বাদলের পর কালুরঘাট সেতু দেখা হল না মোছলেম উদ্দীনেরও

সিভয়েস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ০২:১০, ৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
বাদলের পর কালুরঘাট সেতু দেখা হল না মোছলেম উদ্দীনেরও

কর্ণফুলী নদীতে কালুরঘাটে নতুন করে সড়ক কাম রেল সেতুর দাবিতে তিন মেয়াদে সংসদে ও মন্ত্রণালয়ে দৌঁড়ঝাপ করে ‘ব্যর্থ’ হন চট্টগ্রাম ৮ আসন থেকে ২০০৮, ১৪ ও ১৮ সালে নির্বাচিত সংসদ সদস্য মইন উদ্দীন খান বাদল। রাগে ক্ষোভে এক পর্যায়ে ২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনের আগে বলেছিলেন এক বছরের মধ্যে সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু না হলে সংসদ থেকেই পদত্যাগ করবেন তিনি। তার এ ঘোষণার বছর না পেরুতেই ২০১৯ সালের ৭ নভেম্বর ভারতের বেঙ্গালুরুর একটি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন ৬৭ বছর বয়সী এই রাজনীতিক।

কালুরঘাট সেতু দেখে না যাওয়ার আক্ষেপ নিয়ে বাদল কবরে গেলেও তার আসনে উপ নির্বাচনে মনোনয়ন পান প্রবীণ রাজনীতিক বোয়াখালীর বাসিন্দা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোছলেম উদ্দীন আহমদ। তিনি ২০২০ সালের ১৩ জানুয়ারি চট্টগ্রাম-৮ আসন থেকে উপ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে নির্বাচিত হয়ে প্রথমবারের মত সংসদ সদস্য হন। নির্বাচনের আগে তিনিও চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে নির্বাচনী ইশতেহার প্রদানের সময় ঘোষণা দিয়েছিলেন নির্বাচিত হলে এক বছরের মধ্যেই কালুরঘাট সেতুর নির্মাণ কাজ করা শুরু করবেন। এমনকি গত বছরের ৪ ডিসেম্বর চট্টগ্রামে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে পলোগ্রাউন্ড মাঠে সেতু স্বপ্ন নয় বাস্তব উল্লেখ করে ২০২৩ সালে নির্মাণ কাজ উদ্বোধনের কথাও জানিয়েছিলেন। এমনকি সেতুটির নাম বঙ্গবন্ধুর বড় ছেলে বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ কামালের নামে নামকরণের দাবিও জানান তখন। 

কিন্তু বাদলের পর মোছলেম উদ্দীনও দেখে যেতে পারেন নি কালুরঘাট সেতুর নির্মাণ কাজ। রোববার (৫ ফেব্রুয়ারি) দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে ঢাকার এভার কেয়ার হাসপাতলে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। তিনি দীর্ঘ দিন ধরে ক্যান্সার আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন ছিলেন।  

২০২০ সালের ১৩ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত উপনির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমেদ। নির্বাচিত হওয়ার এক বছরের মধ্যে সেতুর নির্মাণকাজ শুরুর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে, রেল মন্ত্রণালয়ে ব্যাপক দৌঁড়ঝাপের পরও এক বছরের মধ্যে কাজ শুরু হয়নি। বরং সেতুটির ওপর দিয়ে কক্সবাজারে ট্রেন নিতে এখন সংস্কারের দিকে যাচ্ছে রেলওয়ে। 

কালুরঘাট সেতু দিয়ে এখন প্রায় ১২ মেট্রিক টন এক্সেল লোডের অর্থাৎ ছোট লোকোমোটিভ বা হালকা ওজনের কোচ চলাচল করে। কিন্তু কক্সবাজারে এ বছরের মধ্যেই যেসব ট্রেন নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে সরকার। ওই রেল পথে যেসব ট্রেন যাবে সেগুলোর ইঞ্জিন ১৫ মেট্রিকটনের এক্সেল লোডেও বেশি। সেকারণে ২৫ এক্সেল লোডের ট্রেন চালানোর উপযোগী করে সংস্কারের জন্য ‍বুয়েটের পরিকল্পনা চেয়েছে রেলওয়ে। বুয়েটের টিম মার্চ-এপ্রিলের মধ্যে তাদের সমীক্ষা প্রতিবেদন জমা দিলে টেন্ডার আহ্বান করা হবে। ১০ থেকে ১২ কোটি টাকা খরচ করে এই বছরের মধ্যেই সংস্কার কাজ শেষ করার পরিকল্পনা রয়েছে রেলওয়ের। 

এদিকে, সংস্কার কাজ শুরুর আগেই কালুরঘাট সেতুর ওপর চাপ কমাতে কর্ণফুলী নদীতে যানবাহন পারাপারের জন্য ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যেই দু’টি ফেরি চালুর কাজ এগিয়ে নিচ্ছে সওজ। সেতুর দুপাশে দু’টি অস্থায়ী জেটি স্থাপনের কাজ চলছে। অ্যাপ্রোচ সড়কের কাজ শেষ হয়েছে। এখন বেইলি সড়কের কাজ চলছে। ফেব্রুয়ারি মধ্যেই কালুরঘাটে ফেরি চালু হবে। সেজন্য তিনটি ফেরি ইতোমধ্যে কালুরঘাটে আনা হয়েছে। 

কালুরঘাটে নতুন সেতু নির্মাণ না হওয়া পর্যন্ত ফেরিগুলো চলাচল করবে। ফেরিতে প্রতি ট্রিপে ছোট-বড় মিলিয়ে মোট ২১টি যানবাহন পার হবে। তবে সংস্কার কাজ শুরুর আগ পর্যন্ত ছোট গাড়ি সেতুর ওপর দিয়ে চলবে। সংস্কার কাজ শুরু হলে সব গাড়িই বহন করতে হবে ফেরিকে।

গত বছরের আগস্টে কোরিয়ার একটি প্রতিষ্ঠান সেতুর একটি নকশা তৈরি করে, যাতে সম্মতি দেন প্রধানমন্ত্রী। নতুন এই নকশা চূড়ান্ত হলেও ২০২৫ সালের আগে নির্মাণকাজ শুরুর সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছেন কালুরঘাট সেতু নির্মাণ সংক্রান্ত ফোকাল পারসন মো. গোলাম মোস্তফা। তিনি জানান, সম্ভাব্য দাতা সংস্থা কোরিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ব এক্সিম ব্যাংকের নিয়োগ করা প্রতিষ্ঠান ইওসিন ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন বা দোহা নতুন নকশায় সেতু নির্মাণের প্রাথমিক সমীক্ষা প্রতিবেদন গত ২৯ নভেম্বর জমা দেয়। সম্প্রতি তারা ওই প্রতিবেদন চূড়ান্ত করেছে। ইতোমধ্যে তারা সেটি কোরিয়ান ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট কো-অপারেশন ফান্ডের (ইডিসিএফ) কাছে জমাও দিয়েছে। আগামী সপ্তাহে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ সেই প্রতিবেদন পাবে বলে আশা করছে।

চূড়ান্ত প্রতিবেদন পাবার পর চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়ে প্রকল্পের সারসংক্ষেপ তৈরি করতে আমাদের জুলাই-আগস্ট পর্যন্ত সময় লাগবে। এরপর ইডিসিএফ’র সঙ্গে ঋণচুক্তি হবে। ডিটেইল ডিজাইনের জন্য কনসালটেন্ট নিয়োগ করা হবে। এরপর সেটি একনেকে উঠবে। সেখানে পাস হলে টেন্ডারসহ যাবতীয় প্রক্রিয়া শেষে ২০২৫ সালের শুরুতে কাজ শুরুর আশা আছে। তারপর সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ হতে চার থেকে পাঁচ বছর লাগতে পারে।

নতুন নকশায় সেতু নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়েছে সিঙ্গেল ডেকে অর্থাৎ চার লেনের সেতুর একপাশে থাকবে ট্রেন আসা-যাওয়ার দু’টি পথ এবং অপর দু’টি পথ থাকবে গাড়ি আসা-যাওয়ার জন্য, যাতে সাত হাজার কোটি টাকা সম্ভাব্য ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে।
 

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়