Cvoice24.com

ট্রেনে ছিনতাইয়ের হটস্পটই যেন ‘ভৈরব’

সিভয়েস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২১:০৯, ৯ অক্টোবর ২০২১
ট্রেনে ছিনতাইয়ের হটস্পটই যেন ‘ভৈরব’

ফাইল ছবি।

চলন্ত ট্রেনের ছাঁদ থেকে একের পর এক চুরির ঘটনা ঘটেই চলেছে রেলওয়েতে। ট্রেনে ছিনতাইকারীদের ধরতে পুলিশের নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। কাউকে ছাদে উঠতে দেওয়া হচ্ছে না বলে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ দাবি করলেও আদতে এর কোন বাস্তব প্রতিফলন দেখতে পাচ্ছেন না বলে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ। সর্বশেষ গতাকাল শুক্রবার (৮ অক্টোবর) ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে আগত একই ট্রেনে দুবার ঘটেছে এমন ছিনতাইয়ের ঘটনা। এ নিয়ে গত তিন মাসে ভৈরব এলাকায় পাঁচবার এমন ঘটনা ঘটলেও অধরাই থেকে গেছে চোর চক্রের সদস্যরা; ধরা পড়েনি একজনও। 

প্রত্যক্ষদর্শী নাসরিন আক্তার বলেন, ‘শুক্রবার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে আমার সামনের সিটে বসা এক যাত্রীর সঙ্গে এ ঘটনা ঘটে। আমরা ‘ড’ বগির যাত্রী ছিলাম। ট্রেন তখন ভৈরব এলাকা পার হচ্ছে। জানালা খোলা ছিলো। হঠাৎ ট্রেনের ছাদ থেকে কালো জামা পড়া এক লোক উল্টো হয়ে নিচের দিকে নামছে। আর নামার সঙ্গে সঙ্গেই আমার সামনে থাকা যাত্রীর হাত ব্যাগ টান দিয়ে নিয়ে যায়। পরে ওই যাত্রী চিৎকার করে উঠলে আশপাশের লোকজন ছুটে আসে। তবে ততক্ষণে সেই চোর ব্যাগ নিয়ে উধাও। 

তিনি আরও জানান, ‘একই সময়ে ওই ট্রেনের আরেক বগিতেও (‘ঠ’ বগি) একই কায়দায় চুরি হয়েছে। একই ট্রেনে দু’বার ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে।

জানা গেছে, ভ্রমণের জন্য ট্রেনকে বেছে নেয়া যাত্রীরা যাত্রাপথে চুরি, ছিনতাইয়ের কবলে পড়ার কারণে অনেকেই রেলে যাতায়াত করাও কমিয়ে দিয়েছেন। একটি আন্তঃনগর ট্রেনে এক থেকে দেড় হাজার যাত্রী থাকলেও নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকে কয়েকজন রেলওয়ে পুলিশ। ফলে রাতের ট্রেনগুলোতে বেপরোয়া হয়ে ওঠে অপরাধীরা।

এ বিষয়ে জানতে রেলওয়ের এক উর্ধতন কর্মকর্তার সঙ্গে যোগযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘এসব ঘটনা প্রায়শই ঘটছে বলে শুনি। কিন্ত এরপর এ নিয়ে আমাদের কাছে অভিযোগ দেয় কজন? বেশির ভাগ যাত্রী আমাদের অভিযোগ দেন না। অভিযোগ না দিলে ব্যবস্থা নেয়া তো আসলে কঠিন হয়ে পড়ে।’ 

এছাড়া যাত্রীদেরও সতর্ক থাকতে অনুরোধ করে তিনি বলেন, ‘যাত্রীরা যারা রেলে ভ্রমণ করেন তারা একটু সতর্ক থাকলে এমন ঘটনা থেকে বেঁচে যাবেন। তাদের সব সময় জানালার পাশে কিছু রাখতে সতর্ক করা হয়। তাদের কাছে আমার অনুরোধ নিজ স্থান থেকে আপনারাও সতর্ক হোন।’

এর আগেও আগস্ট মাসে ভৈরব সংলগ্ন এলাকায় একই রকম ঘটনায় ভুক্তভোগী হয়েছিলেন ইমরান খান ও আশরিফা জেহান সাইমা দম্পত্তি। এ ব্যাপারে তারা রেলওয়ে থানায় অভিযোগও দায়ের করেছিলেন। কিন্তু সেখান থেকে তাদের পরমর্শ দেয়া হয় বিষয়টি ডিবিতে হস্তান্তর করতে কারণ তার হারিয়ে যাওয়া মোবাইল ফোন উদ্ধার করতে যে ট্র্যাকিং যন্ত্রের প্রয়োজন তা রেলওয়ের নেই। পরে ডিবিতে হস্তান্তর করা হলে শনিবার (৯ অক্টোবর) দুপুরে প্রায় দুই মাস পর তিনি তার ফোন ফিরে পান ডিবি পুলিশের সহায়তায়। তবে এ ঘটনায় মোবাইল উদ্ধার করা সম্ভব হলেও চোর ধরা পড়েনি বলেন জানান ভুক্তভোগী আশরিফা জেহান সাইমা। 

এছাড়াও গত সেপ্টেম্বর মাসে ভৈরব এলাকায় চলন্ত ট্রেনে চুরি করার সময় ট্রেনের এক যাত্রীর তোলা ছবিতে ভাইরাল হয়ে পড়ে এক চোরের ছবি। রেলওয়ে পুলিশ ওই ছবি দেখে চোরকে শনাক্ত করলেও এখন পর্যন্ত ধরতে পারেনি। এ নিয়ে ওই একই মাসে ভৈরব এলাকায় দ্বিতীয়বারের মতো এমন ঘটনা ঘটেছিলো। 

ভৈরব রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফেরদৌস আহমেদ বিশ্বাস সিভয়েসকে বলেন, ‘পারাবত এক্সপ্রেস ট্রেনে ছবির লোকটি একজন মহিলা যাত্রীর বেগ (হ্যান্ড পার্স) ছিনিয়ে নিয়ে চলন্ত ট্রেন থেকে নেমে যায়। এসময় ছবিগুলো ওই কোচে থাকা এক যাত্রী মোবাইলে তুলে ফেলে। আমরা এরপর থেকে ওই চোরকে ধরতে অভিযান চালিয়েছি। কিন্তু ছবি ভাইরাল হবার কারণে চোর সতর্ক হয়ে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায়। সে যখনি এদিকে আসবে তাকে আটক করা হবে। তবে ওই চুরি যাওয়া মহিলার বেগটি (হ্যান্ড পার্স) আমরা ওই চোরের বাড়ি থেকে উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছিলাম এবং ওই যাত্রীকে তার চুরি যাওয়া ব্যাগ ফিরিয়ে দেয়া হয়। তবে গতকাল (শুক্রবার) ঘটে যাওয়া তূর্ণা নিশীথা ট্রেনে ছিনতাইয়ের ব্যাপারে কিছু জানেন না বলেন জানান তিনি। 

চট্টগ্রাম রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নাজিম উদ্দিন বলেন, ‘এরকম কোন ঘটনার অভিযোগ আমাদের কাছে আসেনি। কেউ অভিযোগ দিলে আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা নিবো।’

-সিভয়েস/ওয়াইআর/এমএম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়