Cvoice24.com

দুর্ঘটনার ফাঁদ ওয়াসার কাটা রাস্তা

সিভয়েস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৬:৫০, ১৪ জুন ২০২১
দুর্ঘটনার ফাঁদ ওয়াসার কাটা রাস্তা

নগরের হামজারবাগ এলাকার সড়কে খোঁড়াখুঁড়ির পর বসানো লোহার প্লেটই এখন দুর্ঘটনার ফাঁদ ওঠছে।

তিনমাস আগে পাইপ লাইনের লিকেজ মেরামতের জন্য নগরের হামজারবাগ সেন্ট্রাল হল কমিউনিটি সেন্টার সংলগ্ন সড়কে ব্যাপক খোঁড়াখুঁড়ি করে চট্টগ্রাম ওয়াসা। উন্নয়ন কাজের অজুহাতে খোঁড়াখুঁড়ির পর ভাঙাচোরা সড়ক আর খানাখন্দ ঢাকতে ওয়াসা থেকেই বসানো হয় বেশ কিছু লোহার প্লেট। কিন্তু চলাচল উপযোগী করতে সড়কে বসানো এসব লোহার প্লেট হয়ে ওঠেছে মরণ ফাঁদ।

গত ৩ মাস যাবৎ ব্যস্ত সড়কটিতে ফেলা এসব লোহার প্লেটের বিভিন্ন অংশ তৈরি হয়েছে বেশ কিছু গর্ত। অল্প বৃষ্টিতে ভাঙাচোরা সড়কে সৃষ্ট গর্তে পানি জমে থাকায় ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে পথচারীদের। অপরিকল্পিতভাবে ফেলা ইট-কঙ্কর ও প্লেটের কারণে এবড়ো-থেবড়ো সড়কে যানবাহন আটকে যানজটের পাশাপাশি প্রায়শ ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। 

অভিযোগ আছে, খোঁড়াখুঁড়ির পর ভাঙাচোরা সড়কে লোহার প্লেট বসিয়েই দায় সেরেছে ওয়াসা কর্তৃপক্ষ। খানাখন্দে ভরা সড়কটির বেহাল দশার বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও সচেতন মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেও প্রতিকার পাননি বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী পথচারী এবং স্থানীয়রা।

তবে ওয়াসা কর্তৃপক্ষ বলছে, পাইপের ওপর প্রেশার বেশি পড়লে পুনরায় লিকেজ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এ কারণেই সড়কটির ওই অংশে লোহার প্লেটগুলো বসানো হয়েছিল। 

রবিবার (১৩ জুন) সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা যায়, সড়কও লোহার প্লেটের গর্তের কারণে গাড়ি চলছে হেলেদুলে। গর্ত ভরানোর জন্য ওয়াসার ফেলা ইট-কঙ্কর ওঠে আসছে গাড়ির চাকার সঙ্গে। ওয়াসার কাটা সড়কটি সংস্কার না করে ফেলে রাখায় বর্ষা শুরু হতে না হতেই পুরো সড়কে বিটুমিনের আস্তরগুলোও ওঠে আসছে।

বিগত তিন মাসে এ সড়কে সিএনজি-মোটরসাইকেলের ১৪ টি দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। তারা বলেন, খোঁড়াখুঁড়ির পর ওয়াসা কংক্রিট দিয়ে কোনোমতে গর্ত ভরানোর চেষ্টা করেছে, এতে উল্টো ভোগান্তি বেড়েছে। দুর্ঘটনা এড়াতে সংশ্লিষ্টদের দ্রুত পদক্ষেপ কামনা করেন তারা।

সড়কে চলাচলকারী এক সিএনজি চালক বলেন, এই রোডে গাড়ি চালাতে আমাদের চরম দুর্ভোগে পড়তে হয়। গর্তের কারণে বারবার গাড়ি নষ্ট হচ্ছে। গত পরশু লোহার প্লেটে আমার গাড়ির চাকা ফুটো হয়ে গেছে। কয়েকদিন আগে আমার সামনে একটি মোটরসাইকেল উল্টে গেছে। এই যদি হয় ওয়াসা উন্নয়ন তাহলে আমরা যাবো কই?

ভুক্তভোগী আব্দুস সত্তার বলেন, গত ৪ দিন আগে মোটরসাইকেল নিয়ে আমি এই সড়কের লোহার প্লেটের কারণে পড়ে গেছি। ওই সময় আশেপাশে গাড়ি না থাকায় বড় রকমের দুর্ঘটনা থেকে বেচে গেছি। তবে সারা শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত পেয়েছি।

আরেক ভুক্তভোগী ইসমাইল আলভী বলেন, কিছুদিন আগে রাতে মোটরসাইকেল নিয়ে এই সড়ক দিয়ে আসছিলাম। গাড়ি লোহার প্লেটের উপর উঠতেই গর্তে চাকা ঢুকে যায়। কোনও রকমে ব্যালেন্স করেছি। আরেকটু হলেই পড়ে যেতাম। আমাদের এভাবে আর কতো দুর্ভোগ পোহাতে হবে, এই ভোগান্তি দেখার কেউ কি নেই?

সানজিদা নিশাত নামে একজন বলেন, সপ্তাহখানেক আগে মুরাদপুর থেকে রিক্সায় করে বাসায় যাচ্ছিলাম। সেন্ট্রাল হল কমিউনিটি সেন্টারের সামনে আসতেই রিকশা উল্টে যায়। যদিও অল্পের জন্য বেচে গেছি। খুব ভয়ানক রাস্তা এটা। দ্রুত সংস্কার করা প্রয়োজন।

এবিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী মাকসুদ আলম সিভয়েসকে বলেন, ‘আমার জানামতে রাস্তাটিতে আমরা লিকেজ সারানোর কাজ করেছিলাম। এছাড়া ওখানে বাল্ব বক্স চেম্বার বসানোর কথা রয়েছে যার কারণে সাময়িকভাবে চলাচল উপযোগী করার জন্য সড়কটিতে আমরা লোহার প্লেটগুলো বসিয়েছি। তারপরও আমি ভালো করে খবর নিয়ে এই বিষয়ে আপনাকে জানাচ্ছি।’

পরবর্তীতে প্রতিবেদককে ফোন করে চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী বলেন, ‘আমি খবর নিয়েছি। বাল্ব বক্স চেম্বার বসানোর কাজ বাকি থাকায় রাস্তা ভরাট না করে আমরা প্লেটগুলো বসিয়েছিলাম। এগুলোর কারণে যেহেতু সমস্যা হচ্ছে তাই আমরা এগুলো রিপ্লেস করে দিবো। আমি আমাদের কনসালটেন্ট ইঞ্জিনিয়ার আপনার সাথে যোগাযোগ করে দ্রুত সমাধানের জন্য বলছি।’

এরপর চট্টগ্রাম ওয়াসার কনসালটেন্ট ইঞ্জিনিয়ার রতন কুমার সাহা সিভয়েস প্রতিবেদককে ফোন করে বলেন, ‘ওয়াসার পাইপ লাইনের লিকেজ সারানোর জন্য ওই স্থানে বেশ কিছুদিন আগে কাজ করা হয়েছিল। ওখানে এসি পাইপের লিকেজ সারানো হয়েছিল। লিকেজগুলো সহজে সারানো যায় না। পাইপের ওপর প্রেশার বেশি পড়লে আবার লিক হয়ে যায়, যার কারণে আমরা লোহার প্লেটগুলো সেখানে বসিয়েছিলাম। রাতের মধ্যে স্থানটি পরিদর্শন করে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানেকে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিচ্ছি।’

-সিভয়েস/জেআইএস

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়