Cvoice24.com

চার বছরেও শেষ হয়নি চসিকের সেবক নিবাস প্রকল্প, কাজ হয়েছে ১৮ শতাংশ

শারমিন রিমা

প্রকাশিত: ১৭:০১, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২২
চার বছরেও শেষ হয়নি চসিকের সেবক নিবাস প্রকল্প, কাজ হয়েছে ১৮ শতাংশ

জামালখানের ঝাউতলায় ‘পরিচ্ছন্নকর্মী নিবাস’ নামে নির্মাণাধীন প্রকল্পটির কাজের অগ্রগতি মাত্র ১৭ শতাংশ।

কারও হাতে ঝাড়ু, কারও হাতে কোদাল-বেলচা। দিন কিংবা রাত নগরকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে এভাবে কাজে নেমে যান তারা। নগরবাসীর সারাদিনের জমানো ময়লা-আবর্জনা কুড়িয়ে শহর থেকে দূরে ডাম্পিং স্টেশনে নেওয়াই তাদের কাজ। শহরকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখার এ দায়িত্ব যারা কাঁধে নিয়েছেন তারা হলেন চট্টগ্রামের সেবক। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্ন বিভাগের আওতায় তারা (পরিচ্ছন্নকর্মী) কাজ করে চলেছেন। বংশ পরম্পরায় নগরের বান্ডেল কলোনি, ঝাউতলা, মাদারবাড়ি ও সাগরিকা এলাকার হরিজন কলোনিতে তাদের বসবাস।

চার বছর আগে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের এই সেবকদের জন্য ২৩১ কোটি ৪৩ লাখ টাকা ব্যয়ে ‘পরিচ্ছন্নকর্মী নিবাস’ নামে একটি প্রকল্প অনুমোদন দেয় একনেক। প্রকল্পটির আওতায় দুই বছরে সাতটি ভবন তৈরির কথা। তবে পরপর দুবার সময় নিয়েও এখনো পর্যন্ত একটি ভবনও তৈরি করতে পারেনি সংস্থাটি। চার বছরে কাজ হয়েছে মাত্র ১৮ শতাংশ।

এদিকে রাস্তার একপাশে তৈরি অস্থায়ী ঘরে মানবেতর জীবনযাপন করছে ৩ হাজার ৬৪৭ জন পরিচ্ছন্ন কর্মী। যদিও সেবকদের অস্থায়ী ঘরে সরিয়ে নেওয়ার জটিলতার কারণেই প্রকল্পের কাজ পিছিয়ে গেছে বলে দাবি করছে সংশ্লিষ্টরা।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, প্রকল্পটি নেওয়া হয় ২০১৭ সালে। এতে ব্যয় ধরা হয় ২৩১ কোটি ৪২ লাখ ৬৮ হাজার টাকা। প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয়েছে ২০১৮ সালের জুলাই থেকে ২০২০ সালের জুন মাস পর্যন্ত। প্রকল্প নেওয়ার ওই বছরের জুলাই মাসেই প্রকল্পের কাজ শুরু হওয়ার কথা ছিল। পরে একনেক সভায় অনুমোদনের পর নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে প্রকল্পের কাজ শুরু হতে পারে বলে জানায় চসিক। কিন্তু প্রকল্পের কাজ শুরু করতে না পারায় পরে করোনার কারণে আরও এক বছর মেয়াদ বাড়ায় মন্ত্রণালয়। কিন্তু সেই বর্ধিত সময় শেষেও কাজ শুরু না হওয়ায় মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত সময় নেয় চসিক। পরবর্তীতে ২০২১ সালে ভবনের পাইলিং-এর কাজ শুরু করে সংস্থাটি। আর এ পর্যন্তই আটকে আছে প্রকল্পটি। তবে বর্ধিত মেয়াদের মধ্যেও প্রকল্পের কাজ শেষ হবে না বলেও ধারণা সংশ্লিষ্টদের। 

জানা গেছে, এ প্রকল্পের আওতায় পরিচ্ছন্ন কর্মীদের জন্য ১৪ তলা বিশিষ্ট সাতটি ভবন নির্মাণ করা হবে। এতে ১ হাজার ৩০৯টি ফ্ল্যাট থাকবে। এর মধ্যে ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের বান্ডেল কলোনিতে ৩টি, ফিরিঙ্গীবাজারে ১টি, ঝাউতলায় ২টি এবং সাগরিকায় চসিকের নিজস্ব জায়গায় ১টি ভবন নির্মাণ করার কথা রয়েছে। এরমধ্যে ২টি ভবনের জায়গা পাওয়া গেছে, দুটি ভবনের জায়গা আংশিক পাওয়া গেছে। দুইটি ভবনের জায়গা আজও পাওয়া যায়নি। এছাড়া বান্ডেল কলোনির ৩টি ভবনের মধ্যে দুটি ভবনের জায়গা পাওয়া গেছে। সবমিলিয়ে পাঁচটি ভবনের কাজ শুরু করলেও ফিরিঙ্গীবাজারের ভবনের কাজ জলাবদ্ধতা প্রকল্পের কারণে মাঝপথে আটকে গেছে। আবার সাগরিকার জায়গায় কোরবানি পশুর বাজারের কারণে ওই এলাকার ভবনের কাজও শুরু করতে পারেনি। বর্তমানে প্রকল্পের কাজ শুরু হওয়া চারটি ভবনের একটিরও কাজ শেষ করতে পারেনি সংস্থাটি। 

যদিও চসিক বলছে, প্রকল্পের জন্য পুরাতন ভবনগুলো ভেঙে অস্থায়ী ঘরে সেবকদের স্থানান্তর করে নতুন ভবনের কাজ শুরু করতে গিয়ে বিপাকে পড়ে সিটি করপোরেশন। সেবকরা জায়গা না ছাড়ায় প্রকল্পের কাজ ঝুলে আছে।

ঝাউতলা সেবক কলোনির বাসিন্দা শিল্পী রানি বলছেন, ‘ভাড়া বাসায় থাকতে হলে অনেক টাকা দরকার। এতো টাকা আমরা কই পাবো? আর আমাদেরকে একটা জায়গায় সরালেই তো হবে না। আমাদের সাথে তো কেউ মিশতেই চায় না। আমরা যাবো কোথায়?

ঝাউতলা সেবক কলোনির আরেক বাসিন্দা সুভাস দাস। ‘পরিচ্ছন্নকর্মী নিবাস’ প্রকল্প সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি ক্ষোভ ঝেড়ে সিভয়েসকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী আমাদের কথা মাথায় রেখে এ উদ্যোগ নেন। কিন্তু আজকে এতো বছরেও আমরা একটা বিল্ডিংয়েরও দেখা পেলাম না। তারা আমাদের বারবার সরতে বলে। এ চিন্তায় আমাদের ঘুম আসে না। সারাক্ষণ শুধু মাথায় ঘোরে কবে জানি সরতে বলে! কিন্তু আমরা কই যাবো!’

প্রকল্প পরিচালক চসিকের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মুনিরুল হুদা সিভয়েসকে বলেন, ‘খালি জায়গা হলে এতোদিনে প্রকল্পের ৮০ থেকে ৯০ শতাংশের কাজ শেষ হয়ে যেতো। আমার রিটায়ারমেন্টের সময়ও হয়ে গেছে কিন্তু কাজ শেষ হলো না। সেবকদের ধারণা, তাদের সরিয়ে দিলে আর জায়গা দেওয়া হবেনা। আর এ কারণে তাদেরকে অস্থায়ীভাবে ঘরের ব্যবস্থা করেও কোনো কাজ হচ্ছে না। তারা সরতে চায় না। আমাদের প্রকল্পের কাজও শেষ হয়না।’

তিনি আরও বলেন, ‘অনেক দেরিতে প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। আপাতত পাঁচটি ভবনের কাজ শুরু করতে পেরেছি। কিন্তু চারটার কাজ চলছে। একটার কাজ জলাবদ্ধতা প্রকল্পের জন্য থেমে আছে। একটার তিনতলা পর্যন্ত করা গেছে। বাকিগুলোর কিছু একতলা আবার কিছুর পাইলিং চলছে। যদি কোনো একটি ভবনের কাজ পুরো শেষ হতো তাহলে একটাতে সেবকদের স্থানান্তর করে অন্যগুলোর কাজ শুরু করা যেতো। কিন্তু সেবকরা সে সুযোগ দিচ্ছে না আমাদের।’

প্রসঙ্গত, এ প্রকল্পে সরকারি তহবিল (জিওবি ফান্ড) থেকে ১৮৫ কোটি ১৪ লাখ ১৫ হাজার টাকা আর বাকি ৪৬ কোটি ২৮ লাখ ৫৩ হাজার টাকা চসিকের নিজস্ব তহবিল থেকে ব্যয় করা হবে। ১৪তলা বিশিষ্ট প্রতিটি ভবনের প্রত্যেকটিতে ১’শ ৮৭টি করে ফ্ল্যাট তৈরি করা হবে। প্রতি ফ্ল্যাটে বেডরুম, টয়লেট, কিচেন, বারান্দা, ইউনিট এরিয়া ও লবি রাখা হবে প্রতি ফ্লোরে। পাশাপাশি প্রতি ভবনে সিঁড়ি, ফায়ার ফাইটিং ব্যবস্থা রাখা হবে। প্রতি ভবনে থাকবে অত্যাধুনিক লিফটের ব্যবস্থা।

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়