Cvoice24.com

জঙ্গল সলিমপুরে বসছে র‌্যাবের অস্থায়ী ক্যাম্প

সিভয়েস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২০:০২, ৩০ জুলাই ২০২২
জঙ্গল সলিমপুরে বসছে র‌্যাবের অস্থায়ী ক্যাম্প

দেশের ভেতরে আরেক দেশ— নামে খ্যাত চট্টগ্রামের জঙ্গল সলিমপুরে র‌্যাবের অস্থায়ী ক্যাম্প বসানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। আগামীকাল রবিবার থেকেই এই অস্থায়ী ক্যাম্প বসছে বলে জানা গেছে। 

শনিবার (৩০ জুলাই) চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউসের সঙ্গে সরকারি বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এ সিদ্ধান্তের কথা আসে। জঙ্গল সলিমপুরে মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন নিয়ে এ বৈঠকের আয়োজন করেছিল চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন।

বৈঠকে স্থানীয় সন্ত্রাসীদের দৌরাত্ম্য কমাতে র‌্যাব-পুলিশকে পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দেন মুখ্য সচিব। এছাড়া পাহাড়ের ভেতরে চারটি বেসরকারি ব্যাংক বন্ধ, যোগাযোগের জন্য ব্যবহৃত সিএনজির রুট-পারমিট বাতিলসহ ৩ হাজার ৭০ একর জায়গার মধ্যে ২ হাজার একর জায়গার মধ্যে কোন কিছু করা যাবে না বলেও উঠে আসে।

এসময় উপস্থিত ছিলেন মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন, সুরক্ষা সেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব সৈয়দ বেলাল হোসেন, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শহীদুল আলম, বিভাগীয় কমিশনার মো. আশরাফ উদ্দিন, কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ এস এম আনিসুল হক, ডিআইজি (প্রিজন্স) এ কে এম ফজলুল হক, চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আনোয়ার হোসেন, সিএমপি কমিশনার কৃষ্ণপদ রায়, চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউজের কমিশনার ফখরুল আলম, সিডিএ চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষ, অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মিজানুর রহমান, জেলা প্রশাসক মমিনুর রহমান, জেলার এসপি এস এম রাশিদুল হক, র‌্যাব-৭-এর সিও লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. ইউসুফ প্রমুখ।

সভায় জঙ্গল সলিমপুরের খাস জমিতে পাহাড় কাটা ও খাস জমি দখলের অন্যতম সহযোগি হিসেবে পিডিবি’র কথা উঠে আসে। এসময় প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব পিডিবি’র বক্তব্য জানতে চাইলে চট্টগ্রাম দক্ষিণাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী রেজাউল করিম জানান, ২০১৬-২০১৭ সালে কোনো দালিলিক ভিত্তি ছাড়াই বিভিন্ন লোকের সুপারিশের প্রেক্ষিতে বিদ্যুৎ সম্প্রসারণের প্রজেক্টের মাধ্যমে লাইনগুলো নির্মাণ করা হয়। তবে ভূমিমন্ত্রীর নির্দেশনায় জঙ্গল সলিমপুরের যতটুকু পর্যন্ত লাইন বিচ্ছিন্ন করতে বলা হয়েছে; ততটুকুর বিদ্যুতের লাইন তুলে নিয়ে আসা হয়েছে। এখনও প্রায় দুই কিলোমিটার ১১কেভি সঞ্চালন লাইন ও ৪৪০ ভোল্টের সরবরাহ লাইন রয়েছে। এতে ১০-১২টি বড় ট্রান্সফরমার রয়েছে বলে জানান তিনি।

এদিকে, জঙ্গল সলিমপুরে সরকারি মহাপরিকল্পনার বাস্তবায়নের কথা উল্লেখ করেস্পোর্টস ভিলেজ, হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল, সাফারি পার্ক, ইকো পার্কসহ বিনোদনকেন্দ্র, চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার, উচ্চক্ষমতার বেতার সম্প্রচার কেন্দ্র, পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির প্রশিক্ষণকেন্দ্র, কাস্টমস ডাম্পিং হাউজ, ভূমিহীনদের পুনর্বাসন, সবুজ শিল্প এলাকা, আনসার ভিডিপি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র করার জন্য প্রত্যাশী সংস্থাগুলো জায়গা চেয়ে জেলা প্রশাসনে চিঠি দিয়েছে।

জঙ্গল সলিমপুরকে ঘিরে সরকারের যে মহাপরিকল্পনাটি গ্রহণ করা হয়েছে তার একটি মাষ্টার প্ল্যান আগামী এক থেকে দেড় মাসের মধ্যে বাস্তবায়ন করা হবে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান। এসময় পরিবেশ অক্ষুণ্ন রেখে চট্টগ্রামবাসীর জন্য চমৎকার একটি জায়গা পেতে সবার সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।

জঙ্গল সলিমপুরের খাস জমি দখলমুক্ত করতে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের মতবিনিময়।

শনিবার দুপুরে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে জঙ্গল সলিমপুরে বিভিন্ন সরকারী স্থাপনা নির্মাণে প্রত্যাশী সংস্থার সঙ্গে ও পাহাড় সংরক্ষণে মতবিনিময় সভা শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন জেলা প্রশাসক।  

মমিনুর রহমান বলেন, চট্টগ্রামে ৩ হাজার ১শ’ একর খাস জায়গা রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে এ খাস জায়গা বিভিন্ন ভূমিদস্যু ও সন্ত্রাসীরা পাহাড় দখল এবং পাহাড় কেটে বসতি স্থাপন করছে। তাই সেখানের দখলদারদের ‘হটিয়ে’ সরকারি বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণের জন্য সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

প্রসঙ্গত, বিগত দুই দশক আগে নোয়াখালী থেকে এসে সীতাকুণ্ডের জঙ্গল সলিমপুরে আস্তানা গাড়েন ইয়াসিন। দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে দাগি আসামি ও সন্ত্রাসীদের এনে গহীন পাহাড়ে গড়ে তোলে তার নিজস্ব বাহিনী। একের পর এক পাহাড় কেটে প্লট বিক্রি করে রাতারাতি কোটিপতি বনে যায় দুই ভাই ইয়াসিন ও ফারুক। সম্প্রতি সরকার জঙ্গল সলিমপুরের খাস জমিতে কয়েকটা বৃহৎ কর্মকাণ্ডের পরিকল্পনা করে।

সেই অনুযায়ী তথ্যমন্ত্রীসহ কয়েকজন এমপি, সিটি মেয়র ও বিভিন্ন পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তারা একাধিকবার এই এলাকা পরিদর্শন করেন। তাতে ক্ষেপে গিয়ে গত ১৫ জুলাই স্থানীয় সরকার চট্টগ্রাম বিভাগের উপ-পরিচালক বদিউল আলম, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) নাজমুল আহসান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এলএ) মাসুদ কামাল, সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহাদাত হোসেন, রেভিনিউ ডেপুটি কালেক্টর (আরডিসি) মং মারমা ও সীতাকুণ্ড উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আশরাফুল আলম ও সলিমপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সালা উদ্দিন আজিজের গাড়ি বহর থেকে নামিয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্যকে বুকে আগ্নেয়াস্ত্র ঠেকিয়ে মারধর করে ইয়াসিন বাহিনী।

সরকারী কর্মকর্তাদের সামনে ইউপি মেম্বারকে মারধরের ঘটনা হতবাক করে দেশবাসীকে। এ ঘটনায় ইউপি মেম্বারের ছোট ভাই বাদী হয়ে থানায় মামলা দায়ের করলে ইয়াসিনসহ ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরই মধ্যে ইয়াসিন বাদে পাঁচজন জামিনে বেরিয়ে এসেছেন।

সিভয়েস/এমএম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়