চসিকের শর্ত মেনে টাইগার পাসে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ করবে সিডিএ

সিভয়েস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২২:৩৩, ২ ফেব্রুয়ারি ২০২২
চসিকের শর্ত মেনে টাইগার পাসে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ করবে সিডিএ

চট্টগ্রামের এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ নিয়ে গত এক বছরজুড়ে নানা বির্তকে জড়িয়েছিল চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। সরকারি সংস্থাটি কথার যুদ্ধে জড়িয়ে কারো আপত্তিকেই আমলে না নেয়ার হুঙ্কার দিলেও এবার সুর নরম করেছে। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) আপত্তিকে প্রথম দিকে পাত্তা না দিলেও শেষ পর্যন্ত এবার চসিকের বেঁধে দেওয়া শর্তেই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের টাইগার পাস অংশের কাজ শুরু করবে সিডিএ। 

চট্টগ্রামের বহুল প্রত্যাশিত চট্টগ্রাম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পটি লালখান বাজার এলাকা থেকে শুরু হয়ে আখতারুজামান ফ্লাইওভারকে সোজা যুক্ত করবে বিমান বন্দর সড়কে। যেটি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে সরাসরি মনিটরিং করা হচ্ছে। সেকারণে চসিক-সিডিএ যতই কথার যুদ্ধে জড়াক সমঝোতার মাধ্যমেই প্রকল্পের কাজ এগিয়ে নিতে হচ্ছে। সম্প্রতি, চসিকের পক্ষ থেকে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের টাইগারপাস অংশে কাজ করতে বেশ কিছু শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে। 

চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ শহীদুল আলমের পাঠানো এক চিঠিতে বলা হয়েছে, নির্মাণাধীন প্রকল্পটির টাইগার পাস থেকে লালখান বাজার পর্যন্ত অংশে কাজ শুরু করার জন্য নিরাপত্তা ফেন্সিং এর বাইরে কমপক্ষে দুই লেইন রাস্তা রেখে নির্মাণ কাজ করতে হবে। এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ শেষে বিদ্যমান সমপরিমাণ ফুটপাত ও র‌্যাম্প দিয়ে গ্রাউন্ড রোড সংকুচিত না করার শর্তে সিডিএকে ফুটপাত ও ড্রেন অপসারণ ও পুনঃনির্মাণের অনুমাতি দেওয়া হলো। কাজ চলাকালীন সময়ে প্রয়োজনীয় সংস্কার কাজ করে রাস্তা চলচলের উপযোগিতা রাখার কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে ওই চিঠিতে। 

চিঠি প্রাপ্তির কথা স্বীকার করেছেন সিডিএর প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস। তিনি বলেন, ‘প্রকল্প কাজ চলাকালীন সময়ে নাগরিক দুর্ভোগ লাঘবে ড্রেনেজ সিস্টেম যেন ঠিক থাকে, যান ও জনচলাচলে যেন বিঘ্ন না ঘটে সেটা বলা হয়েছে চসিকের পক্ষ থেকে। আমরা অবশ্যেই সেসব বিষয় মাথায় রেখে কাজ করবো।’

সিডিএর প্রকৌশল বিভাগ জানায়, প্রকল্পটির টাইগার পাস থেকে লালখান বাজার পর্যন্ত অংশে কাজের জন্য সয়েল টেস্ট বা ভার বহন ক্ষমতা নিরীক্ষণের কাজ শুরু করেছে সিডিএ। 

সিডিএ সংশ্লিষ্টরা জানান, সেখান সড়কগুলো দিয়ে প্রতিদিন গড়ে ছোট-বড় ৫৫ হাজার গাড়ি যাতায়াত করছে। তবে এ প্রকল্পের অধীনে থাকা দেওয়ান হাট থেকে বারিক বিল্ডিং মোড় পর্যন্ত বেহাল দশা দীর্ঘদিন ধরে। এরই মধ্যে এ প্রকল্পের প্রায় ৬২ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে।

এরআগে গত বছরের ২৭ সেপ্টেম্বর রাতে এ প্রকল্পের নির্মাণাধীন এলাকা আগ্রাবাদের শেখ মুজিব সড়কে নালায় পড়ে মৃত্যু হয় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রী শেহেরীন সদিয়ার। এরপর থেকে ড্রেন ও সড়কের ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে নিরাপত্তা বেষ্টনীর কথা জোরালোভাবে আলোচনায় আসলেও তা দেখা যায়নি।]

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, টাইগার পাসের ওই অংশে পাহাড় না কেটে ফ্লাইওভার নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তাছাড়া ওই অংশে ফ্লাইওভারের উচ্চতা ধরা হয়েছে প্রায় ৩০ ফুট। যার জন্য করা হয়েছে নতুন ডিজাইন। নতুন ডিজাইনে বারিক বিল্ডিং থেকে আসা চার লেনের ফ্লাইওভার দেওয়ানহাটে ঢাকা-চট্টগ্রাম ট্রাংক রোডে নির্মিত ফ্লাইওভারের উপর দিয়ে দেওয়ানহাট ওভারব্রিজের পশ্চিম পাশ দিয়ে এসে টাইগারপাস পার হয়ে বর্তমানে সিটি করপোরেশন কার্যালয়ের রাস্তার সামনে পৌঁছাবে। চার লেনের এই ফ্লাইওভার পাহাড়ের দিকে না গিয়ে রাস্তার মাঝখানে থাকবে। পিলারও রাস্তার মাঝখানে হবে। 

সিটি করপোরেশন কার্যালয়ের রাস্তা পর্যন্ত পৌঁছার পর চার লেনের ফ্লাইওভারের দুই লেন ম্যাজিস্ট্রেট কলোনির আগে রাস্তায় নেমে যাবে। বাকি দুই লেন রাস্তার মাঝখান দিয়ে গিয়ে ওয়াসা মোড়ে বিদ্যমান আখতারুজ্জামান ফ্লাইওভারের সাথে যুক্ত হবে। এতে বিমানবন্দর রোড ধরে আসা গাড়িগুলো সড়ক পথে অল্প পথ গিয়ে প্রয়োজনে আবারো ফ্লাইওভারে উঠবে কিংবা নিচ দিয়ে চলে যাবে। এই পয়েন্টে ফ্লাইওভারে ওঠা গাড়িগুলোর জন্য রাস্তা ডেডিকেটেড করে দেওয়া হবে।

প্রসঙ্গত, চট্টগ্রাম শহরের শিল্পাঞ্চল (ফৌজদারহাট শিল্পাঞ্চল, নাসিরাবাদ শিল্পাঞ্চল ও কালুরঘাট শিল্পাঞ্চল) ও দক্ষিণ চট্টগ্রামের সাথে চট্টগ্রাম বন্দরের সরাসরি যোগাযোগ স্থাপনের লক্ষ্যে চট্টগ্রাম শহরের লালখান বাজার হতে শাহ্ আমানত বিমানবন্দর পর্যন্ত ১৬ দশমিক ৫০  কি. মি. দৈর্ঘ্য ও ১৬ দশমিক ৫ মিটার প্রস্থ বিশিষ্ট এ ফ্লাইওভারটি নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। ৩ হাজার ২৫০ কোটি ৮৩ লাখ টাকার প্রকল্পটি ২০১৭ সালের ১১ জুলাই একনেক সভায় অনুমোদন দেয়া হয়।

প্রকল্পটিকে চার ভাগে ভাগ করে কাজ শুরু হয়েছে। শুরুতে কাটগড় থেকে সিমেন্ট ক্রসিং পর্যন্ত এলাকায় এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ কাজ শুরু হয়। দ্বিতীয় অংশে সিমেন্ট ক্রসিং থেকে সল্টগোলা ক্রসিং, তৃতীয় অংশে সল্টগোলা ক্রসিং থেকে বারিক বিল্ডিং মোড় এবং চতুর্থ অংশে বারিক বিল্ডিং মোড় থেকে লালখান বাজার পর্যন্ত প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। তবে শুরু থেকেই একেকবার একেক সংস্থার আপত্তির মুখে পড়ে প্রকল্পটি। সবশেষ লালখান বাজার অংশে আপত্তি তোলে চসিক।

সিভয়েস/এপি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়