চট্টগ্রামে হু হু করে বাড়ছে ডেঙ্গু রোগী, মশা মারতে চসিকের নতুন কামান

সিভয়েস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২০:৫৩, ১৮ অক্টোবর ২০২২
চট্টগ্রামে হু হু করে বাড়ছে ডেঙ্গু রোগী, মশা মারতে চসিকের নতুন কামান

শরৎ শেষে এখন হেমন্তের প্রথম প্রহর। অথচ ডেঙ্গুর প্রকোপ যেনো দিন দিন বাড়ছেই। কি দিন, কি রাত! ঘরে কিংবা বাইরে। হেমন্তের প্রথম প্রহরেও মশার যন্ত্রণা থেকে রেহাই নেই নগরবাসীর। যদিও মশার এ উপদ্রব নতুন কিছু না। মশা মারতে চসিকের কোটি কোটি টাকার কামান দাগালেও তার সুফল পাচ্ছে না নগরবাসী। এর বিস্তার রোধে চসিক যতই দৌড়ঝাঁপ চালাক না কেন ‘দাগী আসামির’ মতোই চোখের সামনে ঘুরে বেড়ায় মশা। যেনো তামাশা দেখা ছাড়া কারোই কিছু করার নেই। 

চট্টগ্রামের অবাধ্য এ মশাদের কাছে চসিক এখন অনেকটাই নিরুপায়। মশাবাহিত ডেঙ্গু রোগী গাণিতিকহারেই বাড়ছে চট্টগ্রামে। চসিকের ওষুধে মশা মরুক আর নাই মরুক তবুও মশা মারতে আর ডেঙ্গু ঠেকাতে লোকবল বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিচ্ছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন। আগামী ২০ অক্টোবর স্ট্যান্ডিং কমিটির সভায় মশক নিধনে লোকবল বাড়ানোর এ সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। 

চসিক সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রামে মশক নিধনে বর্তমানে ১৮৩ জন লোক কাজ করছেন। এরসঙ্গে নতুন করে যুক্ত হবে আরও ৪০ জন। নগরের যেসব এলাকা ডেঙ্গুর হটস্পট সেসব এলাকায় মশক নিধন কাজে তাদের যুক্ত করা হবে। প্রয়োজনে এ সংখ্যা বাড়ানো হবে বলেও জানিয়েছেন সংস্থাটির এক কর্মকর্তা। এর আগে গত বছর মশক নিধন কার্যক্রমকে গতিশীল করতে নগরের ৪১টি ওয়ার্ডকে চার জোনে ভাগ করে মশা মারার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন। কিন্তু মশা মারতে চসিকের একের পর এক সিদ্ধান্তই যেন জলে যাচ্ছে। 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন— কার্যকর ওষুধ আর দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করলে মশার যন্ত্রণা থেকে কিছুটা হলেও মুক্তি পেতো নগরবাসী।

যদিও গত মাসে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের আন্তঃমন্ত্রণালয়ের রিজ্যুালেশনে কয়েকটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সেই সিদ্ধান্ত অনুসারে মশক নিধনে সিটি কর্পোরেশনকে কুইক রেসপন্স টিম এবং চিরুনি অভিযান চালানোর কথা বলা হয়েছে। এছাড়াও প্রতিটি ওয়ার্ডকে ১০টি জোনে ভাগ করে কমিটি গঠনের তালিকা মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর জন্য বলা হয়েছে। একইসঙ্গে স্বাস্থ্য বিভাগকে শনাক্তকৃত ডেঙ্গু রোগীর ঠিকানাসহ পূর্ণাঙ্গ তথ্য সিটি কর্পোরেশন ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে পাঠাতে হবে। 

এদিকে, মশা মারতে জরুরি ভিত্তিতে আরও বেশ কয়েকটি ফগার মেশিন আর স্প্রে মেশিন কেনার সিদ্ধান্ত নেয় চসিক। তবে কোন মেশিন কতটি নতুন করে কেনা হয়েছে তা জানা সম্ভব হয়নি। যদিও ২০ অক্টোবরের স্ট্যান্ডিং সভায় এ বিষয় গুলো চূড়ান্ত হবে জানিয়ে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিষয়ক স্থায়ী কমিটির সভাপতি এবং কাউন্সিলর মোবারক আলী সিভয়েসকে বলেন, ‘যেসব এলাকাগুলোতে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বেশি দেখা যাচ্ছে মূলত সেসসব এলাকায় মশক নিধনে লোকবল বাড়ানো হবে। কমপক্ষে ৪০ জন লোকবল বাড়ানো হবে মশক নিধনে। অথার্ৎ নতুন নিয়োগ না হলেও জলাবদ্ধতা নিরসনে যারা কাজ করছেন তাদের থেকে ৪০ জনকে মশক নিধনে যুক্ত করা হবে। রোগীর তথ্য বিশ্লেষণ করার পর যে যে এলাকায় মশক নিধনে লোক বাড়ানোর প্রয়োজন হবে সেখানে বাড়ানো হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আগামী ২০ তারিখ স্ট্যান্ডিং কমিটির সভা আহবান করা হয়েছে। ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব রোধে  বিশেষ ক্রাশ প্রোগ্রাম নেওয়ার জন্য। নতুন লটে আসা মশার ওষুধের কার্যক্ষমতা দেখার জন্য ঢাকার রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে (আইইডিসিআর) পাঠানো হবে। এছাড়া সভায় মাটি উত্তোলন, পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমের গতি, আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে বর্জ্য অপসারণের বিষয়সহ কথা বলা হবে। এরপর যে সিদ্ধান্ত আসবে তাই বাস্তবায়িত হবে।’

মশক নিধনে লোকবল পর্যাপ্ত কিনা এ প্রসঙ্গে সিভিল সার্জন কার্যালয়ের কীটতত্ববিদ এনতেজার ফেরদৌস সিভয়েসকে বলেন, ’৪০ জন বাড়ানোর পর প্রতি ওয়ার্ডে মশক নিধনের দায়িত্ব পড়বে প্রায় ৫ থেকে ছয়জনের কাধে। এখন কোনো ওয়ার্ড বড় আবার কোনো ওয়ার্ড ছোট। কোনো ওয়ার্ডে জনবসতি বেশি আবার কোনো ওয়ার্ডে কম। লোকবল বড় কথা নয়। বিষয়টা হলো এই যে যারা ফগিং করবেন তারা কোন সময়ে করবেন? সকালে সূর্য উঠার পর এক ঘন্টা আর সন্ধ্যায় সূর্য ডোবার এক ঘন্টা আগে মশার ডেনসিটিটা বেশি থাকে। এই সময়টাতে ফগিংটা করতে পারলে কম জনবল দিয়েও মশা নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। এর পাশাপাশি কোনো এলাকায় ফগিং করার অন্তত পাঁচদিনের মধ্যে দ্বিতীয়বার ফগিং করতে হবে। নতুবা কোনো কাজ হবে না।’

মশার উৎপাত কমাতে পরামর্শ দিয়ে এ কীটতত্ত্ববিদ বলেন, ‘যে এলাকায় ফগিং করা হবে তার ঘন্টাখানেক আগে যদি মাইকিং করা যায় তাহলে ওষুধ ছিটালেও কাজে লাগবে। আর ডেঙ্গু প্রতিরোধে মাইকিং করে যদি জনগণকে সচেতন করা যায় তাহলেও অনেক ক্ষেত্রে ফগিং করার ব্যাপারটা কাজে আসবে।’

অন্যদিকে, চট্টগ্রামে হু হু করে বাড়ছে ডেঙ্গুর প্রকোপ। গত দুই মাসেই শনাক্তের সংখ্যা ছাড়িয়েছে প্রায় পনেরোশ’র কাছাকাছি। প্রতিদিনই শনাক্ত ছাড়িয়ে যাচ্ছে আগের দিনকে। তেমনি গত ২৪ ঘণ্টায় নগরে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন আরও ৯১ জন। এর আগে গতকাল আক্রান্ত হয়েছিলেন ৬৪ জন। চলতি সপ্তাহেই ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩১২ জনে। এমনকি হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যাও বাড়ছে। বর্তমানে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ৮২ জন। তারমধ্যে সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন ৪৭ জন ও বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে ৪৪ জন রোগী। চলতি বছরের অক্টোবর পর্যন্ত চট্টগ্রামে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন ১ হাজার ৬৭৪ জন। তারমধ্যে নগরের ১ হাজার ২৩০ জন এবং উপজেলার ৪৪৪ জন। আক্রান্তদের মধ্যে পুরুষ রোগী ৭৯২ জন, নারী ৪৬১ জন এবং শিশু ৪২১ জন।

প্রসঙ্গত, বর্তমানে মশা মারতে চসিকে ‘এডাল্ট্রিসাইড’ (পূর্ণাঙ্গ মশা ধ্বংসকারী) ও ‘লার্ভিসাইড’(লার্ভা ধ্বংসকারী) নামের দু’টি ওষুধ ব্যবহার হচ্ছে। যদিও এসব ওষুধের ৯০ শতাংশ কার্যকর বলে দাবি কর্তৃপক্ষের। তবে এসব ওষুধের পরিবর্তে ‘মাসকুবার’ নামের ভেষজ ওষুধ ব্যবহার করতে চায় সংস্থাটি। কিন্তু এই ওষুধের সরকারি কোনো অনুমোদন নেই।

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়