Cvoice24.com

জঙ্গল সলিমপুরের আলীনগরে সেই ‘রাজা’ ইয়াসিনের যত আইন

সীতাকুণ্ড প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৩:২৩, ২৩ জুলাই ২০২২
জঙ্গল সলিমপুরের আলীনগরে সেই ‘রাজা’ ইয়াসিনের যত আইন

জীবিকার সন্ধানে নোয়াখালী থেকে কয়েক বছর আগে ছোটভাই ফারুকসহ চট্টগ্রাম আসেন ইয়াসিন। এসে প্রথমে কিছুদিন সিএনজি অটোরিকশা চালাতেন চট্টগ্রাম শহরে। থাকতেন চট্টগ্রাম নগরের এক বস্তিতে। এরপর কিছুদিন চাকরি নেন একটি জুট মিলে। আরও কিছুদিন পর সীতাকুণ্ডের সলিমপুরের জঙ্গল সলিমপুরে একটি ঘর ভাড়া নেন। সেখানে নোয়াখালী থেকে কিছু সন্ত্রাসী এনে রাখতেন। 

এরপর পার্শ্ববর্তী দুর্গম পাহাড়ের একটি অংশ কেটে বিক্রি করা শুরু করেন তিনি। পরবর্তীতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আরও সন্ত্রাসী ও দাগী আসামিদের নিয়ে আসেন সেখানে। গড়ে তোলেন নিজস্ব বাহিনী। শুরু করেন দেদারসে পাহাড় কাটা। পাহাড় কেটে একদিকে মাটি এবং অন্যদিকে জায়গা বিক্রি করতেন। ফলে রাতারাতি কোটিপতি বনে যান দুই ভাই। বিশাল একটা এলাকার নাম দেন আলীনগর। বাংলাদেশ থেকে করে নেন সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন।

আলী নগরে ইয়াসিনের আইনসমূহ

‘আলীনগর’ বাংলাদেশের ভিতরে অবস্থান হলেও দেশের কোন আইনই সেখানে কার্যকর ছিল না। সেখানকার অধিবাসীরা চলত তাদের রাজা ইয়াসিন ও ফারুকের নিজস্ব আইনে। আলীনগরের প্রবেশের তিনটি পথ ছিল। তিনটি পথেই সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করতেন তার নিজস্ব সিকিউরিটির সদস্যরা। বাইরের কোন লোক ভিতরে প্রবেশ করতে পারতেন না। ভিতর থেকেও কেউ বাইরে যেতে পারতেন না। যতক্ষণ রাজার অনুমতি না পেতেন। 

বসবাসকারীদের কোন অতিথি আসলে তাদের ভোটার আাইডি কার্ড অথবা জন্ম নিবন্ধন কার্ড নিয়ন্ত্রণ কক্ষে জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক ছিল। জমা দিতে হত সাথে আনা এন্ড্রয়েড ফোন। এখানে বসবাসকারীদেরও কেউ এন্ড্রয়েড মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে পারতেন না। আর যারা এখানকার স্থায়ী বাসিন্দা অর্থাৎ যারা জায়গা কিনে বসবাস করছেন তাদের ইয়াসিনের স্বাক্ষর করা বিশেষ পাস দেওয়া হত। পাস দেখিয়ে তারা ভিতর থেকে বাইরে ও বাহির থেকে ভিতরে প্রবেশ করতে পারতেন। এই রাজ্যের কেউ কখনো থানা বা অন্য কোথাও কোন অভিযোগ নিয়ে যেতে পারতেন না। সেটা যত বড় অপরাধ হোক না কেন বিচার হত ইয়াসিন ও ফারুকের আদালতে।

সম্প্রতি সরকার জঙ্গল সলিমপুরের খাস জমিতে কয়েকটা বৃহৎ কর্মকাণ্ড পরিকল্পনা করে। সেই অনুযায়ী তথ্যমন্ত্রীসহ কয়েকজন এমপি, সিটি মেয়র ও বিভিন্ন পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তারা একাধিকবার এই এলাকা পরিদর্শন করেন। তাতে ক্ষেপে গিয়ে গত ১৫ জুলাই সরকারি কর্মকর্তাদের সামনে স্থানীয় এক ইউপি সদস্যকে বুকে আগ্নেয়াস্ত্র ঠেকিয়ে মারধর করে ইয়াসিন বাহিনী। এরপর আলোচনায় আসেন ইয়াসিন ও তার ছোট ভাই ফারুক। এই ঘটনায় মামলা দায়ের হলে ১৮ জুলাই ইয়াসিনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। শুক্রবার (২২ জুলাই) আলীনগরে অভিযান চালায় জেলা প্রশাসন। অভিযানে তিনটি মাটি কাটার স্ক্যাভেটর, ৬টি ড্রাম ট্রাক ও ১টি বড় ট্রাক জব্দ করে প্রশাসন।

 

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়