এবং দ্বিতীয় দিনে অপসারণ করা হয়েছে ৫ হাজার ২০০ মেট্রিকটন বর্জ্য। এ রিপোর্ট লিখা পর্যন্ত ৩য় দিনের বর্জ্য অপসারণের কাজ চলমান রয়েছে। তাছাড়া এ তিন দিনে চসিকের হটলাইনে মাত্র ৩/৪ টি অভিযোগ এসেছে বলে দাবি করেছেন চসিকের কর্মকর্তারা। 

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়