Cvoice24.com

বৈশাখী মেলা: ‘চোরে না শুনে ধর্মের কাহিনী’

প্রকাশিত: ১১:৪২, ২৪ এপ্রিল ২০১৮
বৈশাখী মেলা: ‘চোরে না শুনে ধর্মের কাহিনী’

নগরীর লালদিঘির মাঠে জব্বার বলি খেলায় বৈশাখী মেলা। ছবি: মিনহাজ জন্টু

‘মেলায় আগত ব্যবসায়ীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। কাউকে চাঁদা দিবেন না। কেউ চাঁদা দাবি করলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের কাছে ধরিয়ে দিন।’ লালদীঘির ঐতিহ্যবাহী জব্বারের বলীখেলা উপলক্ষে আজ থেকে শুরু হওয়া বৈশাখী মেলা উদাপন পরিষদের মঞ্চ থেকে মাইকে এই ঘোষণাটি দেয়া হচ্ছে। কিন্তু চোরে না শুনে ধর্মের কাহিনী।

মঞ্চ থেকে চাঁদা বিরোধী ঘোষণা আসলেও চাঁদা না দিয়ে রেহাই পাচ্ছে না কোন ব্যবসায়ী। প্রত্যেক দোকানীকে এক থেকে চার হাজার টাকা পর্যন্ত চাঁদা গুণতে হচ্ছে।  ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীদের দাবি, মেলা কমিটি চাঁদা আদায়কারীদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরিয়ে দেয়ার কথা বললেও চাঁদা নিচ্ছে খোদ পুলিশ সদস্যরা।  

ফিরোজপুর থেকে মেলায় আগত খেলনা ব্যবসায়ী মো. জামাল পারভেজ ক্ষোভের সঙ্গে সিভয়েসকে বলেন, ‘আমরা গরীব মানুষ, দুইটা পয়সা আয়ের জন্য এতদূর এসেছি। শুনেছি এই মেলায় কোন চাঁদাবাজি নেই। কিন্তু এসে দেখলাম ভয়াবহ জুলুম। আমার এই ছোট্ট দোকানের জন্য ৪ হাজার টাকা দিতে হয়েছে পুলিশকে।  

কসমেটিক পসরা সাজিয়ে বসেছেন ঢাকা ডেমরা থেকে আসা বৃষ্টি। সিভয়েস প্রতিবেদককে দেখে ছুটে এসে তিনি জানান, থানায় সবার নাম তালিকা করবে বলে ডেকে নিয়ে এক হাজার টাকা চাঁদা নিয়েছে পুলিশ। কিছু বলার সাহস পায়নি। কিন্তু মনে খুব দু:খ। শেষ পর্যন্ত পুলিশ চাঁদাবাজিতে নেমেছে।

মেলা কমিটি সূত্রে জানা গেছে, এবারের মেলায় ছোট বড় মিলিয়ে মোট ৩ হাজার দোকান বসানো হয়েছে। সেই হিসেবে প্রতি দোকান থেকে গড়ে ১ হাজার টাকা চাঁদা নিলে হয় ৩০ লাখেরও বেশি টাকা।  

পোড়া মাটির পণ্য ব্যবসায়ী জিহাদ মানিক বলেন, আমাদের চারটা দোকানের জন্য কোতোয়ালী থানায় নিয়ে গিয়ে ১৪ হাজার টাকা আদায় করা হয়েছে। বলেছে টাকা না দিলে সব জিনিসপত্র লাথি মেরে ভেঙে দেবে।  

কক্সবাজার থেকে মিষ্টান্ন পণ্য নিয়ে আসা সোহেল জানান,  অনেক টাকা খরচ করে কিছু রোজগারের আশায় এসেছি। যদি ব্যবসা না করে ফেরত যেতে হয় এই ভয়ে থানাকে টাকা দিতে বাধ্য হয়েছি।  

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জসিম উদ্দিন বলেন, ‘পুলিশ কারো কাছ থেকে কোন চাঁদা নেয়নি। বরং যারা চাঁদা দাবি করবে তাদেরকে ধরতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা কাজ করছে।’

তিনি বলেন, ‘কারা পুলিশের নাম ভাঙিয়ে চাঁদা নিচ্ছে তাদের নাম, মোবাইল নাম্বার দিতে বলুন। আমরা তাদের আইনের আওতায় আনবো।’  

ব্যবসায়ীদের থানায় নিয়ে তালিকা করার নামে থানায় বসে কারা টাকা নিচ্ছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কোন টাকা নেয়া হচ্ছে না। তবে নিরাপত্তার স্বার্থে নাম যাচাই করে দেখা হচ্ছে।’

আজ মঙ্গলবার সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত সরেজমিনে মেলা ঘুরে জানা গেছে, ব্যবসায়ীরা টাকা না দিয়ে দোকান বসাতে পারেন নি। আবার কেউ কেউ জানিয়েছে, তারা এখনো টাকা দেয়নি। তবে না দিয়ে উপায় নেই।  

মেলায় লালবাগ থেকে আসা ফার্নিচার ব্যবসায়ী শাহ আলম বলেন, ‘রোববার সন্ধ্যায় যখন ট্রাকভর্তি ফার্নিসার নিয়ে আসলাম তখন একদল পুলিশ এসে ট্রাক প্রতি দেড় হাজার টাকা করে নিয়েছে। আমরাও দিতে বাধ্য হয়েছি। কারণ পুলিশ বলে কথা।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক শওকত আনোয়ার বাদল বলেন, ‘চাঁদাবাজি হচ্ছে না বলবো না। কারা করছে আপনারা যেমন জানেন, আমরাও জানি। কিন্তু করার কিছু নেই। কিছু বললে ওল্টো চাঁদাবাজির মামলায় আমাদের ফাঁসানো হবে।’

তবে মাইকে চাঁদা না দেয়ার ঘোষণা দিয়ে কি লাভ হচ্ছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছি। আমরা নিরুপায়। সব জায়গায় অন্যায় হচ্ছে। এখানেও হচ্ছে।’

-সিভয়েস/এইচআর

166

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়