তর সইছে না রেজাউলের, পরিস্থিতি দেখছেন শাহাদাত

প্রকাশিত: ১২:২৬, ৪ ডিসেম্বর ২০২০
তর সইছে না রেজাউলের, পরিস্থিতি দেখছেন শাহাদাত

ছবি: সিভয়েস

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) স্থগিত নির্বাচন ঘিরে মাঠের লড়াইয়ে ফের সরব হয়ে উঠেছেন প্রার্থীরা। বিভিন্ন দলের সাত মেয়র প্রার্থী থাকলেও মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস মিলেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ মনোনীত এম রেজাউল করিম চৌধুরী ও বিএনপির ডা. শাহাদাত হোসেনের মধ্যে। আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনী প্রচারণা বন্ধ থাকলেও কৌশলে মাঠে সক্রিয় আছেন দুজনই।

কর্মী বাহিনীকে চাঙ্গা করে তুলতে দলীয় বিভিন্ন কর্মসূচিতে সরব চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম চৌধুরী। করোনা পরিস্থিতি যেমনই হোক, আর নির্বাচন পেছানোর পক্ষে না তিনি। তার দাবি করোনার মধ্যেই যখন জনজীবন স্বাভাবিকভাবে চলছে আর বিভিন্ন নির্বাচন হচ্ছে সেখানে চসিক নির্বাচন কেন স্থগিত থাকবে। আবার হামলা-মামলাসহ বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও মাঠ ছাড়েননি নগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন। তাদের তৎপরতায় নগরীতে আবারও ফিরেছে নির্বাচনী আমেজ।  

দলীয় সূত্রে জানা যায়, নৌকার প্রার্থী রেজাউল প্রতিদিনই কোনো না কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠার ডাক দিচ্ছেন। পাশাপাশি আহ্বান জানাচ্ছেন আসন্ন চসিক নির্বাচনে দলের পক্ষে কাজ করার। তার পক্ষে বিভিন্ন সভা-সমাবেশে কথা বলছেন নগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীনও। 

আরও পড়ুন : চসিক নির্বাচন নিয়ে কি প্রস্তুতি ইসির

স্থগিত নির্বাচনে ভোটের আভাস ও নিজের প্রস্তুতি নিয়ে এম রেজাউল করিম চৌধুরী সিভয়েসকে বলেন, ‘আমরা নির্বাচন করার জন্য প্রস্তুত আছি। নৌকাকে জয়ী করতে দলের সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করছে। প্রতিদিন বিভিন্ন ওয়ার্ডে সভা করা হচ্ছে।’ এখন তো করোনার সময়, সামনে যদি সংক্রমণ আরও বাড়ে তখন কী করবেন- জবাবে রেজাউল বলেন, ‘এখন স্বাস্থ্যবিধি মেনে নগরবাসী সব কিছু করছে। করোনার জন্য তো কোনো কিছু থেমে থাকেনি। এমনকি দেশের বিভিন্ন স্থানেও নির্বাচন হয়েছে। আমরা চাই দ্রুত নির্বাচন দেওয়া হোক। সামাজিক দূরুত্ব মেনে আমরা ভোটে অংশ নিবো।’ 

করোনা দিনদিন বাড়ছে চট্টগ্রামে। যখন করোনার সংক্রমণ চট্টগ্রামে পৌঁছেনি তখন কিন্তু চট্টগ্রাম সিটির ভোট গ্রহণ স্থগিত করেছিল নির্বাচন কমিশন। করোনা পরিস্থিতি খারাপ হলেও কি নির্বাচন চান? এমন প্রশ্নের উত্তরে রেজাউল করিম বলেন, ‘করোনার মধ্যেই যখন জনজীবন স্বাভাবিকভাবে চলছে আর বিভিন্ন নির্বাচন হচ্ছে সেখানে চসিক নির্বাচন কেন স্থগিত থাকবে? করোনাকালীন আমি নগরজুড়ে স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী বিতরণ করেছি। এছাড়া মানুষ এখন সচেতন। এছাড়া নির্বাচন কমিশনও ভোটারদের সুরক্ষা ব্যবস্থা নিবে নিশ্চয়। তাছাড়া নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি না থাকার কারণে নগরবাসী তাদের সেবা থেকে অনেকটাই বঞ্চিত হচ্ছে। জন্মনিবন্ধন, সনদপত্রসহ যাবতীয় কাজ থমকে গেছে। জনদুর্ভেোগ লাগবে দ্রুত সময়ের মধ্যে নির্বাচন হোক।’ 

আরও পড়ুন : যে শঙ্কায় ভোট স্থগিত, সেই প্রাণঝুঁকিতে ভোটাররা

করোনার উর্ধ্বমূখী সংক্রমণের মধ্যেও নির্বাচন নিয়ে রেজাউলের তর না সইলেও প্রস্তুতিতে রেজাউলের চেয়ে কিছুটা পিছিয়ে থাকলেও ধানের শীষের প্রার্থী ডা. শাহাদাতও ভোটের লড়াইয়ে নিজেকে জানান দিচ্ছেন। ইউনিট পর্যায়ে ছোট ছোট সভা-সমাবেশের মাধ্যমে নির্বাচনী কর্মকাণ্ডের পরিকল্পনা থাকলেও অভিযোগ তুলছেন শত বাধার। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় বাধা দলের শীর্ষপর্যায় থেকে তৃণমূল নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগে থাকা মামলা। এর মধ্যে প্রার্থী ডা. শাহাদাতের বিরুদ্ধেই মামলা আছে ৫১টি। এসব মামলায় আদালতে হাজিরা দিতে দিতেই দিন কাটে তাদের। আবার মতবিনিময় সভা করতে সরকার ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে বাধা দেওয়ারও অভিযোগ বিএনপি প্রার্থীর। 

নতুন করে ভোটের বিষয়ে মেয়র প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেন সিভয়েসকে বলেন, ‘জানতে পারছি নির্বাচন কমিশন চসিক নির্বাচনের নতুন তারিখ ঘোষণা করবে। তবে করোনার বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে। কেননা আমরা সাধারণ মানুষকে নিয়ে রাজনীতি করি। এখন করোনার যে অবস্থা সামনে যদি আরও বাড়তে থাকে তাহলে নির্বাচন পিছিয়ে দিতে হবে।’

আরও পড়ুন : ‘মানুষ না থাকলে নির্বাচন করে কি হবে’

নগর বিএনপির এই সভাপতি বলেন, ‘আমরা ইউনিট পর্যায়ে সভা-সমাবেশ শুরু করেছি। স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী এবং ওষুধ বিতরণ কার্যক্রমের সঙ্গে ছোট ছোট সভার মাধ্যমে মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা কর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় করছেন। এ বিষয়ে পুলিশ থেকে অবশ্য মৌখিক সম্মতি পাওয়া গেছে। সমস্যা হচ্ছে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী মতবিনিময় করতে চাইলে অনুমতি লাগে না। আর আমাদের তা নিতে হয়। এ জন্য আমরা সমান সুযোগ পাচ্ছি না। এ ছাড়া শত শত গায়েবি মামলা দিয়ে নেতাকর্মীদের হয়রানি করা হচ্ছে। এসব প্রতিবন্ধকতার মধ্যেই আমাকে নিতে হচ্ছে ভোটের প্রস্তুতি। এর পরও নির্বাচন করতে আমরা প্রস্তুত আছি। আমাদের নির্বাচনী এজেন্টরাও তৈরি আছেন।’

চসিক নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল গত ২৯ মার্চ। কিন্তু করোনা মহামারীর কারণে ভোটের সপ্তাহখানেক আগে অর্থাৎ ২১ মার্চ তা স্থগিত করা হয়। এই নির্বাচনে অন্য মেয়র প্রার্থীরা হলেন- বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের এমএ মতিন, পিপলস পার্টির আবুল মনজুর, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের মুহাম্মদ ওয়াহেদ মুরাদ ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মো. জান্নাতুল ইসলাম। এ ছাড়া সাধারণ ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে রয়েছেন ২৬৯ প্রার্থী।

সর্বশেষ ২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন ভোট হয়। সে অনুযায়ী নির্বাচনী আইন বলছে, ৫ আগস্টের পূর্ববর্তী ১৮০ দিনের মধ্যে নির্বাচনের বাধ্যবাধকতা। কিন্তু বৈশ্বক মহামারী করোনার কারণে নেই নিয়ম আর মানা যায়নি।

-সিভয়েস/এমএন/এস/এডি

সিভয়েস প্রতিবেদক

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়