Cvoice24.com


চকরিয়ায় বঙ্গবন্ধুর নাম ভাঙিয়ে কলোনি!

প্রকাশিত: ০৮:৫৯, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২০
চকরিয়ায় বঙ্গবন্ধুর নাম ভাঙিয়ে কলোনি!

ছবি: সিভয়েস

বঙ্গবন্ধু, প্রধানমন্ত্রী ও স্থানীয় এমপির নামে সাইনবোর্ড টাঙিয়ে চকরিয়ার রামপুরে মাছ চাষ প্রকল্পভুক্ত জমি দখলবাজির অভিযোগ ওঠেছে। চিংড়ি প্রকল্পের জমিতে রাতারাতি ‘বঙ্গবন্ধু কলোনি’ সাইনবোর্ড স্থাপন করা হয়েছে। ইতোমধ্যে টিন, কাঠ, বাঁশ দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে কয়েকটি বাসা।

অভিযোগ আছে, চিংড়ি প্রকল্প দখলে নিতে কয়েক দফায় হামলা চালানো হয়েছে। দুর্বৃত্তরা লুট করে নিয়ে গেছে চিড়ি মাছসহ গুরুত্বপূর্ণ মালামাল। হুমকী দিচ্ছে চাষা ও মালিকদের। এ বিষয়ে প্রতিকার চেয়ে কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত আবেদন দিয়েছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। অভিযোগটি অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব)কে তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। মৎস্য অধিদপ্তরের অধীনস্থ চকরিয়া উপজেলার রামপুর মৌজার ১০ একর চিংড়ি এক্টেট ও ১১ একর চিংড়ি এক্টেটের আর.এস ১০৮৩, ১০৮৪, ১০৮৬, ১১১০ ও ১১২০ দাগাদির তুলনামূলক বিএস ২০০৮, ২০২৯, ২০০২, ২০২৭, ২০২৮ ও ২০৪০ দাগভুক্ত ৭,১১২ একর দাগাদির উপর অবস্থিত কয়েকটি চিংড়ি প্লটে বারবার হামলা, লুট ও দখল প্রতিষ্ঠার পাঁয়তারার অভিযোগ আনা হয়েছে।

বঙ্গবন্ধু, প্রধানমন্ত্রী ও এমপির ছবিসম্বলিত সাইনবোর্ড টাঙিয়ে ‘বঙ্গবন্ধু কলোনি’ করার বিষয়ে জাফর আলম বলেন, ‘সেটি কোনভাবেই হতে পারে না। আমি কোনো অপরাধীকে প্রশ্রয় দিই না। এ জাতীয় লোকের বিরুদ্ধে আগেও অনেকবার অভিযান করেছি। এখনই ওসি সাহেবকে ব্যবস্থা নিতে বলতেছি।’

এদিকে, গত ১৭ সেপ্টেম্বর রামপুর ১০ একর চিংড়ি চাষ প্রকল্প মালিক বহুমুখী সমবায় সমিতির সভাপতি মেহেরুজ্জামান, সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান, রামপুর ১১ একর চিংড়ি চাষ প্রকল্প মালিক সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ নুরুল আকবরের স্বাক্ষরে দেয়া অভিযোগটি তদন্তপূর্বক তড়িৎ ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ নিয়েছেন জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন।

রামপুর ১০ একর চিংড়ি চাষ প্রকল্প মালিক বহুমুখী সমবায় সমিতির সভাপতি মেহেরুজ্জামান জানান, মৎস্য অধিদপ্তর থেকে লিজ নেয়া ১০ একর বিশিষ্ট জমিতে ৪৬৮টি চিংড়ি প্লট এবং ১১ একর বিশিষ্ট জমিতে ১১৯টি চিংড়ি প্লটে তারা ১৯৭৮ সাল থেকে চাষাবাদ করে আসছেন। পাশাপাশি সরকারি জমিসমূহও তারা রক্ষণাবেক্ষণ করছেন। কিন্তু একটি চিহ্নিত দখলবাজচক্র সম্প্রতি কয়েকটি প্লটে হামলা চালিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকার চিংড়ি মাছ ও মালামাল লুট করে নিয়ে গেছে।

তিনি জানান, দাগাদির সমুদয় জমি ২ নং খতিয়ানভুক্ত বনবিভাগের জায়গা। যা ১৯৭৮ সাল থেকে ১৯৮২ সালের মধ্যে তিন দফায় ৭ হাজার একর জমি মৎস্য মন্ত্রণালয়ের অনুকূলে মাছ চাষের জন্য হস্তান্তর করা হয়। এছাড়া ২০১৯ সালের ৩০ এপ্রিল হাইকোর্টের দেয়া আদেশের বিরুদ্ধে গত ৬ জানুয়ারী সুপ্রীমকোর্টের আপিল বিভাগ স্থগিতাদেশ দেয়। তা সত্ত্বেও বঙ্গবন্ধু, প্রধানমন্ত্রী ও স্থানীয় এমপির নামে সাইনবোর্ড টাঙিয়ে সরকারি মৎস্য প্রকল্পের জমি দখলবাজিতে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারসহ সংশ্লিষ্টদের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন মেহেরুজ্জামান।

রামপুর ১১ একর চিংড়ি চাষ প্রকল্প মালিক সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ নুরুল আকবর জানান, গত ১৭ সেপ্টেম্বর রাতের অন্ধকারে ৪ নং পোল্ডারে অবস্থিত ৪৮ একর প্রদর্শনী খামার এবং পাশ^বর্তী ড্রায় ১০টি প্লটে অবৈধ অনুপ্রবেশ, কর্মচারীদের মারধর, মাছ লুটের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় দায়েরকৃত মামলা ৩ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। সপ্তাহ পার না হতেই আবারো হামলা ও লুটের ঘটনায় ইজারা গ্রহীতা ও মৎস্য চাষিসহ এলাকাবাসী আতঙ্কিত।

দেশের বৃহত্তর স্বার্থে মৎস্য অধিদপ্তরের জমি রক্ষা, রপ্তানীযোগ্য চিংড়ি চাষাবাদ চলমান রাখতে চিংড়িজোনে শান্তি প্রতিষ্ঠায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন ১১ একর চিংড়ি চাষ প্রকল্প মালিক সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ নুরুল আকবর।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সৈয়দ শামসুল তাবরীজ বলেন, চিংড়িমহাল কমিটির সভায় সৎস্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে এ সংক্রান্ত অভিযোগ উপস্থাপন করা হয়েছিল। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মহোদয় আমাকে ফোন করেছিলেন। খোঁজ নিচ্ছি। প্রয়োজনে মোবাইল কোর্ট করা হবে।’

চকরিয়া থানার ওসি (তদন্ত) মিজানুর রহমান বলেন, ‘বিষয়টি আমাদের নলেজে নাই। খোঁজখবর নিয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছি।’ একইভাবে অভিযোগ তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবেন বলে জানিয়েছেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোহাম্মদ আশরাফুল আফসার।

-সিভয়েস/এসসি

কক্সবাজার প্রতিনিধি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়