Cvoice24.com

ফের বাড়ল কর্ণফুলী টানেলের নির্মাণ ব্যয় ও সময়

সিভয়েস ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৫:৩২, ১৭ জানুয়ারি ২০২৩
ফের বাড়ল কর্ণফুলী টানেলের নির্মাণ ব্যয় ও সময়

ছবি: সংগৃহীত

ডলারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে ফের বাড়ছে বঙ্গবন্ধু কর্ণফুলী টানেলের নির্মাণ প্রকল্পের খরচ। সেইসঙ্গে বেড়েছে প্রকল্পের মেয়াদও। দ্বিতীয়বারের মতো প্রকল্পটি সংশোধনে নির্মাণ ব্যয় বাড়ছে ৩১৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে আবার ঠিকাদারের বিল পরিশোধসহ বিভিন্ন আমদানি খাতে খরচ বাড়ছে প্রায় আড়াইশ কোটি টাকা। ফলে সব মিলিয়ে এখন এই প্রকল্পে খরচ হবে ১০ হাজার ৬৮৯ কোটি টাকা। 

মঙ্গলবার (১৭ জানুয়ারি) জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রকল্পটি শেষ করার জন্য এর আগে সময় দেওয়া হয়েছিল ২০২২ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত। এই মেয়াদ আরও এক বছর বাড়ানো হয়েছে।

একনেক সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর আগে গত বছরের নভেম্বর মাসে প্রকল্পটি সংশোধনের প্রস্তাব দিয়ে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠিয়েছিল সেতু কর্তৃপক্ষ।

কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বহু লেনবিশিষ্ট এই টানেল নির্মাণ হচ্ছে। বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, প্রায় শেষের দিকে প্রকল্পটি। শিগগির যান চলাচলের জন্য টানেল খুলে দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।

পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, কর্ণফুলী টানেলসহ একনেক সভায় সব মিলিয়ে ১১টি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়। এর মধ্যে অন্যতম হলো চট্টগ্রামের পটিয়ার শ্রীমাই নদে বাঁধ নির্মাণ, বরিশালে শেখ হাসিনা সেনানিবাসকে নদী ভাঙন থেকে রক্ষায় প্রকল্প, মাতারবাড়ী কয়লা-বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প (সওজ অংশ), কিশোরগঞ্জের মিঠামইন উপজেলা সদর থেকে করিমগঞ্জ উপজেলার মরিচখালী পর্যন্ত উড়াল সড়ক নির্মাণ, বাংলাদেশের ২৪টি শহরে অন্তর্ভুক্তিমূলক স্যানিটেশন প্রকল্প ও ক্লাইমেট চেঞ্জ এডাপটেড আরবান ডেভেলপমেন্ট ফেজ-২ (খুলনা) প্রকল্প।

এদিকে গত কয়েক মাসে ডলারের দাম ৮৬ টাকা থেকে বেড়ে ১০৬ টাকা হয়েছে। সে কারণে এই প্রকল্পের খরচ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়। এছাড়া আসবাব কেনা, শুল্ক-কর বৃদ্ধির কারণেও খরচ বাড়ছে বলে জানা যাচ্ছে।

২০১৫ সালের ১২ নভেম্বর একনেক সভায় চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর দুই পাড়ে চীনের সাংহাইয়ের আদলে ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’ গড়ে তুলতে টানেল নির্মাণ প্রকল্প অনুমোদন করে সরকার। প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে। নির্মাণ কাজ করছে চীনা কোম্পানি- চায়না কমিউনিকেশন কনস্ট্রাকশন লিমিটেড (সিসিসি)। তখন ৮ হাজার ৪৪৬ কোটি ৬৩ লাখ টাকা ব্যয়ে ২০২০ সালের জুনের মধ্যে কাজ শেষ করার লক্ষ্য নিয়ে প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়। পরে ২০১৮ সালের ৪ নভেম্বরের একনেক সভায় প্রায় ১ হাজার ৯২৮ কোটি টাকা ব্যয় এবং বাস্তবায়ন সময় এক বছর ৬ মাস বাড়িয়ে প্রথমবার প্রকল্পটি সংশোধন করা হয়। তাতে ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা।

তখন প্রকল্পটি ২১ সালের ডিসেম্বরে শেষ করার লক্ষ্য ধরা হলেও কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে সরকার বড় প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে স্বয়ংক্রিয়ভাবে এক বছর বাড়ানোর সুযোগ দেয়। সে হিসাবে প্রকল্পটি গত ডিসেম্বর মাসে শেষ করার কথা ছিল। আবার ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল’ নির্মাণ প্রকল্পের ব্যয় আরও ৩ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব একনেক সভায় পাস হয়েছে।। প্রকল্পটির মেয়াদ আরও এক বছর বাড়িয়ে ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে কাজ শেষ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। সংশোধন প্রস্তাবটি অনুমোদন পাওয়ায় প্রকল্প ব্যয় দাঁড়াবে ১০ হাজার ৬৯০ কোটি টাকা।

প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ৩ দশমিক ৩২ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই টানেলে প্রতিটি টিউব বা সুড়ঙ্গের দৈর্ঘ্য ২ দশমিক ৪৫ কিলোমিটার। একটির সঙ্গে অন্য টিউবের দূরত্ব ১২ মিটারের মতো। প্রতিটি টিউবে দুইটি করে মোট চারটি লেইন তৈরি করা হয়েছে। টানেলের পূর্ব ও পশ্চিম প্রান্তে থাকছে ৫ দশমিক ৩৫ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক। এছাড়া ৭২৭ মিটার দৈর্ঘ্যের একটি ওভারব্রিজ রয়েছে আনোয়ারা প্রান্তে।

চট্টগ্রাম নগরীর পতেঙ্গায় নেভাল একাডেমির পাশ দিয়ে ১৮ থেকে ৩১ মিটার গভীরতায় নেমে যাওয়া এই টানেল কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ-পূর্বে আনোয়ারায় সিইউএফএল ও কাফকোর মাঝামাঝি এলাকা দিয়ে বের হবে।

৩৫ ফুট প্রশস্ত ও ১৬ ফুট উচ্চতার টানেলে দু’টি টিউব দিয়ে যানবাহন চলাচল করবে। টানেলের উত্তরে নগরীর দিকে আউটার রিং রোড, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, কাটগড় সড়ক, বিমানবন্দর সড়ক এবং পতেঙ্গা বিচ সড়ক দিয়ে টানেলে প্রবেশ করা যাবে। নদীর তলদেশে টানেলের দুটি টিউবের নির্মাণকাজ শেষ, ভেতরে অবকাঠামোগত কাজ চলছে।

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়