Cvoice24.com

নালায় পড়ে ছাত্রী মৃত্যুর দায় সিডিএ’র ঘাড়ে চাপালেন মেয়র

সিভয়েস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৬:৫০, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২১
নালায় পড়ে ছাত্রী মৃত্যুর দায় সিডিএ’র ঘাড়ে চাপালেন মেয়র

চট্টগ্রামের আগ্রাবাদে নালায় পড়ে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছাত্রীর মৃত্যুর ঘটনার দায় চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) ঘাড়ে চাপিয়েছেন চসিক মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী। 

নালা পরিষ্কার ও স্ল্যাব দেওয়ার দায়িত্ব চসিকের হলেও মেয়রের দাবি— এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা হিসেবে সিডিএ’র নিয়ন্ত্রণে এই সড়কটি। তাই সেখানে চসিকের কোন হাত নেই। সিডিএ’র অবহেলা ও অসতর্কতার কারণে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে।

মঙ্গলবার (২৮ সেপ্টেম্বর) সকালে নগরের আগ্রাবাদে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়ে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী।

এর আগে সোমবার রাত ১০টার দিকে ডবলমুরিং থানার আগ্রাবাদ শেখ মুজিব সড়কে মাজার গেট এলাকায় নালায় পড়ে নিখোঁজ হন সেহেরীন মাহবুব সাদিয়া (১৯)। তিনি চট্টগ্রামের আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্রী ছিলেন। প্রায় পাঁচ ঘণ্টা পর রাত ৩টার দিকে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দলের সদস্যরা নালা থেকে হালিশহর থানার বড়পোল বাসিন্দা সাদিয়ার মৃত উদ্ধার করেন।

মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান। এসময় চসিকের কর্মকর্তাদের নিয়ে তিনি পুরো এলাকা ঘুরে দেখেন। এরপর তিনি সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মেয়র রেজাউল বলেন, ‘এখানে উন্নয়নের কাজ যারা বাস্তবায়ন করছেন (সিডিএ) তাদের দায়িত্ব ছিল জনগণের নিরাপত্তা দেওয়া। খালের পাশে ফুটপাতটা দেড় ফুটে এনে রেখে দিয়েছে। দেড় ফুট জায়গা দিয়ে হাঁটতে গেলেতো সুস্থ মানুষও দিনের বেলায় পড়ে যাবে। রাতের বেলার কথা বাদ দিলাম। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে সেখানে একটি লোহার নেট ছিল সেটিও তারা তুলে ফেলেছে। অন্তত নেটটা থাকলে এই দুর্ঘটনা ঘটত না।’

দুর্ঘটনার জন্য কে দায়ী? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে মেয়র বলেন, ‘দায়ী কারা এটা বলব না। আপনারা জানেন, এখানে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ চলছে। রাস্তায় গর্ত হয়েছে। ফুটপাতের ওপর কাদা জমেছে। বৃষ্টির পর সেই কাদা পিচ্ছিল হয়ে গিয়েছিল। কাদার ওপর পা পড়ার পর পিছলে মেয়েটি নালায় পড়ে গেছে বলে আমি শুনেছি। এখানে যারা প্রকল্পের কাজ করছে, তাদের সতর্ক হওয়া দরকার ছিল। পানিতে রাস্তা এবং নালা এক হয়ে গেছে, মানুষ বুঝবে কিভাবে? খুঁটি গেড়ে লাল পতাকা টানিয়ে দিলেও তো মানুষ সতর্ক হতে পারত। কিছুটা অবহেলা আছে। অবশ্যই আছে। যারা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ করছে তাদের অবহেলা আছে।’

ফুটপাতে স্ল্যাব ও রেলিং দেওয়ার দায়িত্ব সিটি করপোরেশনের— বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দিলে মেয়র বলেন, ‘আপনাদের অবগত করার জন্য বলছি, দেওয়ানহাট থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের যে কাজ চলছে, এগুলো সিটি করপোরেশনের আওতায় নেই এখন। এটার মেইনট্যানেন্স থেকে শুরু করে সমস্তকিছু চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব। এখানে বড় বড় গর্ত হয়েছে, আমি কয়েকদিন আগেও সিডিএ’র চেয়ারম্যানকে টেলিফোন করে অনুরোধ করেছি। তারপর থেকে উনার নির্দেশে গর্তে কিছু ভাঙা ইট দেওয়া হয়েছে। সুতরাং আমি মনে করি, অবহেলা ও অসতর্কতার জন্য এই দুর্ঘটনা ঘটেছে।’

নালা ময়লা-আবর্জনায় পরিপূর্ণ থাকার বিষয়ে মেয়র বলেন, ‘ড্রেন ময়লায় ভর্তি ছিল, এটা সত্য। যেহেতু কাজ চলছে, সমস্ত ময়লা তো ওখানে গিয়ে পড়ছে। এখানে মেইনটেন্যান্সের সব দায়িত্ব তো সিডিএর। ড্রেনে ময়লা আছে, কিন্তু ড্রেনের পাশে ঘেরা ছিল না, রেলিং ছিল না, সেগুলো থাকলে তো এই দুর্ঘটনাটা ঘটত না। এতবড় এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ চলছে, ময়লা পড়বেই এখানে। কিন্তু আমাদের রেলিং ছিল, স্ল্যাবও ছিল, এগুলো তো সব কাজ করতে গিয়ে নষ্ট করে ফেলেছে।’

পাল্টাপাল্টি দোষারপ করে দায় এড়ানোর চেষ্টা কিনা জানতে চাইলে মেয়র বলেন, ‘এভাবে চলতে থাকবে— এটা বলা ঠিক না। আমার কথা হচ্ছে, কাজ করতে গেলে... আমরা উন্নয়নের কাজ করব। কিন্তু জনগণের নিরাপত্তাটা যাতে থাকে, সেদিকে লক্ষ্য রাখা। আমি আহ্বান জানাব, যে সেবা সংস্থাই কাজ করুক না কেন, রাস্তায় একটা গর্ত করলেও যেন ঘেরা দেওয়া হয়। বিদেশে একটা ছোট রাস্তা করতে গেলে গর্ত হলেও ঘেরা দেওয়া হয়। কিন্তু আমাদের এখানে সেটা দেখি না।’

‘সিটি করপোরেশনের যেখানে কাজ চলে, আমারটা আমি বলতে পারি, আমি নিশ্চিত করব। প্রথমে মানুষের জীবন। মানুষের জন্যই তো উন্নয়ন। মানুষের জীবন রক্ষা করতে না পারলে উন্নয়ন কিভাবে হবে?’— যোগ করেন মেয়র রেজাউল করিম।

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়