Cvoice24.com

চসিক পাবলিক লাইব্রেরির নামকরণ হলো ভাষা সৈনিক মাহবুব উল আলম চৌধুরীরে নামে

সিভয়েস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২০:১৫, ১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
চসিক পাবলিক লাইব্রেরির নামকরণ হলো ভাষা সৈনিক মাহবুব উল আলম চৌধুরীরে নামে

‘কাঁদতে আসিনি ফাঁসির দাবি নিয়ে এসেছি’— একুশের প্রথম কবিতা। এই অমর কবিতার রচয়িতা কবি ও ভাষা সৈনিক মাহবুব উল আলম চৌধুরীর নামে রাখা হল পাবলিক লাইব্রেরির নাম। ১৯০৪ সালে স্থাপিত চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন পাবলিক লাইব্রেরির নাম সংশোধন করে মাহবুব উল আলম চৌধুরী চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন পাবলিক লাইব্রেরি নামে নামকরণ করা হয়েছে। 

বুধবার (১ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে পাবলিক লাইব্রেরির নতুন নামফলক উন্মোচন করেন চসিক মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী।

নতুন নামফলক উন্মোচন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মেয়র বলেন, “ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রতিটি ক্ষেত্রে চট্টগ্রামের বীর সন্তানরা সাহসী ভূমিকা রেখেছে। তাদের ভূমিকাকে চিরস্মরণীয় করে রাখতে চট্টগ্রামে বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ ও নামকরণ করা হবে। কবি মাহবুব উল আলম চট্টগ্রামের ভাষা আন্দোলনকে সুসংগঠিত করেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে তরুণ ছাত্রনেতারা যখন বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে লড়ছেন, রক্ত ঝরাচ্ছেন তখন কবি মাহবুব উল আলম ভাষা আন্দোলনের প্রথম কবিতা রচনা করেন। কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য লিখেছিলেন, ‘ক্ষুধার্ত বাতাসে শুনি এখানে নিভৃত এক নাম চট্টগ্রাম: বীর চট্টগ্রাম!’ আজ বীর চট্টগ্রামের কৃতি সন্তান কবি মাহবুব উল আলমের নামে এ লাইব্রেরির নামকরণ করতে পেরে আমি গর্বিত।”

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সমাজ বিজ্ঞানী এবং প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. অনুপম সেন বলেন, তরুণ প্রজন্মের প্রতি আমার আহ্বান আপনারা কবি মাহবুব উল আলমের প্রতিবাদী চেতনাকে ধারণ করুন। আপনাদের নেতৃত্বে গড়ে উঠুক বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা। যে বাংলা হবে ক্ষুধা-দারিদ্রমুক্ত, সাম্প্রদায়িকতা মুক্ত সাম্যের ঠিকানা।’

সভাপতির বক্তব্যে চসিক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করে আধুনিক চট্টগ্রাম গড়তে চসিক কাজ করছে। বই যুক্তি শেখায়, মুক্তি দেয়। এই লাইব্রেরি পাঠকদের মাঝে আলো ছড়াবে, তাদের স্বাধীনতার চেতনা শেখাবে এই আমার কামনা। 

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন — প্যানেল মেয়র মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন, কাউন্সিলর নিছার উদ্দিন আহমদ মঞ্জু, মো. ওয়াসিম উদ্দিন চৌধুরী, গোলাম মোহাম্মদ জুবায়ের, আবদুস সালাম মাসুম, রুমকি সেনগুপ্ত, কবি মাহবুব উল আলমের জামাতা স্থপতি ইশতিয়াক আহমদ আলম চৌধুরী, মেয়রের একান্ত সচিব মোহাম্মদ আবুল হাশেম, চসিকের প্রধান শিক্ষা কর্মকর্তা লুৎফুন নাহার, আঞ্চলিক কর্মকর্তা রেজাউল করিম।

একুশের প্রথম কবিতার কবি মাহবুব উল আলম চৌধুরী চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার গহিরায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৪৮ থেকে ১৯৫৬ সাল পর্যন্ত ভাষা আন্দোলনের সাথে সরাসরি যুক্ত ছিলেন। বাংলাকে রাষ্টভাষা প্রতিষ্ঠার দাবিতে চট্টগ্রামে সর্বদলীয় রাষ্টভাষা সংগ্রাম পরিষদ কমিটির আহবায়ক ছিলেন মাহবুব উল আলম চৌধুরী এবং যুগ্ন আহবায়ক ছিলেন চৌধুরী হারুনুর রশীদ এবং এম এ আজিজ। 

২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় ছাত্রদের ওপর পুলিশের গুলিবর্ষণের ঘটনার খবর পেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে তিনি কাঁদতে আসিনি ফাঁসির দাবী নিয়ে এসেছি কবিতাটি রচনা করেন। এ কবিতাটি ভাষা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে রচিত প্রথম কবিতা হিসেবে স্বীকৃত। ঢাকায় গুলিবর্ষনের প্রতিবাদে ২৩ ফেব্রুয়ারি সমগ্র চট্টগ্রামে সাধারন ধর্মঘট পালিত হয়। লালদিঘি ময়দানে বিকাল ৩টায় অনুষ্ঠিত সর্বদলীয় প্রতিবাদ সভার জনসমুদ্রে “কাঁদতে আসিনি, ফাঁসির দাবি নিয়ে এসেছি”কবিতাটি আবৃত্তি করেন চৌধুরী হারুনুর রশীদ। এর কয়েকদিন পরেই সেসময়কার মুসলিম লীগ সরকার কবিতাটি বাজেয়াপ্ত করে। মাহবুব উল আলম চৌধুরী আমৃত্যু নিজ শহর চট্টগ্রাম ও সমগ্র বাংলাদেশে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের সাথে যুক্ত ছিলেন। ২০০৯ সালে তিনি মরণোত্তর একুশে পদকে ভূষিত হন।

চিটাগাং মিউনিসিপ্যাল লাইব্রেরি নামে ১৯০৪ সালের ৮ জুন চট্টগ্রাম পৌরসভার প্রথম ভবনে প্রতিষ্ঠিত হয় এই লাইব্রেরিটি। তবে লাইব্রেরির এ ভবনটি তৈরি হয় তারও আগে অর্থাৎ ১৮৫৮ সালে। তখন এটিকে জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করা হতো। পরবর্তীতে ১৮৬৩ সালের ২২ জুন চট্টগ্রাম মিউনিসিপ্যাল কমিটি গঠিত হলে এই ভবনে শুরু হয় কমিটির কার্যক্রম। 

১৯০৪ সালে চট্টগ্রাম মিউনিসিপ্যালটি আন্দরকিল্লায় স্থানান্তরিত হলে এই ভবনেই প্রথম ‘চিটাগাং মিউনিসিপ্যাল লাইব্রেরি’ প্রতিষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর চিটাগাং মিউনিসিপ্যাল লাইব্রেরি নাম পরিবর্তন করে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনপাবলিক লাইব্রেরি নামে নামকরণ করা হয়।
 

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়