মিতু হত্যা মামলাকে প্রভাবিত করতেই বাবুলের মামলার আবেদন : আদালত
সিভয়েস প্রতিবেদক
স্ত্রী মিতু হত্যা মামলায় কারাবন্দী সাবেক এসপি বাবুল আক্তারকে রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) প্রধান বনজ কুমার মজুমদারসহ সংস্থাটির ছয় কর্মকর্তার বিরুদ্ধে করা মামলার আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন আদালত। তার কারণ হিসেবে আদালত বলেছেন— মিতু হত্যা মামলার বিচারকাজ প্রভাবিত করতেই বাবুল আক্তার মামলার আবেদন করেছেন। তার অভিযোগগুলোও অসত্য বলে মনে হয়েছে আদালতের।
রবিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ ড. বেগম জেবুননেছা শুনানি শেষে আবেদনটি খারিজ করার সময় এসব পর্যবেক্ষণের কথা জানান।
একই কথা বলে আসছিল মামলার তদন্ত সংস্থা পিবিআইও। যে সংস্থার প্রধান কর্মকর্তাসহ ছয় পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলার আবেদন করেছিলেন বাবুল আক্তার। তার মামলার আবেদনের পরই বাবুলকে প্রধান আসামি করে ৭ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র আদালতে জমা দেয় পিবিআই।
চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতের পিপি বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট মো. ফখরুদ্দিন চৌধুরী বিচারকের বরাতে সিভয়েসকে বলেন, ‘হেফাজতে নির্যাতনের যে অভিযোগ বাবুল আক্তার করেছেন তা এক বছর ৪-৫ মাস আগের। এরই মধ্যে তিনি জামিন শুনানিতে অসংখ্যবার আসলেও কখনও এসব অভিযোগ তুলেননি। মামলাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে এই অভিযোগ তুলেছেন বাবুল আক্তার।’
পিপি আরও বলেন, ‘বাবুল আক্তার নিজের আবেদনেও বলেছেন তাকে তদন্তকারী কর্মকর্তা স্যার ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন। আদালতের প্রশ্ন হলো একজন এসপিকে একজন পরিদর্শক কীভাবে শারিরীকভাবে নির্যাতন করতে পারে? তাছাড়া তদন্ত কর্মকর্তা নিজেও একসময় বাবুলের অধীনে কাজ করেছেন। মূলত মিথ্যা ও অবাস্তব অভিযোগ এনে মিত্যু হত্যা মামলার তদন্তকে প্রভাবিত করতেই এসব অভিযোগ করেছেন বাবুল আক্তার। এছাড়া তিনি যেসব ধারায় অভিযোগ এনেছেন সেটাও সঠিক হয়নি বলে আদালত বলেছেন।’
রাষ্ট্র পক্ষের এ আইনজীবী আদালতের বরাতে আরও বলেন, ‘বাবুল আক্তারকে যখন ২০২১ সালের ১৭ মে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী নেওয়ার জন্য আদালতে হাজির করা হয়েছিল, তখন বিচারকের খাস খামরায় তাকে তিন ঘণ্টা সময় দেওয়া হয়েছিল। যেটা তার মাইন্ড ফ্রেশের জন্য। এরপর তার কাছে বিচারক জানতে চেয়েছিলেন তাকে রিমান্ডে কোন নির্যাতন করা হয়েছে কিনা? তখন কিন্তু বাবুল আক্তার এ ধরণের কোন অভিযোগ আনেন নি। এখন মামলার অভিযোগপত্র যখন জমা দেওয়ার সময় তিনি মিথ্যা বানোয়াট অবান্তর কতগুলো অভিযোগ এনে মামলাকে বাধাগ্রস্থ, ক্ষতিগ্রস্থ ও প্রভাবিত করার অপচেষ্টা করছেন।’
এ কারণে রবিবার বাবুলের করা মমালার আবদনের শুনানি শেষে পিবিআই প্রধান বনজ কুমার মজুমদারসহ ছয় পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে করা মামলার আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন আদালত।’ একইসঙ্গে চট্টগ্রামের বাইরে হওয়ায় ফেনী কারাগারে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য জেল সুপারকে নির্দেশের আবেদনও নামঞ্জুর করা হয় বলে জানান পিপি।
এরআগে ৮ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ ড. বেগম জেবুননেছার আদালতে মামলার আবেদনটি করা হয়।
বাবুলের করা মামলায় বিবাদী করা হয়েছিল— পিবিআই প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি বনজ কুমার মজুমদার ও পিবিআই চট্টগ্রাম জেলার এসপি নাজমুল হাসান, পিবিআই মেট্রোর এসপি নাঈমা সুলতানা, মেট্রোর তৎকালীন পরিদর্শক (বর্তমানে ওসি-খুলশী) সন্তোষ কুমার চাকমা, তৎকালীন পরিদর্শক (বর্তমানে এসি-পাহাড়তলী) এ কে এম মহিউদ্দিন সেলিম ও পিবিআই’র পরিদর্শক কাজী এনায়েত কবীরকে।
মামলার আবেদনে বিবাদীদের বিরুদ্ধে ২০২১ সালের ১০ থেকে ১৭ মে পর্যন্ত সময়ে পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রো ও জেলা অফিসে বাবুল আক্তারের উপর নির্যাতন। স্ত্রী হত্যার ঘটনায় মিথ্যা স্বীকারোক্তি দেওয়ার জন্য বাবুল আক্তারের সঙ্গে নিষ্ঠুর আচরণের অভিযোগ করা হয়। আবেদনে বিবাদীদের বিরুদ্ধে পুলিশ হেফাজতে নির্যাতন এবং হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইন, ২০১৩ এর ১৫ (১) ধারা এবং সংশ্লিষ্ট আইনের ৫ (২) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।
২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে চট্টগ্রাম নগরের ও আর নিজাম রোডে ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার পথে দুর্বৃত্তদের গুলি ও ছুরিকাঘাতে খুন হন তৎকালীন পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু। ওই সময় এ ঘটনা দেশজুড়ে ব্যাপক আলোচিত হয়। ঘটনার সময় মিতুর স্বামী পুলিশ সুপার বাবুল আক্তার অবস্থান করছিলেন ঢাকায়। ঘটনার পর চট্টগ্রামে ফিরে পাঁচলাইশ থানায় অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন তিনি। জঙ্গিবিরোধী কার্যক্রমের জন্য স্ত্রীকে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে বলে মামলায় অভিযোগ করেছিলেন বাবুল আক্তার। তবে দিন যত গড়িয়েছে মামলার গতিপথও পাল্টেছে। এক পর্যায়ে সন্দেহের কেন্দ্রবিন্দুতে আসে স্বামী বাবুল আক্তারেরই নাম।
তদন্তে হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার সংশ্লিষ্টতা পাওয়ার পর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গত বছরের ১১ মে তাকে হেফাজতে নেয় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। গত ৯ জানুয়ারি বাবুলের করা মামলাতেই তাকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করেছিল পিবিআই। পরবর্তীতে আদালত কয়েকদফা শুনানি পিছিয়ে তার নিজের মামলাতেই বাবুলকে গ্রেপ্তার দেখানোর আদেশ দেন। পিবিআই তখন ২০১৬ সালের বাবুলের করা মামলায় তাকেই আসামি হিসেবে গণ্য করে।
এর আগে গত বছরের ১২ মে করা মিতুর বাবা বাবুলের শ্বশুরের মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেয়। পরবর্তীতে আদালত মিতুর বাবার মামলার সব তথ্য উপাত্ত বাবুলের করা আগের মামলায় একীভূত করে তদন্ত কাজ চালিয়ে নেওয়ার আদেশ দেন। এখন বাবুলের করা মামলার চূড়ান্ত অভিযোগপত্র আদালতে জমা দেওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছে পিবিআই।
মিতু হত্যা মামলায় স্বামী বাবুল আক্তার ছাড়াও অন্য আসামিরা হলেন— কামরুল ইসলাম মুছা, কালু, ওয়াসিম, শাহজাহান, আনোয়ার, এহতেসামুল হক ভোলা ও সাকি।
গত বছরের মে থেকে গ্রেপ্তারের পর কিছু দিন চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হলেও ওই বছরের ২৯ মে থেকে ফেনী কারাগারে আছেন বাবুল আক্তার।
সিভয়েস/এডি
- বাবুল আক্তারের চট্টগ্রাম কারাগার ভীতির নেপথ্যে...
- জজ কোর্টেও জামিন মিলেনি বাবুল আক্তারের
- বাবুল আক্তারের মামলায় তাকেই গ্রেপ্তার দেখানোর আদেশ আদালতের
- স্ত্রী হত্যা মামলায় জামিন মিলেনি বাবুল আক্তারের
- স্ত্রী হত্যায় নিজের মামলায় বাবুল আক্তারকে গ্রেপ্তার করতে আদালতে পিবিআইয়ের আবেদন
- মিতু হত্যা মামলার নথির ফটোকপিও জুডিশিয়াল হেফাজতে চান বাবুল আক্তার, আদালতের সায়
- স্ত্রী হত্যায় বাবুল আক্তারের করা মামলা পুনঃতদন্তের নির্দেশ
- পুলিশকে বাবুল আক্তারের অবিশ্বাস, মামলার নথিপত্র যাবে জুডিশিয়াল হেফাজতে
- জামিন মিলেনি বাবুল আক্তারের
- জামিন মিলেনি বাবুল আক্তারের
- বাবুল আক্তারের দুই সন্তানকে পিবিআই অফিসে হাজির করার সময় ১৫ দিন
- বাবুল আক্তারের নির্দেশেই মিতুকে খুন করেন মুছা—আদালতে স্ত্রী পান্না
- বাবুল আক্তার ফেনীতে
- কারাগারে সাধারণ বন্দির মতোই থাকছেন বাবুল আক্তার
- কোয়ারেন্টাইন ওয়ার্ডে বাবুল আক্তার, রাতে পেলেন খিচুড়ি
- খাস খামরায় গিয়ে উল্টে যান বাবুল আক্তার, দেননি স্বীকারোক্তি
- রিমান্ড শেষে আদালতে বাবুল আক্তার
- মুখে লাগাম দেওয়া বাবুল আক্তার আবারও রিমান্ডে?
- বাবুল আক্তারকে কেন হ্যান্ডকাপ লাগানো হয়নি— জানালো পিবিআই
- মুসাকে না চেনার রহস্য উন্মোচন করতেই ফাঁসলেন বাবুল আক্তার
- স্ত্রী হত্যায় পাঁচ দিনের রিমান্ডে বাবুল আক্তার
- বাবুল আক্তারের করা মামলার ফাইনাল রিপোর্ট দিল পিবিআই
- স্ত্রী মিতু হত্যায় বাদি থেকে আসামি হচ্ছেন বাবুল আক্তার
- মিতু হত্যায় বাবুল আক্তারের তিন লাখ টাকার কিলিং মিশন
- স্ত্রী মিতু হত্যা মামলায় বাবুল আক্তার পিবিআই হেফাজতে, তোলা হবে আদালতে
- স্ত্রী হত্যা মামলায় স্বামী বাবুল আক্তারকে জিজ্ঞাসাবাদ