Cvoice24.com

সিআরবিতে হাসপাতাল ইস্যুতে অবস্থান জানাতে আরও সময় চায় চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগ 

সিভয়েস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২০:২৭, ১৪ জুলাই ২০২১
সিআরবিতে হাসপাতাল ইস্যুতে অবস্থান জানাতে আরও সময় চায় চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগ 

চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা হাসপাতালের প্রস্তাবিত স্থান পরিদর্শন করছেন।

চট্টগ্রাম নগরের বুকে এক টুকরো সুবজে ঘেরা সিআরবি ‘রক্ষায়’ চট্টগ্রামের বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষের প্রতিবাদের পর আসল ঘটনা কি তা জানতে সিআরবিতে ছুটে গেলেন চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা। উত্তর, দক্ষিণ ও মহানগর এই তিন ইউনিটের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা একজোটে সেখানে গিয়ে হাসপাতালের প্রস্তাবিত স্থান পরিদর্শনের পাশাপাশি কথা বলেছেন প্রকল্প পরিচালকের সাথে। 

হাসপাতালের থ্রি-ডি অ্যানিমেশন দেখাসহ প্রকল্পের খুটিনাটি সবই খতিয়ে দেখে বলছেন— সরেজমিন পরিদর্শন করে ফেসবুকে প্রচারিত শিরিষতলার সাথে কোনও মিল পাওয়া যায়নি প্রস্তাবিত হাসপাতালের স্থানের। এছাড়া রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ পরিবেশকে রক্ষা করে যেভাবে হাসপাতাল করার কথা জানিয়েছে তাতে আপতত সন্তুষ্ট তারা। এরপরও উত্তর, দক্ষিণ ও মহানগররের নেতারা রেলওয়ের জিএম ও মন্ত্রীর সাথে কথা বলার এই ইস্যুতে একটি আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেবেন। সেজন্য তারা আরও কিছুদিন সময় চান নিজেদের অবস্থান পরিস্কার করতে।     

বুধবার (১৪ জুলাই) সকাল থেকেই বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের কর্মীরা সিআরবিতে অবস্থান নিয়ে হাসপাতাল নির্মাণের বিরোধীতা করেন। একই সমেয় সেখানে যান চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও চট্টগ্রাম ৮ আসনের এমপি মোসলেম উদ্দীন আহমদ, উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এম এ সালাম, মহানগরের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দীন চৌধুরী, নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন, দক্ষিণের সেক্রেটারি মফিজ উদ্দীন ও উত্তরের সেক্রেটারি আতাউর রহমান। 

মূলত বুধবার সকাল থেকেই সিআরবি এলাকায় মানবন্ধন, বিক্ষোভ জানাতে থাকে চট্টগ্রামের বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবি বিভিন্ন  সংগঠন। আওয়ামী লীগের সাথে পাল্লা দিয়ে সদলবলে সিআরবিতে গিয়ে হাসপাতাল নির্মাণের প্রতিবাদ জানিয়ে গাছের চারা রোপণ করেছেন নগর বিএনপির আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেনও। একই দাবিতে বুধবার সিআরবিতে মানবন্ধন করেছে গণসংহতি আন্দোলন চট্টগ্রাম জেলা।

সাত রাস্তার মোড় হয়ে সড়কের বাম পাশে বর্তমান রেলওয়ে হাসপাতাল, পাশের খালি জমি, রেলওয়ে হাসপাতাল কলোনি রোড এবং এই রাস্তাটির দুপাশে থাকা প্রায় ৫০টি কর্মচারী কোয়ার্টার (একতলা সেমিপাকা) নিয়ে মোট ছয় একর জমিতে হাসপাতালটি নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়েছে। ২০১৩ সালের ১৪ আগস্ট অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির (সিসিইএ) সভায় প্রকল্পটি পিপিপিতে বাস্তবায়নের নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়। গত বছরের ১৩ ফেব্রুয়ারি পিপিপি প্রকল্পটি অনুমোদন দেওয়া হয় সিসিইএ সভায়। সর্বশেষ ২০২০ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী চূড়ান্ত অনুমোদন দেন।

এরপর গত বছরের ১৮ মার্চ ইউনাইটেড এন্টারপ্রাইজ অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেডের সাথে সঙ্গে চুক্তি করে বাংলাদেশ রেলওয়ে। তারপর চলতি বছরের শুরুতে নির্ধারিত জমির সামনে প্রকল্পের একটি সাইনবোর্ড লাগানো হয়। এই প্রকল্পের পরিকল্পনা ও সহযোগী সংস্থা বাংলাদেশ সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব কর্তৃপক্ষ (পিপিপি)। কার্যনির্বাহী সংস্থা বাংলাদেশ রেলওয়ে এবং বাস্তবায়ন ও পরিচালনা করবে ইউনাইটেড চট্টগ্রাম হাসপাতাল লিমিটেড। প্রকল্প বাস্তবায়নের মেয়াদ ধরা হয়েছে ১২ বছর। প্রকল্পের আওতায় ১০০ আসনের একটি মেডিকেল কলেজ, ৫০ আসনের একটি নার্সিং ইনস্টিটিউট এবং দুই ধাপে মোট ৫০০ শয্যার একটি হাসপাতাল নির্মাণ করা হবে। এতে প্রায় ৪০০ কোটি টাকা খরচ হবে। ৫০ বছর পর প্রকল্পের মালিকানা হবে রেলওয়ের। এরপরই রেলওয়ের ওই স্থানে বৈধভাবে বসবাসকারীদের সরিয়ে নেয় রেলওয়ে। 

তবে শুরু থেকেই এ হাসপাতাল নির্মাণ নিয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে মুখোমুখি অবস্থানে ছিল রেলওয়ে শ্রমিকলীগ, সিবিএসহ বিভিন্ন সংগঠন। বেশ কয়েক দফা আলোচনার পর সেই ঝামেলা কেটে গেলে এবার সেখানে হাসপাতাল নির্মাণের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে চট্টগ্রামের পরিবেশবাদী, সংস্কৃতি ব্যক্তিত্ব ও বিশিষ্টজনরা। 

এ আন্দোলনের প্রেক্ষিতে চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগের নেতাদের একত্রে করার উদ্যোগ নেন উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এম এ সালাম। তার আহ্বানে সাড়া দিয়ে সরেজমিনে সিআরবিতে যান চট্টগ্রাম উত্তর, দক্ষিণ ও মহানগরের ছয় শীর্ষ নেতা। তারা সেখানে গিয়ে প্রকল্প পরিচালক ও রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলেরর অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (সেতু) এবং প্রকল্প পরিচালক মো. আহসান জাবিরে সাথে কথা বলেন। তার কাছ থেকে প্রকল্পের বিস্তারিত জেনে নেন। একই সাথে প্রস্তাবিত স্থানও পরিদর্শন করেন। 

জানতে চাইলে উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এম এ সালাম সিভয়েসকে বলেন, ‘সিআরবিতে প্রস্তাবিত হাসপাতাল নিয়ে ফেসবুকসহ নানা মাধ্যমে নানা রকম কথা শুনা যাচ্ছিল। সেকারণে বিষয়টির বিস্তারিত জানতে আমি মোসলেম ভাই, আ জ ম নাছির,মাহাতাব ভাইকে কল করে সার্কিট হাউজে আসতে অনুরোধ করি। সকালে আমরা উত্তর দক্ষিণ ও মহানগরের সভাপতি সেক্রেটারিরা একত্রে বসেছিলাম। সেখান থেকে রেলমন্ত্রীকে ফোনে ট্রাই করেছিলাম, তবে পাইনি। পরে সিআরবিতে গিয়ে প্রস্তাবিত স্থান সরেজিমনে দেখলাম। এরপর পিডির সাথে কথা বলেছি। প্রকল্পের বিস্তারিত দেখলাম। তবে আমরা এখনই পক্ষে বিপক্ষে কোনও সিদ্ধান্ত দিব না। রেলের জিএম, মন্ত্রী তাদের সাথে কথা বলব। প্রকল্পের আরও কিছু আছে কিনা তাও বিস্তারিত জানব। এরপর যৌথভাবে একটি বিবৃতি দিব।’ 

একই প্রসঙ্গে সাবেক মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন সিভয়েসকে বলেন, ‘ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছিল সিআরবি শিরিষ তলার কথা। আমরা সরেজিমনে গিয়ে দেখলাম শিরিষতলায় হবে না হাসপাতালটি হবে গোয়ালপাড়ার দিকে। সেখানে রেলওয়ের চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের কোয়ার্টার ছিল যা অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছে। এছাড়া বর্তমান বক্ষব্যাধি হাসপাতালসহ কিছু অবৈধ স্থাপনা রয়েছে। কয়েকটি গাছ আর টিলা রয়েছে। এখন প্রকল্প পরিচালক থ্রিডি অ্যানিমিশনের মাধ্যমে আমাদের দেখিয়ে বলেছেন, যেখানে হাসপাতাল হবে সেখানে পরিবেশকে রক্ষা করেই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। তারা এক্ষেত্রে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালের চিত্র দেখালেন। ফেসবুকে যে শিরিষতলা বা সিআরবি রক্ষার কথা বলা হচ্ছিল সেখানে এ হাসপাতাল হচ্ছে না।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা সরকারি দলের রাজনীতি করি। সরকার জনগণের বিরুদ্ধে কোনও কাজ কখনো করেনি করবেও না। তাই আমরা হুট করে ফেসবুকের স্ট্যাটাস পড়ে মন্তব্য করতে পারিনা। সেজন্য সরেজমিনের পরিদর্শন ও অ্যানিমেশন দেখেছি। পিডির সাথে কথা বলেছি। তাতে বলতে পারেন আমরা আপতত সন্তুষ্ট। তবে আরও বিস্তারিত জানতে হবে। তার পর উত্তর, দক্ষিণও মহানগর আওয়ামী লীগ যৌথ একটি বিবৃতি দিব।’ 

একই কথা জানিয়ে এম এ সালাম বলেন, ‘সরকারের নেওয়া প্রকল্পটি নিয়ে বিভ্রান্ত হওয়ার সুযোগ নেই। রেলওয়েকে বলেছি তাদের অবস্থানটি আরও স্পষ্ট করে প্রচার করতে। জনগণকে অন্ধকারে রেখে কোন কাজ করার দরকার নেই।’ 
 
গতকাল মঙ্গলবার বিকেল ৫টার দিকে রেলপথ মন্ত্রী অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম সুজন এমপি সিভয়েসকে বলেছিলেন, ‘বিরোধীতাকারীরা বিরোধিতা করবেই। আমরা প্রস্তাবিত জায়গায় হাসপাতাল নির্মাণ করব। সেখানে পরিবেশের কোনও ক্ষতি হচ্ছে না। আমরা সব কিছু মেনটেইন করে আমাদের কাজ এগিয়ে নিচ্ছি।’

রেলওয়ের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (সেতু) এবং প্রকল্প পরিচালক মো. আহসান জাবির সিভয়েসকে বলেছেন, 'হাসপাতাল নিয়ে যে বিভ্রান্তি এটা কেউ উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে সৃষ্টি করেছে। এ হাসপাতাল শিরিষতলায় করা হবে না। বর্তমান রেলওয়ে হাসপাতালের পাশে পরিত্যক্ত জায়গায় এটা করা হচ্ছে। ওখানে একটি শতবর্ষী গাছ আছে। সেটা কাটা হবে না, সেভাবেই প্ল্যানে আছে।’ 

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়