সিআরবির হাসপাতালটি বঙ্গমাতার নামে নামকরণের অনুমোদন, আগামী বছরই কাজ শুরু

সিভয়েস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৩:০৬, ২০ ডিসেম্বর ২০২১
সিআরবির হাসপাতালটি বঙ্গমাতার নামে নামকরণের অনুমোদন, আগামী বছরই কাজ শুরু

নির্মিতব্য এই হাসপাতালটির নামকরণ করা হয়েছে, বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিবের নামে।

চট্টগ্রামের একটি পক্ষের বিরোধিতার পরও সিআরবির ‘পরিত্যক্ত’ স্থানে হাসপাতাল নির্মাণে এগিয়ে যাচ্ছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বে নির্মিতব্য এই হাসপাতালটির নামকরণ করা হয়েছে, ‘বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব স্বাস্থ্যসেবা কমপ্লেক্স’ নামে। রেলওয়ের আবেদনটি অনুমোদনের পর গত ৬ ডিসেম্বর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্টের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মাশুরা হোসেন স্বাক্ষরিত একটি চিঠির মাধ্যমে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিবকে বিষয়টি জানানো হয়। সিভয়েসের কাছে এ সংক্রান্ত চিঠি সংরক্ষিত রয়েছে। 

প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আগামী বছরের শুরুর দিকে নির্ধারিত স্থানেই বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব স্বাস্থ্যসেবা কমপ্লেক্সের নির্মাণ কাজ শুরু হবে। প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন। যদিও তার দিনক্ষণ এখনো চূড়ান্ত হয়নি। এসব চূড়ান্ত করতে কাজ করছে রেলপথ মন্ত্রণালয়। 

এর আগে, গত ২ ফেব্রুয়ারি সিআরবিতে এই নির্মিতব্য হাসপাতালটির নামকরণ বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিবের নামে করতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্টের কাছে আবেদন করে রেলপথ মন্ত্রণালয়। করোনাকালে ট্রাস্টের সভা বন্ধ থাকলেও গত ২৭ অক্টোবর ট্রাস্টি বোর্ড সভায় রেলের আবেদনটির অনুমোদন দেয়া হয়। রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব মো. আলী কবীর স্বাক্ষরিত চিঠিতে চট্টগ্রামের সিআরবি চত্বরে হাসপাতাল নির্মাণের নামকরণের বিষয়টি আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে প্রকল্প পরিচালককে নির্দেশনা দেন। হাসপাতালটি বঙ্গমাতার নামে করার প্রস্তাবের বিষয়টি তুলে ধরে সর্ব প্রথম সিভয়েসে গত ৮ আগস্ট একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছিল। সেখানে উল্লেখ করা হয়েছিল চট্টগ্রাম নগরের এক জনপ্রতিনিধি সিআরবির হাসপাতালটির নাম বঙ্গমাতার নামে নামকরণ করতে অনুরোধ করেছিলেন। 

ইউনাইটেড গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান মেসার্স ইউনাইটেড এন্টারপ্রাইজ বাংলাদেশ রেলওয়ের নিজস্ব জমিতে পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) আওতায় ‘স্টাবলিশমেন্ট অব এ ৫০০ বেড মাল্টি স্পেশিয়ালিটি হসপিটাল অ্যান্ড এ ১০০ সিট মেডিকেল কলেজ অন বাংলাদেশ রেলওয়ে সিট অ্যাট চিটাগাং’ শিরোনামে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। 

প্রকল্প পরিচালক ও রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (সেতু) মো. আহসান জাবির বলেন, ‘নির্মিতব্য হাসপাতালটি প্রস্তাবিত স্থানেই হবে। ইতোমধ্যে তা বঙ্গমাতার নামে করার অনুমোদন পাওয়া গেছে। মন্ত্রণালয় থেকে কাজ শুরু করতে নির্দেশনা এসেছে। আমরা শিগগিরই মাঠের কাজ শুরু করবো।’

রেলওয়ে জানায়, পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপের আওতায় (পিপিপি) এ হাসপাতালে থাকবে ৫শ’ শয্যা ও ১শ’ আসনের মেডিকেল কলেজ। তবে প্রকল্পের শুরুর প্রথম ৩ বছরে চালু হবে ২৫০ শয্যা। বাকি ২৫০ শয্যা চালু হবে আরও ২ বছর পরে। অর্থাৎ মোট ৫ বছরে চালু হবে বিশেষায়িত ৫শ’ শয্যা। এরপর মেডিকেল কলেজ, মসজিদ, হোস্টেল, স্টাফ কোয়ার্টারসহ বিভিন্ন সুবিধা চালু করতে সময় লেগে যাবে আরও পরবর্তী ৬ বছর। সবমিলিয়ে আধুনিক হাসপাতালের এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হতে সময় লাগবে ১১ বছর।

হাসপাতালটির ডিজাইনে রয়েছে— প্রায় ২ দশমিক ৪২ একর জমিতে গড়ে তোলা হবে ৫শ’ শয্যা, ইউটিলিটি বিল্ডিং ও হাসপাতাল বিল্ডিং। পরের ফেজে ৩ দশমিক ৫৮ একর জমিতে গড়ে তোলা হবে মসজিদ, মেডিকেল কলেজ, নার্সিং কলেজ, চিকিৎসক, নার্সদের জন্য পৃথক হোস্টেল। এর বাইরে আরও থাকছে স্টাফ কোয়াটার ও পুরুষ হোস্টেল।

সাত রাস্তার মোড় হয়ে সড়কের বাম পাশে বর্তমান রেলওয়ে হাসপাতাল, পাশের খালি জমি, রেলওয়ে হাসপাতাল কলোনি রোড এবং এই রাস্তাটির দু’পাশে থাকা প্রায় ৫০টি কর্মচারী কোয়ার্টার (একতলা সেমিপাকা) নিয়ে মোট ছয় একর জমিতে হাসপাতালটি নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়েছে।

২০১৩ সালের ১৪ আগস্ট অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির (সিসিইএ) সভায় প্রকল্পটি পিপিপিতে বাস্তবায়নের নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়। গত বছরের ১৩ ফেব্রুয়ারি পিপিপি প্রকল্পটি অনুমোদন দেওয়া হয় সিসিইএ সভায়। সর্বশেষ ২০২০ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী চূড়ান্ত অনুমোদন দেন।

এরপর গত বছরের ১৮ মার্চ ইউনাইটেড এন্টারপ্রাইজ অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেডের সঙ্গে চুক্তি করে বাংলাদেশ রেলওয়ে। তারপর চলতি বছরের শুরুতে নির্ধারিত জমির সামনে প্রকল্পের একটি সাইনবোর্ড লাগানো হয়। এই প্রকল্পের পরিকল্পনা ও সহযোগী সংস্থা বাংলাদেশ সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব কর্তৃপক্ষ (পিপিপি)। কার্যনির্বাহী সংস্থা বাংলাদেশ রেলওয়ে এবং বাস্তবায়ন ও পরিচালনা করবে ইউনাইটেড চট্টগ্রাম হাসপাতাল লিমিটেড। প্রকল্প বাস্তবায়নের মেয়াদ ধরা হয়েছে ১২ বছর। প্রকল্পের আওতায় ১শ’ আসনের একটি মেডিকেল কলেজ, ৫০ আসনের একটি নার্সিং ইনস্টিটিউট এবং দুই ধাপে মোট ৫শ’ শয্যার একটি হাসপাতাল নির্মাণ করা হবে। এতে প্রায় ৪শ’ কোটি টাকা খরচ হবে। ৫০ বছর পর প্রকল্পের মালিকানা হবে রেলওয়ের। এরপরই রেলওয়ের ওই স্থানে বৈধভাবে বসবাসকারীদের সরিয়ে নেয় রেলওয়ে। 

রেলওয়ে সূত্র জানায়, সিআরবির প্রস্তাবিত হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজটির নির্মাণে পিপিপির আওতায় অংশ নেয় তিনটি প্রতিষ্ঠান। দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের অর্থ সম্পাদক মুজিবুর রহমান সিআইপির মালিকানাধীন স্মার্ট গ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান নাসিরাবাদের ডেনিম মিলস লিমিটডে। দ্বিতীয়টি হলো সিডিএ’র সাবেক চেয়ারম্যান ও নগর আওয়ামী লীগের অর্থ সম্পাদক আবদুচ ছালামের মালিকাধীন ওয়েল গ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জয়েন্টবেঞ্চারে ‘ওয়েল-সানজি-ম্যাক্স’ লিমিটেড। তৃতীয় প্রতিষ্ঠান হচ্ছে ঢাকার ইউনাইটেড গ্রুপের ইউনাইটেড এন্টারপ্রাইজ অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেড। টেন্ডারের সব শর্ত পূরণ ও সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে হাসপাতালটির নির্মাণ কাজ পায় ইউনাইটেড এন্টারপ্রাইজ। 

  • প্রস্তাবিত স্থানেই হবে হাসপাতাল, বাধা দিলে ব্যবস্থা— সিভেয়সকে রেলের ডিজি 

যদিও গত মার্চ মাস থেকে চট্টগ্রামের কয়েকজন বিশিষ্টব্যক্তি থেকে শুরু করে সাধারণ জনগণের একটা অংশ সিআরবি এলাকায় প্রস্তাবিত হাসপাতাল নির্মাণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। সেই বিরোধীদের তালিকায় আছেন সরকার দলীয় ও বিরোধী দলীয় রাজনৈতিক নেতারাও। ইতোমধ্যে স্মারকলিপির মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর কাছে নিজেদের আপত্তির কথা জানিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। চিঠি দেওয়া হয়েছে রেলপথ মন্ত্রীকেও। 

আন্দোলন যতই হোক সরকারের নীতি নির্ধারণী পর্যায়ের খবর হলো, কভিড পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের অপেক্ষায় ছিল সরকার। এখন পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এসেছে বলে মাঠ পর্যায়ের কাজ শুরু হবে। ইতোমধ্যে পানির স্তর, বাতাস ও শব্দের পরিমাপ পরীক্ষা করা হয়েছে। মাটির রিপোর্ট পাওয়া গেলেও পানির পাওয়া যায়নি। পরিবেশ সংরক্ষণ করে কীভাবে হাসপাতালটির নির্মাণ করা যায় সে বিষয়েও পেপার ওয়ার্কের কাজ করছে রেলওয়ে ও বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান ইউনাইটেড এন্টারপ্রাইজ। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে কাজ এগিয়ে নেওয়ার বার্তা তাদের দেওয়া হয়েছে।

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়